ওজন কমাতে কী ভাবে কাজ করবে ৪-১-১ পদ্ধতি? ছবি:ফ্রিপিক।
শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেই নয়, রোগ-ব্যাধি দূর করতেও ওজনে রাশ টানা দরকার, বলেন পুষ্টিবিদ থেকে চিকিৎসকেরা। কারও ওজন তাঁর দৈহিক উচ্চতা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। তবে সেই ওজন অনেকটা বেড়ে গেলেই বিপত্তি!
ইদানীং শরীর সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে। কেউ সুস্থ থাকার জন্য, কেউ আবার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই বশে রাখতে চাইছেন ওজন। কী ভাবে ওজন কমানো যায়, তা নিয়ে চলেছে নানা ধরনের ভাবনাচিন্তা, সমীক্ষা। তাতেই উঠে আসছে নানা পন্থা। ওজন কমানোর এমনই এক কৌশল ৪-১-১। এটি হল ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস এবং ক্যালোরিকে যথাযথ ভাবে কাজে লাগানোর পদ্ধতি।
বিষয়টি কী?
শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ— সমস্ত পুষ্টিগুণেরই প্রয়োজন। ওজন কমাতে হলে, এই সমস্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে মাপ বুঝে। প্রতিদিন যে কোনও মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরির দরকার হয়। ক্যালোরি আসে খাবার থেকে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে দেখতে হবে, শরীরে যাতে ক্যালোরি না জমে। ওজন কমাতে গেলে, ক্যালোরির ঘাটতি তৈরি করতে হবে।
৪-১-১ পদ্ধতি বলছে, খাওয়ার সময় ৪ ভাগ প্রোটিন, ১ ভাগ কার্বোহাইড্রেট এবং ১ ভাগ স্বাস্থ্যকর ফ্যাট জাতীয় খাবার খেতে। প্রোটিন পেশি গঠনে, ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। কার্বোহাইড্রেট শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস। নিয়ন্ত্রিত কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখার পাশাপাশি মেদ গলাতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের ভূমিকাও অনেক। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখা, হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা এবং শরীরের প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের জোগান দেয় স্বাস্থ্যকর ফ্যাট।
পুষ্টিবিদ পায়েল কোঠারি বলছেন, ‘‘যাঁরা নতুন ডায়েট করছেন বা ওজন কমাতে চাইছেন, তাঁদের জন্য এই পদ্ধতি ভাল।’’
৪-১-১ এর অন্য অর্থও আছে?
এই পদ্ধতি বলছে চার দিন কড়া ডায়েট মানতে হবে। এক দিন খাবারের তালিকায় থাকবে একটু বেশি পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট। আর একটি দিন থাকবে দু’রকম ডায়েটের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য।
৪ দিন: চার দিনের ডায়েটের লক্ষ্যই হবে মেদ গলানো। পাতে রাখতে হবে কম ক্যালোরি এবং কম কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার। তবে প্রোটিনে নজর দেওয়া দরকার। খেতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার। মাছ, মাংস, ডিম, ডাল জাতীয় খাবার রাখতে হবে তালিকায়। প্রোটিন পেট ভরাতে এবং মেদ ঝরাতেও কাজ করবে। খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে স্বল্প পরিমাণে ‘কমপ্লেক্স কার্বোইাইড্রেট’। বাদ দিতে হবে শর্করা জাতীয় খাবার, চিনি। একই সঙ্গে খাবারের মধ্যে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকাও জরুরি।
১ দিন খাওয়ার জন্য: এক দিন থাকবে সব কিছু খাওয়ার জন্য। চার দিন অল্প পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পর এই দিনে সচেতন ভাবেই কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। প্রোটিন বেশি এবং স্বল্প পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেলে ওজন কমবে ঠিকই, তবে শরীরে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বিপাকহার ঠিক রাখতে, হজমক্ষমতা বৃদ্ধিতে, কাজকর্মের জন্য শক্তি জোগাতে কার্বোহাইড্রেটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। শরীর যাতে কার্বোইড্রেটের পরিমাণ ঠিক করে নিতে পারে, সে কারণেই এই নিয়ম।
১ দিন সামঞ্জস্য রক্ষায়: ৪ দিন কম কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পর হঠাৎ করে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরের পক্ষে তা মানিয়ে নেওয়া কঠিন হতে পারে। সে কারণে মাঝের দিনটি থাকবে সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য। এই দিন কার্বোহাইড্রেট এবং খাবারে ক্যালোরির পরিমাণ থাকবে মাঝামাঝি।