ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করা ছাড়াও জরায়ুমুখ ক্যানসারের আর একটি প্রধান কারণ অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক। ছবি: শাটারস্টক।
দেশ জুড়ে মহিলাদের মধ্যে যত ধরনের ক্যানসার দেখা যায়, তার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে সারভাইকাল ক্যানসার বা জরায়ুমুখ ক্যানসার রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। প্রতি বছর ভারতে গড়ে এক লক্ষেরও বেশি নারী এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন।
হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)-এর হানাতে এই মারণরোগ বাসা বাঁধে শরীরে। তবে এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করা ছাড়াও জরায়ুমুখ ক্যানসারের আর একটি প্রধান কারণ অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক। এ ছাড়াও দুর্বল প্রতিরোধ শক্তি, ধূমপান, একাধিক বার প্রস্রাব, একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক— এ সব কারণেও জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ২০ বছরের কম বয়সিদের এই রোগ সাধারণত হয় না। ৩৮ থেকে ৪২ বছর বয়সিদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি বলেই দেখেছেন চিকিৎসকরা। বয়স ৬০ পেরোলেও এটি হতে পারে, তবে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স ১০ পেরোলেই এই রোগ প্রতিহত করার টিকা নেওয়া যায়। এই অসুখ গোপন না করে বরং ধরা পড়ার পরেই উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। নিয়ম মেনে চিকিৎসা করালে যেমন জরায়ুমুখ ক্যানসার সেরেও যায়, তেমনই দেরি করলে বা রোগ চেপে রাখলে তা প্রাণও কাড়ে। এই ধরনের ক্যানসারের বেশ কিছু লক্ষণ দেখেও এ নিয়ে সচেতন হওয়া যায়। প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে এই ক্যানসারের নিরাময় সম্ভব।
কোন কোন লক্ষ দেখলে সতর্ক হবেন?
১) বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগটি ধরে গেলে ঋতুচক্রের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয়। অন্য সময়ে সাদা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাবের ক্ষরণ হতে পারে।
২) যৌনমিলনের সময়ে প্রবল যন্ত্রণা। যৌনমিলনের মুহূর্তের পর রক্তপাত হতে পারে।
৩) ঋতুবন্ধের পর রক্তপাত হয়।
৪) তলপেট, কোমরে ব্যথা হয়।
৫) হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, প্রস্রাবের সময়ে জ্বালাভাব কিংবা ব্যথা অনুভব হওয়াও এই রোগের লক্ষণ হতে পারে।
১৮-১৯ বছরের আগে যৌন সম্পর্কে না জড়ানোই শ্রেয়। ছবি: শাটারস্টক
কী ভাবে জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব?
১) বছরে দু’বার প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা করাতে হবে। পলিসিস্টিক ওভারি, বন্ধ্যাত্ব এ সব থাকলে সচেতন হোন। গর্ভনিরোধক ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২) ১৮-১৯ বছরের আগে যৌন সম্পর্কে না জড়ানো।
৩) সঙ্গীর একাধিক যৌনসঙ্গী আছে কি না বা সঙ্গী কোনও প্রকার যৌনরোগে আক্রান্ত কি না, জানতে হবে তা-ও।
৪) ঘন ঘন যৌন সঙ্গী বদলাবেন না, সুরক্ষিত যৌনজীবনে অভ্যস্ত হোন, মিলনের সময়ে কন্ডোম ব্যবহার করুন।
৫) ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে একেবারেই। মদ্যপানও কম করাই শ্রেয়। সুষম আহার, ভিটামিন এ, সি সমৃদ্ধ ফল, শাকসব্জি খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত, সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে জোর দিতে হবে।
৬) প্রথম সন্তান খুব তাড়াতাড়ি না নেওয়াই ভাল।
৭) এ ছাড়া গার্ডাসিল নামক টিকার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। তবে যৌন সংসর্গ শুরুর আগেই নারীদের এই টিকা নিয়ে নেওয়া বাঞ্চনীয়।