ধোঁয়া আর কুয়াশার ওড়না নিয়ে শীত দেখা দিলেই ত্বকের সমস্যা বেড়ে যায়। উত্তুরে হাওয়া, হিমের পরশ, ধুলো আর শুষ্কতা সবই চামড়ার আর্দ্রতা চুরি করে নেয়। ফলে এ সময়ে একটু অবহেলা করলেই ত্বক ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্য দিকে, অনেক পুরুষ আজও ত্বকচর্চা নিয়ে উদাসীন। শীতে কিন্তু ত্বকের বিশেষ প্রয়োজন পূরণ করতে গড়িমসি করার সুযোগ নেই। এখন বিপণিগুলিতে পুরুষদের স্কিন কেয়ার রেঞ্জের সম্ভার ঈর্ষণীয়। যাঁরা সেগুলিতে অভ্যস্ত এবং যাঁরা এখনও পুরুষের ত্বকচর্চা নিয়ে তেমন ওয়াকিবহাল নন— সকলের জন্যই রইল শীতে ত্বককে সুরক্ষিত রাখার উপায়।
কেমন হবে রুটিন?
এ সময়ে ত্বককে যথেষ্ট পরিমাণে ময়শ্চারাইজ়ড রাখাই লক্ষ্য। তা হলেই হারানো আর্দ্রতাকে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, আবার শীতের রুক্ষতা থেকে ত্বককে রক্ষা করার বর্মেরও ব্যবস্থা রাখা যায়। রূপটান শিল্পী অভিজিৎ চন্দ বললেন, “এমনিতে ছেলেদের আর মেয়েদের ত্বকের মধ্যে খুব কিছু ফারাক নেই। মুখে রোমের আধিক্যের জন্য ছেলেদের ত্বক একটু রুক্ষ। এই দিকে নজর রেখেই ছেলেদের স্কিনকেয়ার প্রডাক্টগুলি তৈরি হয়। আর ছেলেরা রূপচর্চা করে না, এই ধারণাটাও অতীত।” সমাজমাধ্যমের দৌলতে পুরুষরা এখন চেহারা নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। তবে কোনও ত্বক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে, নিজের ত্বকের প্রকৃতি (স্বাভাবিক, তৈলাক্ত, সংবেদনশীল) জেনে তবেই প্রডাক্ট বাছুন। ওষুধ কোম্পানিগুলির স্কিন কেয়ার রেঞ্জ বেশি নিরাপদ ও ফলপ্রসূ।
যত্নের রুটিনও মোটামুটি মেয়েদের মতোই হবে। অভিজিৎ বললেন, “প্রাথমিক যত্নটুকুর জন্য সকালে আর রাতে পাঁচ মিনিট করে বরাদ্দ রাখলেই যথেষ্ট।” কিছু সুঅভ্যাস গড়ে তুলুন। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ও বাইরে থেকে ফিরে এসে সাবানের বদলে হাইড্রেটিং ক্লেনজ়ার দিয়ে মুখ ধোয়া, রোদে বেরোনোর আগে সানস্ক্রিন লাগানো, ভিটামিন-ই দেওয়া তেল মাসাজ, সপ্তাহে দু’বার স্ক্রাব করে মৃত কোষ তুলে ফেলা দরকার। এতে ত্বক উজ্জ্বল, পরিষ্কার থাকবে। চট করে বয়সের দাগ, ভাঁজ পড়বে না। অনেক ছেলেই বলেন, শীতে ত্বকের জ্বালাভাব বাড়ে, মুখটা লাল দেখায়। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, সেরামাইড বা ওটমিল যুক্ত ময়শ্চারাইজ়ার লাগালে উপশম হবে। অ্যালকোহল-যুক্ত প্রডাক্ট এড়িয়ে চলুন। এ ধরনের প্রডাক্ট ত্বকের জলীয় ভাব শুষে নেয়। ত্বক জ্বালা করে, ছাল ওঠে। সমস্যা এড়াতে ত্বক ধোয়ার পর টোনার ব্যবহার করে প্রয়োজন অনুযায়ী একটা বা দুটো সেরাম লাগান। ৩০ সেকেন্ড পরে ভাল করে ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে নেবেন।
স্নানের জল খুব গরম হলেও ত্বকের সমস্যা দেখা দেবে। প্রতিদিন ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করুন। ঠোঁটের বিশেষ যত্ন নেবেন। ঘরের বাইরে এসপিএফ যুক্ত ও ভিতরে ভিটামিন সমৃদ্ধ লিপবাম ব্যবহার করুন।
শেভিং না হালকা দাড়ি?
শীতের শেভিং রুটিনেও একটু সতর্কতা প্রয়োজন। প্রি-শেভ অয়েল বা ক্রিম লাগিয়ে তবে উন্নত মানের শেভিং জেল দিয়ে আলতো স্ট্রোকের মাধ্যমে দাড়ি কাটুন। বেশি চাপ বা ঘষাঘষি করবেন না। রেজ়রের ব্লেড নিয়মিত বদলালে শেভিংয়ে সমস্যা হয় না। মুখ ধোয়ার পর পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। তার পর হাইড্রেটিং আফটারশেভ ময়শ্চারাইজ়ার বা ফেশিয়াল অয়েল লাগান। শেভ করার পর অনেকের ত্বকে লাল ভাব, র্যাশ দেখা দেয়। ক্যামোমাইল টি বা টি ট্রি অয়েল সমৃদ্ধ ময়াশ্চারাইজ়ার সমস্যার সমাধান করবে।
দাড়ি রাখলে অবশ্যই নিয়মিত ট্রিম করবেন। ময়শ্চারাইজ়ড বিয়ার্ড শ্যাম্পু দিয়ে দাড়ি পরিষ্কার রাখবেন। তবে অতিরিক্ত ধোবেন না, এতে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নিঃশেষ হয়ে যাবে, খসখসে লাগবে। দাড়ির গোড়ার ত্বকের জলীয় ভাব ধরে রাখতে ভাল বিয়ার্ড অয়েল লাগাবেন। এই রুটিনে আলস্য করলেই দাড়ির সৌন্দর্য চলে যাবে, গোটা চেহারাই বিধ্বস্ত, এলোমেলো দেখাবে।
হাত-পায়ের যত্ন
শীতের অত্যাচার থেকে বাঁচতে বডি লোশন ছাড়াও ব্যবহার করুন পুরু হ্যান্ড ও ফুট ক্রিম। এখন সালঁ-য় ছেলেদের ম্যানিকিয়োর, বিশেষত পেডিকিয়োর করানোর চল অনেক বেড়েছে। মাসে এক বার এই ট্রিটমেন্ট করলে হাত ও পায়ের ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। বহু পুরুষই দিনের বেশির ভাগ সময় মোজা, বুট পরেন। এতেও ত্বক নিষ্প্রাণ দেখায়। পেডিকিয়োর এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর।
তবে যাঁদের পেডিকিয়োরের অভ্যেস রয়েছে তাঁদেরও অনেকে শীতের সময়ে এই ট্রিটমেন্টে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। মনে করেন, পা ঢাকা রাখলেই চলবে। এ সময়ে কিন্তু বাতাসের শুষ্কতা পায়ের চামড়া কুঁচকে দেয়। অনেকের গোড়ালি ফাটে। এ সব ক্ষেত্রে শুধু পেট্রোলিয়াম জেলি লাগানোই যথেষ্ট নয়। পেডিকিয়োর করিয়ে ফুটক্রিম লাগালে তবে পা পরিষ্কার ও সুন্দর থাকবে। অতএব ছেলেরা শীতে নিজের যত্ন নিন পুরোদমে।
একটুস্টাইলের জন্য
পিকনিকে গেলে বা শীতের হাওয়া প্রবল হলে বড় হ্যাট, স্কার্ফ ব্যবহার করুন। স্টাইলও হবে, ত্বক-চুল আবহাওয়া জনিত ঝুটঝামেলা থেকে রেহাই পাবে।
ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের আগে ফেশিয়াল করলে ভাল। পার্টি সিজ়নে পারলে মাসে দু’বার হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহার করুন। রাত জাগা বা অনিয়মের ফলে চোখ-মুখে ফোলা ভাব থাকলে তা-ও চলে যাবে। আর প্রচুর জল পান করুন। ভিতর থেকে হাইড্রেটেড থাকলে ত্বকও চকচক করবে।