ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা/ যমুনা দিল যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা। এই পঙতিটির মাহাত্ম্য অপরিসীম কারণ যম যেমন অমর, একই ভাবে সব বোনেরা চায় তার ভাই বা দাদা যেন দীর্ঘায়ুর অধিকারী হয়। বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হিসাবে যে উৎসব গুলি সারা বছরে নিজের জায়গায় অমলিন তার মধ্যে অবশ্যই একটি এই ভাইফোঁটা। ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় শুদ্ধাচারে তার কপালে চুয়া-চন্দনের ফোঁটা এঁকে দেয় বোন। বাম হাতের কড়ে আঙুল থাকে ভাইয়ের কপালে আর ঠোঁটে থাকে চিরন্তন সেই চার লাইনের পঙতি। যা বাঙালি গড়গড় করে অক্লেশে বলে যেতে পারে।
কে এই যম ? যম হলেন ধর্মরাজ। যমকে যমুনা (যমের বোন) ফোঁটা দিয়েছিলেন। কপালে তিলক কেটে যমের মঙ্গল কামনা করেছিলেন। এই শুভ দিনটিতে ভগিনী দ্বারা ভাইয়ের পূজা হয় ললাটে তিলক কেটে, ভাইয়ের মঙ্গল কামনায়। ছোট ভাই হলে ধান-দূর্বা দিয়ে বড় বোন আশীর্বাদ করে, দীর্ঘায়ু কামনা করে। আর বড় ভাই হলে প্রণাম করে ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ গ্রহণ করে বোন।
এই দিনটি ভাই বোনের মিলনের দিন হিসাবে পালিত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। সমগ্র বিশ্বের মধ্যে এই সম্পর্কই যে অটুট বন্ধন হিসাবে পূজ্য, সেই কথা প্রমাণিত। ভাই-বোনের সম্পর্ক যে কত মধুর তার উজ্জ্বল প্রমাণ জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা বিগ্রহ। সব বোনেরা নিজের ভাইয়ের সু-স্বাস্থ্য, অমরত্ব, দীর্ঘায়ু কামনা করে এই দিনটিতে।
বর্তমানে সব সংসার খুব ছোট, কোনও পরিবারে ভাই আছে কিন্তু বোন নেই, আবার কোথাও উল্টোটা দেখা যায়, সেই ক্ষেত্রে ভাই-বোন পাতিয়ে এই উৎসবটি পালন করা হয়।
আসুন দেখে নেওয়া যাক ভাইয়ের দীর্ঘায়ুর জন্য ভ্রাতৃ দ্বিতীয়ার দিন বোনেরা কী করতে পারেন -
• এই দিন যম, যমুনা, চিত্রগুপ্ত ও যমদূতের পূজা করলে শুভ ফল পাওয়া যায়।
• যমরাজকে পূজা করে, অর্ঘ্য দান করে চরণামৃত নিয়ে ভাইকে প্রদান করা খুব উপকারী।
• চন্দনটি (জলের বিকল্পে) শিশির দিয়ে তৈরি করলে খুব ভাল হয়।
• চন্দনের মিশ্রণটিতে অল্প কেশর মিশিয়ে ভাইয়ের কপালে তিলক দিন।