কনজাঙ্কটিভাইটিস। ছবি: সংগৃহীত
বর্ষাকালে চোখের যে সমস্যাগুলি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম কনজাঙ্কটিভাইটিস। চলতি ভাষায় একে জয় বাংলাও বলা হয়। জীবাণুর আক্রমণে চোখের ‘কোনজাঙ্কটিভা’ নামক আচ্ছাদনে যে প্রদাহ দেখা দেয়, তাকেই কনজাঙ্কটিভাইটিস বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটি তাচ্ছিল্য করেন সাধারণ মানুষ। আর তাতেই আরও বেড়ে যায় সমস্যা।
চোখের এই রোগ নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ‘রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’-র অধিকর্তা অধ্যাপক অসীমকুমার ঘোষের সঙ্গে। চিকিৎসক বলেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রথমে এক চোখে সমস্যা শুরু হয়। পরে অন্য চোখকেও আক্রান্ত করে। প্রাথমিক ভাবে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে শুরু হয়। পরে আক্রমণ করে ব্যাক্টেরিয়াও।’’
কী কী লক্ষণ দেখে চেনা যায় এই রোগ?
বেশ কিছু লক্ষণের কথা বলেন চিকিৎসক। চোখের নীচের অংশ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে ব্যথা বা খচখচ করা, জল পড়া, চোখ জ্বালা করা ও চুলকানি, আলোয় কষ্ট হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা গেলেই অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলছেন তিনি। কখনও কখনও চোখের লোম আঠার মতো জুড়ে যাওয়া বা চোখের নীচে ময়লার আস্তরণ পড়তেও দেখা যায় এই রোগে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
অসীমবাবু জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ এই রোগটিকে হাল্কা ভাবে নেন। কিন্তু ঠিক মতো চিকিৎসা না হলে এই রোগ দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। ক্ষতি হতে পারে কর্নিয়ারও। অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করার দরকার হতে পারে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি তিনি জানান, কনজাঙ্কটিভাইটিস ছাড়াও অন্য কয়েকটি রোগে একই রকম উপসর্গ দেখা যায়। তাই নিজেরা চিকিৎসার চেষ্টা না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
কতটা ছোঁয়াচে কনজাঙ্কটিভাইটিস?
চিকিৎসক জানান, অত্যন্ত ছোঁয়াচে এই রোগ। রোগী চোখে হাত দেওয়ার পর সেই হাত অন্য কোথাও লাগলে সেখানে লেগে যায় জীবাণু। এর পর যদি কোনও সুস্থ ব্যক্তি ওই স্থানে হাত দেন ও সেই হাত কোনও ক্রমে চোখে লাগে, তবে আক্রান্ত হতে পারেন সুস্থ ব্যক্তি। এমনকি, একই সুইমিং পুলে সাঁতার কাটলেও ছড়াতে পারে রোগ।
চোখে জল দেওয়া যাবে?
হাত ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার জল দিয়ে চোখ ধুলে আরাম মিলতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সতর্কবার্তা, ‘‘অনেক সময়ে সংক্রমণ কমাতে বিভিন্ন ধরনের চোখের ড্রপ দেন চিকিৎসকরা। বারবার চোখে জল দিলে ধুয়ে যেতে পারে সেই ওষুধ। তাই চোখে জল দেবেন কি না তা জেনে নিতে হবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের থেকেই।’’
শিশুদের কী করণীয়?
শিশুদের পক্ষে নিয়মকানুন মেনে চলা যে শক্ত তা বলে দিতে হয় না। পাশাপাশি, শিশুরা যেহেতু একই সঙ্গে খেলাধুলো করতে ভালবাসে, তাই তাদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে রোগটি। চিকিৎসকের পরামর্শ এই রোগ দেখা দিলে সপ্তাহখানেক স্কুল এড়িয়ে চলাই ভাল।
চোখের প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে?
বহু মানুষকেই পেশার স্বার্থে চোখে বিভিন্ন রকমের প্রসাধনী মাখতে হয়। কিন্তু নিম্নমানের প্রসাধনী বাড়িয়ে দিতে পারে এই সমস্যা, সতর্ক করেন চিকিৎসক। যদি নিতান্তই পরতে হয়, তবে কাজ থেকে ফিরে অবিলম্বে পরিষ্কার জল কিংবা চোখের বিশেষ ধরনের জীবাণুনাশক তরল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে চোখ।