বয়স্কদের সোডিয়াম-পটাসিয়াম টেস্ট অবশ্যই করিয়ে রাখবেন। ছবি: সংগৃহীত।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কমে আসে। কমতে থাকে শ্বেতকণিকার সংখ্যা। ফলে সহজেই সংক্রমণজনিত রোগ বাসা বাঁধতে পারে বয়স্কদের শরীরে।
ঋতুবদলের সময়টিতে এমনিতেই বিভিন্ন রকম অসুখবিসুখ লেগেই থাকে। তা ছাড়া যাঁদের ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের সমস্যা আগে থেকেই আছে, তাঁদের ভয় আরও বেশি। সোডিয়াম বা পটাশিয়ামের যে কোনও একটি বা একসঙ্গে দু’টির অত্যধিক অসামঞ্জস্য হলে জীবনহানির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
শরীরের এই সব ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ কিন্তু বিভিন্ন হয়। পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের পরিমাণ নানা কারণে কমবেশি হতে পারে। তাই এর ভারসাম্য বজায় আছে কিনা, তা পরীক্ষা করিয়ে রাখা ভীষণ জরুরি।
সোডিয়াম-পটাশিয়াম কমে যায় কী ভাবে?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম দু’টিই খুব গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রোলাইট। এরা যেমন শরীরে কোষের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, তেমনই মস্তিষ্কে কোষের কার্যক্ষমতাও নির্ভর করে এই সোডিয়াম–পটাশিয়ামের উপর।
ডায়রিয়া বা অত্যধিক বমি হলে রক্তে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মাত্রা কমতে পারে। অত্যধিক ঘামের ফলে শরীর থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে গেলে লবণের বা সোডিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে। ডায়াবিটিস বা কিডনির অসুখ থেকে বেশি বা কম মাত্রায় মূত্র হলে কিংবা খাদ্যে লবণের মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বা কম হলেও ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
অনেকেই বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ বা রক্তচাপ কমানোর ওষুধ খান। তাতেও সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে গেলেই হজমশক্তির সমস্যা, মাথা ধরা, বমি বমি ভাব, প্রচণ্ড দুর্বলতা দেখা দেয়। পেশিতে টান, পেশির অসাড়তা, খিঁচুনিও হতে পারে। পটাশিয়ামের অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম ও খাওয়ার পরেও ক্লান্তি অনুভূত হলে বুঝতে হবে, পটাশিয়ামের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকলে শরীরে ইনসুলিন কম উৎপাদিত হয় এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে। দীর্ঘ দিন ধরে পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হতে থাকলে পক্ষাঘাত, হৃদরোগও দেখা দিতে পারে।
শরীরে সোডিয়াম–পটাশিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা কত?
শরীরে পটাশিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা ৩.৫–৫.১ মিলিগ্রাম/ডিএল এবং সোডিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা ১৩৫–১৪৫ মিলিগ্রাম/ডিএল। এর কম বা বেশি হলেই বিভিন্ন রকম অসুখবিসুখ দেখা দিতে থাকে।
চিকিৎসকেদের পরামর্শ, শরীরে জল ও নুনের মাত্রা যাতে ঠিক থাকে, সে দিকে নজর দিন। সারা দিনে কতটা জল খাচ্ছেন, তার উপরেই নির্ভর করে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ঠিক মাত্রা।
যদি ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করেন, তা হলে পরিমাণ মতো জলও খাওয়া উচিত। ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন ইলেকট্রোলাইটস সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। যেমন কলা, আমন্ড, ডাবের জল, সয়াবিন, ফল, সবুজ শাকসব্জি, মাছ, মাংস পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। সমস্যা জটিল হলে শিরার মাধ্যমে স্যালাইন বা অন্য কোনও ধরনের ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ তরল প্রয়োগ করা হয়।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ঘাটতি হচ্ছে কিনা বা হলে কী ধরনের চিকিৎসা জরুরি, কী কী খেতে হবে, তা জানতে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।