মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২৪ ঘণ্টা মুখ চলছে যাঁদের, মনে তাঁদের বাসা বেঁধেছে অন্য অসুখ। ছবি: শাটারস্টক।
মিষ্টির দোকানে সারি সারি সাজানো সন্দেশ, রসগোল্লা হোক বা ভেটকি ফ্রাই দেখলেই খিদে পায়। ২৪ ঘণ্টাই মুখ চলছে যাঁদের, শরীর তাঁদের ছেড়ে কথা বলবে না। সে কথা তাঁরাও বিলক্ষণ জানেন। তার পরেও খান, খেয়ে পরিতৃপ্ত হন। কিন্তু কারও কারও কেন সারা ক্ষণ বেশি খিদে পায়?
কেউ বলেন চোখের খিদে, কেউ বলেন তাঁরা নাকি খাদ্যরসিক। আসল কারণটা কিন্তু এ সব কিছুই নয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২৪ ঘণ্টা মুখ চলছে যাঁদের, মনে তাঁদের বাসা বেঁধেছে অন্য অসুখ। তার পোশাকি নাম ‘রিওয়ার্ড ডেফিশিয়েন্সি সিন্ড্রোম’ বা ‘আরডিএস’। আমরা যখনই কোনও ভাল খাবার খাই, আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামে এক ধরনের ‘সুখী’ হরমোন ক্ষরিত হয়। শুধু খাওয়া নয়, যে কোনও কাজ যা মনকে তৃপ্তি দেয়, তা এই হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে। যখন কেউ পুষ্টির প্রয়োজন বা খিদে মেটানোর পরেও খেয়ে যান, তখন বুঝতে হবে এর মাধ্যমে তিনি মানসিক তৃপ্তি পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
কেবল হরমোনের সমস্যাই নয়, আরও নানা কারণের জন্য আমরা সারা ক্ষণ খাই খাই করি। আর কী কী কারণে এমনটা হয়?
১) শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি: খিদে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শরীরে পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রোটিন থাকা জরুরি। প্রোটিনের খিদে কমানোর ক্ষমতা থাকে। ডায়েটে পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রোটিন থাকলে আপনার মনে কম খাওয়ার ইচ্ছা তৈরি হয়। আপনার পেট ভরা থাকবে, তাই শরীরে কম ক্যালোরি যাবে। এই পন্থায় ওজনও থাকে নিয়ন্ত্রণে।
২) ঘুমের ঘাটতি হচ্ছে: সুস্বাস্থ্যের জন্য দিনে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টার ঘুমের প্রয়োজন। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও ক্রনিক অসুখের হাত থেকে রেহাই পেতে পর্যাপ্ত ঘুমের ভীষণ প্রয়োজন। এর পাশাপাশি খিদে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও ঘুমের প্রয়োজন। ঘুমোনোর ফলে মস্তিষ্কে ঘ্রেলিন হরমোনের ক্ষরণ হয়। এই হরমোন খিদে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
শরীরে জলের ভারসাম্য ঠিক থাকলে খিদেও কম পায়। ছবি: নিজস্ব চিত্র।
৩) অত্যধিক হারে ‘রিফাইন্ড কার্বহাইড্রেট’ খাচ্ছেন: আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কি পাস্তা, পাউরুটি, সোডা, কেক-পেস্ট্রি বেশি থাকে? এ সবই প্রক্রিয়াজাত খাবারের উৎস। এতে ফাইবারের মাত্রা অনেক কম। এই প্রকার খাবার খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায় আর আপনার বেশি খিদে পায়। শরীরে বেশি মাত্রায় ক্যালোরি যায় এই সব খাবার খেলে।
৪) জল কম খাচ্ছেন: শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা বাড়াতে জল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য জল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই হজম ক্ষমতা বাড়াতেও বেশি মাত্রায় জল খাওয়াতে হবে। শরীরে জলের ভারসাম্য ঠিক থাকলে খিদেও কম পায়। খাওয়ার আগে বেশি করে জল খেয়ে নিলে তাই খিদে কমে যায়।
৫) মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করছেন: মদ খেলে বেশি খিদে পায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বেশি মাত্রায় মদ খেলে পেকটিন হরমোনের ক্ষরণ বেশি হয়। এই হরমোনও খিদে বাড়িয়ে দেয়।