যে কোনও দেব-দেবীর অরাধনা করার আগে যার পুজো করা উচিত, সেই গণেশ দেবের আগমন ঘটতে চলেছে আগামী ১৬ই ভাদ্র ১৪২৬ সন। ‘গণপতি বাপ্পা মোরিয়া’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস যখন ভরে যাবে, তখন বাড়িতে বাড়িতে আগমন ঘটবে গজাননের।
গণেশদেবকে প্রসন্ন করার মধ্যে দিয়ে নিজের মনের নানা ইচ্ছা যদি পূরণ করতে হয়, তা হলে নিম্নলিখিত মন্ত্রগুলির মধ্যে কোনও একটি যদি দেবের অরাধনা করার সময় পাঠ করা হয়, তা হলে শুধু মনের সব ইচ্ছাই পূরণ হয় না, সেই সঙ্গে আরও নানাবিধ উপকার মেলে। তাই বলি, গণেশ বন্দনায় সামিল হয়ে যদি দেবের মন জয় করতে চান, তাহলে মন্ত্রগুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়াটা জরুরি।
এখন জেনে নেওয়া যাক কী কী মন্ত্র পাঠ করার মধ্যে দিয়ে দেবের আরাধনা করলে কী রকম সুফল মিলতে পারে
১. শক্তি বিনায়ক মন্ত্র:
‘ওম হ্রিং গ্রিং হ্রিং’, শক্তি বিনায়ক মন্ত্র নামে পরিচিত এই স্তোত্রটি ১০৮ বার পাঠ করলে শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে, ছোট-বড় সব রোগ দূরে পালায়। সেই সঙ্গে গুড লাক প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। আর একবার ভাগ্য ফিরে গেলে জীবনের ছবিটা বদলে যেতে যে সময় লাগে না, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে! তবে এখানেই শেষ নয়, বেশ কিছু জ্ঞানী মানুষের মতে এই মন্ত্রটি শুধু গণেশ চতুর্থীর দিন নয়, নিয়মিত যদি পাঠ করা যায়, তা হলে কর্মক্ষেত্রে চরম সফলতা লাভের সম্ভাবনা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধির ছোঁয়া লাগতেও সময় লাগে না।
আরও পড়ুন: বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত ও গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে গণেশ চতুর্থীর নির্ঘণ্ট ও সময়সূচি
২. বক্রতুণ্ড মহাকায়া শ্লোক মন্ত্র:
জীবন পথে চলতে চলতে সামনে আসা যে কোনও বাধার পাহাড় সরে যাক, সেই সঙ্গে মিটে যাক সব সমস্যাও। এমনটা যদি চান তা হলে আগামী গণেশচতুর্থীর দিন এই বিশেষ মন্ত্রটি পাঠ করে দেবের অরাধনা করতে ভুলবেন না যেন! প্রসঙ্গত, এমনটা অনেকে বিশ্বাস করেন যে, গণেশ পুজোর দিন এই মন্ত্রটি এক মনে ১,২৫,০০০ বার পাঠ করলে জ্ঞান এবং বুদ্ধির বিকাশ ঘটতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন- গুড লাক প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে, টাকা-পয়সা সংক্রান্ত নানা ঝামেলা মিটে যায় এবং কর্মক্ষেত্রে চটজলদি পদোন্নতির সম্ভবনা বাড়ে। মন্ত্রটি হল-‘বক্রতুণ্ড মহা কায়া সূর্য কোটি সমপ্রভ নির্ভিগ্নাম কুরু মে দেবা সর্ব কার্য সমপ্রভা।’
৩. সিদ্ধি বিনায়ক মন্ত্র:
"ওম নমো সিদ্ধি বিনায়ক সর্ব কার্য কার্তারায় সর্ব বিঘ্ন প্রশমনায় সর্বরাজ্যয়া বিশয়াকর্নায়া সর্বজন সর্বস্ত্র পুরুষ আকর্ষনায় ওম সোয়াহা", এই মন্ত্রটিকেই সিদ্ধি বিনায়ক মন্ত্র নামে ডাকা হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, গণেশ পুজোর দিন এক মনে ১০৮ বার এই মন্ত্রটি পাঠ করলে দেব এতটাই প্রসন্ন হন যে সর্বশক্তিমানের আশীর্বাদে পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধির ছোঁয়া লাগতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে সামাজিক ক্ষত্রে সম্মানও বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো।
৪. গণেশ মোলা মন্ত্র:
গণেশ ঠাকুরের অরাধনা করার সময় সাধারণত যে যে মন্ত্রগুলি পাঠ করা হয়ে থাকে, সেগুলির মধ্যে সবথেকে শক্তিশালী মন্ত্র হল এটি। তাই তো হিন্দু ধর্মের উপর লেখা বেশ কিছু বইয়ে গণেশ মোলা মন্ত্রকে বীজ মন্ত্র নামেও ডাকা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গণেশ চতুর্থীর দিন দেবের পুজো শেষে এক মনে এই মন্ত্রটি পাঠ করলে গৃহে দেবের আগমন ঘটে। আর যে বাড়িতে গণেশ দেব বিরাজমান হন, সেখানে কোনও বিপদ যেমন ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না, তেমনি সারা বাড়িতে পজেটিভ শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে খারাপ শক্তির প্রভাব কমে যায়। ফলে কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও আর থাকে না। সেই সঙ্গে দেবের আশীর্বাদে শারীরিক ক্ষমতার উন্নতি ঘটতেও সময় লাগে না। মন্ত্রটি হল-‘ওম শ্রীম হ্রিম ক্লিমগ্লম গামগানাপতায়ে ভারা ভারাদ সর্বজন জন্মে ভশমান্যায় স্বাহা, তৎপুরুষায় ভিদমাহে বক্রতুণ্ড ধিমাহি তানো দান্তি প্রচোদয়াৎ, ওম শান্তি শান্তি শান্তি!’
আরও পড়ুন: গণেশ বন্দনা কী ভাবে করবেন
৫. ঋণ হার্তা মন্ত্র:
সংস্কৃতে ঋণ কথার অর্থ হল দেনা এবং হার্তা কথার অর্থ হল নিকেশ ঘটা। অর্থাৎ এই গণেশ মন্ত্রটি পাঠ করলে টাকা-পয়সা সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা মিটে যেতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি ধার-দেনার বোঝাও কমে। শুধু তাই নয়, এমনও বিশ্বাস রয়েছে যে গণেশ চতুর্থীর দিন এই মন্ত্রটি পাঠ করলে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে, তেমনি পরিবারে সুখ-শান্তি এবং সমৃদ্ধির ছোঁয়া লাগতেও সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, মন্ত্রটি হল- ‘ওঁ গনেশ ঋণং ছিন্দিং বরেণ্যেং হুং ফট্ নমঃ’।
৬. গণেশ মন্ত্র:
‘ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লীং গং গণপতয়ে বর বরদ সর্ব্বজনং মে বশ মানায় স্বাহা’ এই মন্ত্রটি পাঠ করার পরেই সাধারণত গণেশ ঠাকুরের পুজো শুরু হয়। প্রসঙ্গত, এই গণেশ মন্ত্রটি এক মনে পাঠ করলে দেব এতটাই খুশি হন যে সর্বশক্তিমানের আশীর্বাদে কর্মজীবনে চরম সফলতা লাভের পথ যেমন প্রশস্ত হয়, তেমনি যে কোনও সমস্যা মিটে যেতেও সময় লাগে না। ফলে জীবনের প্রতিটি দিন আনন্দে ভরে ওঠে।
৭. গণপতয়ে মন্ত্র:
‘ওম গণ গণপতায়ে নমঃ’, গণেশ উপনিষদে এই মন্ত্রটিকে অন্যতম শক্তিশালী গণেশ মন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এমন বিশ্বাস রয়েছে যে, গণেশ চতুর্থীর দিন এই মন্ত্রটি পাঠ করলে মনের সব ইচ্ছা পূরণ হয়। সেই সঙ্গে যে কোনও কাজে সফলতা লাভের সম্ভাবনাও যায় বেড়ে। শুধু তাই নয়, দেবের আশীর্বাদে স্ট্রেস এবং মানসিক আশান্তি যেমন দূরে পালায়, তেমনি অনেক অনেক টাকায় পকেট ভরে উঠতেও সময় লাগে না।
গণেশ পুজোর আগের নিয়ম:
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে নিতে হবে। আর খেয়াল করে স্নানের জলে অল্প করে গঙ্গা জল মিশিয়ে নিতে ভুলবেন না যেন।
আর স্নানের সময় মনে মনে মন্ত্রটি জপ করুন
মন্ত্র: ‘গঙ্গেচ যমুনেচৈব গোদাবরি সরস্বতী নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলেহস্মিন সন্নিদ্ধম কুরু’।
স্নান শেষে পরিষ্কার জামা-কাপড় পরে ঠাকুর ঘর ভাল করে পরিষ্কার করে নেবেন। তারপর ফুল-মালা দিয়ে দেবকে সাজিয়ে শুরু করবেন পুজো। তবে তার আগে দেবের সামনে মোদক, লাড্ডু এবং পাঁচ রকমের ফল নিবেদন করতে ভুলবেন না যেন!