চোখ-মুখে ফোলা ভাব কি কমছেই না? প্রতীকী ছবি।
সকালে ঘুম থেকে উঠলে মুখ-চোখ ফোলা লাগে অনেকের। আবার ধীরে ধীরে ঠিকও হয়ে যায়। কিন্তু চোখ-মুখের ফোলা ভাব না কমলেই চিন্তা বাড়ে। কী থেকে এমন হচ্ছে, কোনও অসুখবিসুখ করেছে কি না, তা নিয়ে দুর্ভাবনা শুরু হয়। কিন্তু এর সমাধান লুকিয়ে রয়েছে দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্যেই। অনেক সময়েই সঠিক পুষ্টির অভাব, অতিরিক্ত ওজন, কম ঘুম, অ্যালার্জি জনিত সমস্যা, শরীরে জলশূন্যতা, হরমোনের ভারসাম্যের অভাব, বিশেষ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এমন হতে পারে।
এই বিষয়ে মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মত, কম জল খেলেও চোখ-মুখ ফুলে যেতে পারে। অ্যাসপিরিন জাতীয় ব্যাথানাশক ওষুধ বা স্টেরয়েড যাঁরা বেশি খান, তাঁদের এমন সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত মদ্যপান করলে, রাত জেগে ভাজাভুজি বা বেশি নোনতা জাতীয় খাবার খেলেও এমন সমস্যা হতে পারে। আবার থাইরয়েড হরমোনের গোলমাল হলে ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চোখ-মুখেও ফোলা ভাব দেখা দেয়। জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণ এনেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
প্রসাধনীতে ঢাকবে না, রোজের জীবনে কী কী বদল আনবেন?
১) সর্বাগ্রে কাঁচা নুন খাওয়া কমাতে হবে। চিকিৎসকের কথায়, এক জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে ৫ থেকে ৬ গ্রাম নুন খেতে পারেন। অর্থাৎ পরিমাপটা হল এক চা চামচের কিছু কম। সারা দিনে এইটুকুই খাওয়া উচিত। কিন্তু, রান্নায় বা খাওয়ার পাতে অনেকেই নুন বেশি খান। পাশাপাশি, ভাজাভুজি, বার্গার, পিৎজ়া জাতীয় খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলেও শরীরে নুন বেশি ঢোকে। তখন চোখ-মুখে ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে।
২) নুন খুব কম খেয়ে ফেললে আবার অন্য সমস্যা হতে পারে। তাই সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পটাশিয়াম যু্ক্ত খাবার খেতে হবে। কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। তবে ওজন খুব বেশি হলে কলা কম খেতে হবে। পালং শাক, পেঁপে, গাজর, বিভিন্ন রকম বাদামে পটাশিয়াম আছে। খাদ্যতালিকায় এগুলি নিয়ম করে রাখতে হবে।
৩) পর্যাপ্ত জল পান করতেই হবে। অন্য কোনও অসুখ না থাকলে দিনে ৩-৪ লিটার জল খাওয়াই জরুরি। শরীরকে আর্দ্র রাখতে হবে। জলের অভাব হলেই শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যেতে পারে না, তখন শরীরে ফোলা ভাব আসে।
৪) চিকিৎসকের কথায়, হার্টের নানা সমস্যায় চোখ-মুখ ফুলতে পারে। শরীরে জল জমার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। তাই যদি ফোলা ভাব না কমে, তা হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। রক্তচাপও পরীক্ষা করাতে হবে।
৫) দিনে অন্তত দুই থেকে তিন বার মুখে ‘আইস প্যাক’ লাগাতে পারেন। নরম তোয়ালেতে কয়েকটি বরফ নিয়ে মুখের ফোলা জায়গাগুলিতে লাগাতে হবে। এতে প্রদাহ কমবে ও রক্ত সঞ্চালন ভাল হবে।
৬) ডিটক্স পানীয় শরীর থেকে টক্সিন বা দূষিত পদার্থ ও অপ্রয়োজনীয় তরল বের করে দিতে সাহায্য করে। শসা, স্ট্রবেরি, আঙুর, লেবু ছোট ছোট করে কেটে সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পর দিন সকাল থেকে দিনভর একটু একটু করে সেই জল খেতে হবে।
৭) নিয়মিত শরীরচর্চাও জরুরি। হাঁটাহাঁটি, দৌড়নো, সাইকেল চালানো, সাঁতার ইত্যাদি ব্যায়াম শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।