ফিশচুলা হলে পায়ুপথের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসে পুঁজ ও রক্ত। ছবি: শাটারস্টক।
দিনের শুরুটা হওয়া উচিত খুশি মনেই। কিন্তু এ দেশে প্রায় এক কোটি বা তারও বেশি মানুষের কাছে সকালটা কার্যত বিভীষিকা। কারণ প্রাতঃকৃত্য সারার ভয়। কেউ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় কষ্ট পাচ্ছেন, কেউ আবার অর্শের জ্বালায় নাজেহাল। এই সংক্রান্ত আরও একটি রোগ মানুষের চিন্তা বাড়াচ্ছে। তা হল ফিশচুলা।
মলদ্বারের বিশেষ ধরনের সংক্রমণের ফলে ফিশচুলা হয়। মলদ্বারের ভিতরে অনেকগুলি গ্রন্থি রয়েছে। গ্রন্থিগুলিতে সংক্রমণের কারণে ফোড়া হয়, যাকে আমরা ফিশচুলা বলি। ফিশচুলা নলের মতো গঠন তৈরি করে পায়ুপথে। এর একটি মুখ রেকটামের ভিতরের দিকে থাকে আর একটি মুখ থাকে বাইরে পায়ুদ্বারের ঠিক পাশে। অনেক সময় দেখা যায়, এ সব ফোড়া ফেটে গিয়ে মলদ্বারের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পায়ুপথের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসে পুঁজ ও রক্ত। এ সময়ে প্রচুর ব্যথা হয়। এই ব্যথার তীব্রতা অনেক সময়ে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে দাঁড়ায়। মলদ্বারের ক্যানসার, বৃহদান্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ, যক্ষ্মা ও যৌনরোগের কারণেও ফিশচুলা হতে পারে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন?
১) ঘন ঘন মলদ্বারে ফোড়া হওয়া, মলদ্বারের চারপাশে ব্যথা এবং ফোলা ভাব, মলদ্বারের চারপাশে একটি মুখ থেকে রক্তাক্ত বা দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বেরোলে সতর্ক হন।
২) মলত্যাগের সময়ে মলদ্বারের চারপাশে জ্বালাও হতে পারে ফিশচুলার লক্ষণ।
৩) মলত্যাগের সময়ে তীব্র ব্যথা।
৪) মলের সঙ্গে রক্তপাত। এই রোগে আক্রান্ত হলে ঘন ঘন জ্বরও হয়।
এই রোগে আক্রান্ত হলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। অস্ত্রোপচারের পরেও এই রোগ ফিরে আসতে পারে। তাই জীবনযাপনে আনতে হবে কিছু বদল।
সারা দিন বসে বসে কাজ না করে একটু সক্রিয় থাকতে হবে। ছবি: শাটারস্টক
১) প্রথমেই ফাইবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, ফাইবার ঠিকমতো খেলে রোজ কোষ্ঠ পরিষ্কারও হবে সহজে।
২) দিনে তিন-চার লিটার জল তো খেতেই হবে। তার সঙ্গে ফলও খেতে হবে। ফলের রস না করে ফল চিবিয়ে খাওয়াই ভাল। পেয়ারা, আপেল, নাসপাতির মতো ফল খোসা-সহ চিবিয়ে খেলে ভাল। আর গ্লুটেনফ্রি খাবারও উপকারী।
৩) টক দইও রাখতে হবে রোজকার পাতে। টক দই কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখার সহায়ক।
৪) খাদ্যতালিকা থেকে মাংসের পরিমাণ কমাতে হবে। মাংস কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ। বেশি মাংস খাওয়া হয়ে গেলে পরিমাণ মতো জল ও ফাইবারও খেতে হবে। আনাজপাতি রোজকার খাবারে রাখতেই হবে।
৫) সারা দিন বসে বসে কাজ না করে একটু সক্রিয় থাকতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলেও কিন্তু কোষ্ঠ পরিষ্কার থাকে। তাই রোজকার কাজের মাঝে একটু হাঁটাহাঁটি, দৌড়নো ও ব্যায়াম রাখতে হবে।