জিনগত কারণ না থাকলে জীবনযাত্রার মানই চুলের অকালপক্কতার কারণ। ছবি : প্রতিনিধিত্বমূলক।
বয়স তিরিশের আশপাশে। দিন-রাত ছুটছেন। দশহাতে সামলাচ্ছেন কাজ, পরিবার, অফিস রাজনীতি, জনসংযোগ, বন্ধুবান্ধব এবং নিজেকে। দাঁড়াবার সময় নেই। আয়নার সামনে মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে এক অন্য মানুষকে। এই মানুষটার চুলে পাক। বয়সও একটু বেশি দেখায়। মাঝে মধ্যে চিনতেই অসুবিধা হয়, আয়নার মানুষটা আদতে আপনিই।
চিকিৎসকেরা বলছেন, মিলেনিয়ালস (১৯৮১-১৯৯৯ সালের মধ্যে জন্মেছেন যাঁরা) এবং জেন জ়েডদের (২০০০-২০১৫ সালের মধ্যে জন্ম যাঁদের) মধ্যে এই চুলে পাক ধরার সমস্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ত্বকের চিকিৎসক অপর্ণা সান্তানম সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘বিশেষ করে এশীয়দের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ২৫ বছরের পর থেকেই চুল পাকতে শুরু করছে।’’
কারণ কী?
কারণ হিসাবে তিনটি বিষয়কে দায়ী করছেন নয়াদিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালের ত্বক বিশেজ্ঞ ডিএম মহাজন। তাঁর কথায়, ‘‘৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে চুল পাকে জিনগত কারণে। বাকিদের ক্ষেত্রে পরিবেশ একটা বড় কারণ। অতিবেগণি রশ্মির বিকীরণ, দূষণের জন্যও চুল পাকে। আবার দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপও চুল পাকার কারণ হতে পারে।’’ দিল্লিরই আরও একটি বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রের ত্বকের চিকিৎসা বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শিতজি গোয়েল আবার বলছেন, ‘‘আধুনিক জীবনযাত্রায় খাওয়াদাওয়ার মান খারাপ হয়েছে। তার উপরে জুড়েছে ধূমপান, মদ্যপানের মতো বদভ্যাস। যা আমাদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বৃদ্ধি করে এবং তা থেকেই চুলের রং বদলায়।’’ এ ছাড়া কয়েকটি ক্ষেত্রে পুষ্টির ঘাটতি, ঘুমের ঘাটতি, নিয়মহীন বিশ্রাম, থাইরয়েডের সমস্যা-সহ কিছু রোগের কারণেও চুল পাকতে পারে। মোট কথা, জিনগত কারণ না থাকলে জীবনযাত্রার ধরনই চুলের অকালপক্কতার কারণ।
আটকানো যায় কি?
চিকিৎসক গোয়েল বলছেন, চুলের অকালপক্কতা আটকানো সম্ভব। তবে পাকা চুলকে আগের অবস্থায় পুরোপুরি ফেরানো সম্ভব নয়। তার জন্য মাথায় রাথতে হবে কয়েকটি বিষয়— এক, পুষ্টির ঘাটতি দুই, থাইরয়েডের সমস্যা তিন, মানসিক চাপ।
কী কী বিষয়ে পুষ্টির ঘাটতি হলে চুল পাকতে পারে?
রক্তে আয়রন, কপার, ভিটামিন বি১২-এর অভাবে চুল অকালে পাকতে পারে। কিসের অভাব হচ্ছে, তা জানতে প্রথমেই রক্তপরীক্ষা করা দরকার। এ-ও জানা দরকার হরমোনের সমস্যার জন্য চুল পাকছে কি না। এক বার কারণ জানা গেলে সেই মতো চিকিৎসা শুরু করা যাবে বা ঘাটতি মেটানোর প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। একই সঙ্গে বদলাতে হবে খাদ্যাভ্যাসও।
ঘরোয়া উপায়
ঘরোয়া যে সমস্ত উপায়ের কথা মা-দিদিমাদের সময় থেকে চলে আসছে, তার কয়েকটি ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, আমলকি, কারিপাতা এবং মেহেন্দির ব্যবহার অনেক সময়েই চুলকে কালো রাখতে সাহায্য করে। তবে এই সবই কাজ করবে তখন, যখন সার্বিক জীবনযাত্রা বদলানো সম্ভব হবে।