স্ট্রোকের লক্ষণ বুঝলে এক মুহূর্তও দেরি করা উচিত নয়। প্রতীকী ছবি।
ব্রেন স্ট্রোকের পরের চার ঘণ্টা সময়ই সবচেয়ে দামি। এই সময়ের মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে বাঁচানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বাড়িতে বা পরিবারে কারও স্ট্রোক হলে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করা চলবে না। হয়তো দেখলেন দিব্যি সুস্থ মানুষ, আচমকাই তাঁর হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, মাথা গড়িয়ে যাচ্ছে এক দিকে, মুখ বেঁকে যাচ্ছে। এই সব লক্ষণ দেখলেই সাবধান হতে হবে।
ধরুন, আপনি বাড়িতে একা। আপনারই কোনও আপনজনের এমন অবস্থা হল। তখন আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে ঠিক কী কী করা উচিত, সেটা জেনে রাখা দরকার। সিদ্ধান্তের সামান্য ভুল বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
আগে লক্ষণ চিনুন
১) একদম সুস্থ মানুষ আচমকা শরীরের ব্যালান্স হারিয়ে ফেলবেন, হাঁটতে গিয়ে পড়ে যাবেন।
২) হাত-পায়ের সাড় চলে যাবে। শরীরের কোনও এক দিক হঠাৎ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।
৩) ‘ফেশিয়াল প্যারালাইসিস’ স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ। মুখের এক দিক বেঁকে যাবে, জিভ আড়ষ্ট হয়ে যাবে, কথা জড়িয়ে যাবে।
৪) প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে থাকবে না
৫) চিন্তাভাবনা গুলিয়ে যাবে, দৃষ্টি ঝাপসা হতে থাকবে।
আপনি কী কী করবেন?
স্ট্রোক হওয়ার পর সাড়ে চার ঘণ্টা হল ‘গোল্ডেন আওয়ার’। অর্থাৎ, যে সময়ে হাসপাতালে পৌঁছলে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। স্ট্রোকের লক্ষণ ধরা পড়া থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অবধি যা যা করণীয়—
স্ট্রোকের পরের সাড়ে চার ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছবি: সংগৃহীত।
১) রোগীর জ্ঞান থাকলে এক পাশ করে শুইয়ে দিন। শরীরের যে অংশটা অবশ হয়ে গিয়েছে বুঝতে পারবেন, সেই অংশটা যেন উপরে থাকে।
২) রোগীর মাথা একটি বা দু’টি বালিশে রেখে উঁচু করে রাখতে হবে। যদি শরীরের এক দিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়, তা হলে সেই দিকটা ধরে থাকতে হবে।
৩) স্ট্রোক হয়েছে বুঝলে ভুলেও রোগীকে কিছু খাওয়াতে যাবেন না, জলও না।
৪) হালকা জামাকাপড় পরান, যাতে শ্বাস নিতে সমস্যা না হয়।
৫) রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং নাড়ির গতি পরীক্ষা করতে হবে। যদি নাড়ির গতি কমতে থাকে, তা হলে সিপিআর দিতে হবে। কী ভাবে সিপিআর দিতে হয়, তা জানা না থাকলে কোনও বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন।
৬) যদি রক্তনালি বন্ধ হয়ে গিয়ে স্ট্রোক হয়, যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় ইস্কিমিক স্ট্রোক, তা হলে প্রথম সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে শিরার মধ্যে একটি ওষুধ দিতে হয়। একে বলে থ্রম্বোলাইসিস।
৭) হার্টে রক্ত চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে তবু কিছু ক্ষণ লড়াইয়ের সুযোগ থাকে। কিন্তু মস্তিষ্ক বেশি ক্ষণ বাঁচতে পারে না। ইস্কিমিক স্ট্রোক হলে প্রতি সেকেন্ডে মস্তিষ্কের ৩২ হাজার কোষের মৃত্যু হতে থাকে। ফলে সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৮) চিকিৎসা শুরুর আগে রক্তের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সিটি স্ক্যান করিয়ে নেওয়া জরুরি। রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলে সেটাও কমাতে হবে। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে রোগীকে যেন ফেলে রাখা না হয়, সেটা দেখতে হবে।