আমরা জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিভিন্ন প্রকার রাজযোগ, অধিযোগ, গজকেশরী যোগ, শশিমঙ্গল যোগ, শশযোগ, গুরুচণ্ডাল যোগ, কালসর্পযোগ, এই রকম অনেক প্রকার যোগ সম্বন্ধে জেনেছি। এক একটি যোগ এক ভাবে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে উন্নতি এনে দেয়। কেউ আবার উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করে থাকে।
আমরা এখানে গ্রহমালিকা যোগ সম্বন্ধে আলোচনা করব। গ্রহমালিকা যোগে গ্রহগুলি যেন লগ্ন থেকে পর পর রাশিতে অবস্থান করে এবং গ্রহগুলি যেন পৃথকভাবে যেন থাকে অর্থাৎ একটা গ্রহ যেন একাই একটা রাশিতে থাকে। এক একটা রাশিতে বা ঘরে দুটো গ্রহ অবস্থান করলে তাতে ফল প্রকাশে বাধা পায়। এক বা একাধিক গ্রহ একটা রাশিতে অবস্থান করতে পারে, এতে আন্তঃগ্রহযুদ্ধ হয় ফলে কোনও গ্রহই তার মতো করে নিজের ফল প্রকাশ করতে পারে না।
নানা ধরনের গ্রহ মালিকাযোগের কথা জ্যোতিষ শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা তার মধ্যে বিশেষ কয়েকটি গ্রহমালিকা যোগ সম্বন্ধে বর্তমান পরিসরে আলোচনা করব।
পঞ্চগ্রহমালিকা যোগঃ যখন লগ্ন থেকে নয়টা গ্রহ পর পর পাঁচটা ভাবে বা ঘরে অবস্থান করে, তখন জাতক/জাতিকা ভাল রাজযোগের মতো ফল পেয়ে থাকেন। এই যোগের জন্য এরা নানাভাবে ভাগ্যবান হন।
আর একটা যোগ আছে, যাকে পাশা যোগ বলে। এটা পঞ্চগ্রহমালিকা যোগের মতোই,, তবে এর গ্রহগুলি পর পর না থেকে একটা ঘর বাদ দিয়ে থাকে।
জাতক পারিজাতে বলা আছে, মালিকাযোগ যদি লগ্ন থেকে আরম্ভ না হয়ে দ্বিতীয়ভাব থেকে আরম্ভ হয় এবং গ্রহগুলি পঞ্চগ্রহমালিকার মতোই পর পর ঘরে থাকে, তা হলে জাতক/জাতিকা প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে থাকে। এই মালিকা যদি তৃতীয় ভাব থেকে আরম্ভ হয়, তাহলে জাতক একই সঙ্গে বীর বা শক্তিমান হয় এবং প্রচুর ধনসম্পদের মালিক হয়ে থাকে।
এই গ্রহ মালিকা যোগ আবার ৪র্থ ভাবে যদি আরম্ভ হয়, তখন জাতক/জাতিকা উদার, অন্যের উপকারী, প্রচুর জায়গা-জমি ও অর্থ-সম্পদের মালিক হয়। এই যোগকে সুখমালিকযোগ বলে।
আবার এই গ্রহমালিকাযোগ যদি অষ্টম ভাব থেকে আরম্ভ হয়ে দ্বিতীয়ভাব অবধি বিন্যস্ত থাকে, তাহলে জাতক অনেক উঁচু পদে অবস্থান করেও হটাৎ করে পতন হয়, কারণ এই যোগের নাম রন্ধ্রমালিকাযোগ। ৮ম ভাবকে রন্ধ্রস্থান বা লকআপ বলে। অষ্টম ভাব মানে বাধার সৃষ্টিকারী ভাব। এর একটা অশুভত্ব সব সময়ই থাকে। এই যোগে জন্মালে জাতক ভাল বা বড় মাপের নেতা বা মন্ত্রী হতে পারেন কিন্তু তার আর্থিক অবস্থা ভাল যায় না এবং তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে।
যদি ৫ম ভাব থেকে গ্রহ মালিকা যোগ আরম্ভ হয়, জাতক বেদ বিধি অনুসারে নাম করা পণ্ডিত বা জ্ঞানী ব্যাক্তি হিসেবে বিখ্য্যাত হন এবং কীর্তিমান হিসেবে সমাজে তার নাম নাম হয়। এখানে এই যোগের নাম হয় সুতমালিকা যোগ।
৯ম ভাব থেকে এই যোগ আরম্ভ হলে এর নাম ধর্মমালিকা যোগ। এই যোগে জন্মালে জাতক/জাতিকার মধ্যে নানা গুণের সমাবেশ দেখা যায়। এরা ধর্ম পথে ভাল সাধক হয়। লোকপ্রভু ও সমাজের সাহায্যকারী নেতা হন।
১০ম ভাব থেকে এই গ্রহমালিকা যোগ আরম্ভ হলে একে কর্মমালিকা যোগ বলে, জাতক সমাজ কর্তৃক পূজিত হন তিনি কিন্তু ধর্ম কর্ম বিরহিত হয়ে থাকেন।
একাদশ স্থানে গ্রহ মালিকা যোগ হলে লাভমালিকায় যোগ হয়। তিনি সর্ব দিক থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকেন।
দ্বাদশে গ্রহ মালিকা যোগে, জাতক সর্বত্র লোকপূজ্য হয় এবং প্রচুর খরচ করতে হয়। এক কথায় এরা বহু ব্যয়শীল হয়।