শনির যখন কোনও জাতক জাতিকার জন্ম রাশিচক্রের উপর দিয়ে পরিভ্রমণ করে তখন তাকে গোচর শনি বলে। শনি যখন জন্ম রাশির দ্বাদশ, প্রথম বা জন্ম রাশি, এবং দ্বিতীয় ভাবের উপর দিয়ে অতিক্রম করে তখন তাকে আমরা সাড়ে সাতি বলি। শনি প্রতি রাশিতে গড়ে আড়াই বছর ধরে থাকে। সাড়ে সাতি মানে সাড়ে সাত বছর ধরে চলে। এই সাড়ে সাত বছর সেই জাতক জাতিকার খুব খারাপ যায়। এই ঘটনা প্রতি ৩০ বছরে একবার করে ঘটে। এটা আমাদের অনেকেরই জানা।
শনি হছে গ্রহদের মধ্যে নৈসর্গিক ভাবে প্রথম শ্রেনীর গ্রহ যে খারাপ ফল দেয়। শনি যখন যে ভাবে থাকে সেই ভাবের ফল প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করে। গ্রহদের মধ্যে শনির গোচোর ফল বেশ জানান দিয়ে আসে।
এবার আমরা দক্ষিণ ভারতের নাদি জ্যোতিষের পর্যবেক্ষণ করা শনির গোচর ফল নিয়ে আলোচনা করব।
শনি যখন গোচরে ডিগ্রীগত ভাবে রবির উপর দিয়ে অতিক্রম করে তখন জাতক জাতিকার পিতার মৃত্যু হয় অথবা বাড়ীর বয়ঃজ্যেষ্ঠ কারও মৃত্যু হয়। চাকুরী ক্ষেত্রে প্রবল বাধা আসে। অনেক ক্ষেত্রে প্রমোশন আটকে যায়। বহু ব্যয় বা অনেকে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে। পিতার সঙ্গে মনমালিন্য হয়।
এবার দেখব গোচর শনি যখন ডিগীগত ভাবে জন্মকালীন চন্দ্রের উপর অতিক্রম করে, তখন মায়ের স্বাস্থ্য বেশ খারাপ যায়। ক্ষেত্র বিশেষে মাতা বা মাতৃস্থানীয় কারোও মৃত্যুও হয়। জায়গা-জমি থেকে ক্ষতি বা সে রকম কোনও লাভ হয় না। বিনা কারনে মায়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্ঠি হয়। কেউ কেউ মানসিক অবসাদেও ভোগেন।
গোচর শনি যখন ডিগ্রীগত ভাবে জন্মকালীন মঙ্গলের উপর দিয়ে যায়, তখন জাতকজাতিকার ভ্রাতা বা ভগ্নীর স্বাস্থ্যও খারাপ যায়। জায়গা-জমি নিয়ে মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ে। জাতক জাতিকা রক্তদূষিত হয় এমন কোনও রোগে ভুগতে থাকে। ব্যবসায় ভাঁটা চলে। জাতক ছুরি, চাকু বা তরবারির দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয়। শরীরে অস্ত্রোপচার হয়।
গোচর শনি যখন বুধের উপর দিয়ে অতিক্রম করে জাতক জাতিকার মামা বা মামির কারও স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। এই সময় আর্থিক অনটনে জর্জরিত করে, ব্যবসা-বানিজ্য ভয়ঙ্কর মন্দা চলে।
আবার গোচর শনি যখন ডিগ্রীগত ভাবে বৃহস্পতি উপর দিয়ে যায় তখন জাতক জাতিকার পুত্র বা কন্যার স্বাস্থ্য ও কোনও বিষয়ের সাফল্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়, তখন দীক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপারে তৎপর হতে দেখা যায়। ধর্ম পথে সংস্কার হয় বা কেই গৃহ থেকে সন্ন্যাসে দীক্ষা নেয়। এক গুরু ছেড়ে আর এক গুরু ধরে।
উপরের মত ঠিক একই ভাবে গোচরে শনি যদি জন্মকালীন শুক্রের উপর দিয়ে অতিক্রম করে তখন অনেক সময় পতি বা পত্নীর বিয়োগ ঘটে বা কঠিন ভাবে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। এই সময় বিবাহ-বিছেদ সংক্রান্ত মামলা চলে, শ্বশুরবাড়ির সমস্যায় জাতককে বিব্রত থাকতে হয়।
গোচর শনি যখন জন্মকালীন শনির উপর দিয়ে ডিগীগত ভাবে অতিক্রম করে, তখন জাতক জাতিকা নিজে রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেক সময় তাদের মৃত্যুতুল্য কষ্টভোগ করতে হয়। এই সময় সব ধরণের আর্থিক কষ্ট ভোগ করতে হয়। মনে একটা অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
গোচরে শনি জন্মকালীন রাহু উপর দিয়ে অতিক্রম করলে, জাতক জাতিকার পরিবারে কোনও নক্কারজনক ঘটনা জনসাধরণের সামনে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। সরকারী কোনও কোপ এসে পড়ে। বন্ধু বা নিকট আত্মীয়কূলে কেউ মারা যায়। এই সময়ে সাপে কামরায়, বিষ প্রয়োগ, পরিবারের কোনও ব্যক্তির অপঘাতে মৃত্যু হয়। জাতকের পত্নী পরপুরুষের সঙ্গে পালিয়ে যায় ।
গোচরে শনি যখন জন্মকালীন কেতুর উপর ডিগ্রীগত ভাবে আসে, তখন জাতক জাতিকা পারিবারিক আত্মকলহে জড়িয়ে পড়ে। জায়গা-জমি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ কোটকাছারি অবধি পৌঁছায়। বাড়িতে কেউ কিডনী সংক্রান্ত কোনও রোগে ভুগতে থাকে, ডায়ালিসিস নিতে হয়।