ঘন ঘন কানের ময়লা পরিষ্কার করা কি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস? ছবি: শাটারস্টক।
অবসর সময় পেলেই অনেকেই কান খোঁচানোর কাঠি, কটন বাড বা ইয়ার বাড কানে গুজে সময় কাটান । মিনিটখানেক ধরে কানের ভিতরে সুড়সুড়ি দিতে দিতে আরামে যেন চোখ বন্ধ হয়ে আসে। কিন্তু ক্ষণিকের আরাম যে যখন-তখন বিপদ ডেকে আনতে পারে, সে খবর রাখেন কি?
এই আরামের কারণ কানের ভিতরে অসংখ্য স্নায়ুর জটলা। কান এমন একটা জায়গা, যেখানে অসংখ্য স্নায়ু জটলা পাকিয়ে থাকে। তার উপর সুড়সুড়ি দিলে আরাম তো লাগবেই। কিন্তু সামান্য অসাবধানে কটন বাড বা কাঠিটা আর একটু ভিতরে চলে গেলেই পর্দায় খোঁচা লাগতে পারে। আর তাতেই বড় বিপদ হতে পারে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, কান খোঁচাতে গিয়ে পর্দায় চোট লেগেছে, এবং সেই চোট মস্তিষ্কে পর্যন্ত প্রভাব ফেলেছে—এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটে। এই অভ্যাসের কারণে বধির হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই আবার বাডের তুলো অসাবধানতায় কানে ঢুকে গিয়ে বড় বিপত্তিও ডেকে আনতে পারে। অনেক সময়ই অস্ত্রোপচারের সাহায্য নিতে হয় এমন বিপদে। শুধু তা-ই নয়, কটন বাড নিয়ে খোঁচানোর ফলে প্রতি দিনই কানের অডিটরি লোবকে উত্তেজিত করে তার অভ্যন্তরীণ ক্ষতি করছি আমরা। কানের তরুণাস্থিও ক্ষতি হচ্ছে। যার ফলে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে শ্রবণশক্তি।
বেশি কিছু কটন বাডের বাক্সের গায়ে লেখা থাকে, এগুলি কানের ভিতরে ব্যবহারের জন্য নয়। তার পরেও অনেকেই সেই কথায় পাত্তা না দিয়ে দিনের পর দিন কানের ভিতরেই বাড ব্যবহার করে চলেছেন। বিষয়টি অনেকটা ধূমপানের মতো। প্যাকেটে লেখা থাকে, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। কিন্তু তাতেও হেলদোল নেই মানুষের।
কানের ভিতর যেটুকু ময়লা থাকে, তা আদতে কানের পর্দাকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। বিকট আওয়াজ, কানে বায়ু ঢোকা— এ সব থেকে কানের পর্দাকে রক্ষা করে এই ময়লাগুলো। কানের ভিতরের আঠালো পদার্থ আমাদের কানের জন্য ভাল। তা কানের পর্দাকে বাইরের সংক্রমণ ও ধুলোবালি থেকেও রক্ষা করে। ময়লা বেশি জমে যাওয়ার ধারণা ভুল। যেটুকু ময়লা অতিরিক্ত, কান তা হাঁচি-কাশি-স্নান-ঘুম ইত্যাদি নানা জৈবিক কাজের হাত ধরেই বেরিয়ে যায়। আলাদা করে খুঁচিয়ে বার না করলেও চলে। তবু অনেক ক্ষেত্রে এই খোল বেশি মাত্রায় জমে গিয়ে সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু কোনও ভাবেই বাড দিয়ে কান খোঁচানো যাবে না, এমনটাই মত চিকিৎসকদের।