পেন ম্যানেজমেন্ট কী? ফাইল চিএ
ক্যানসারের যন্ত্রণা থেকে শুরু করে হাড় কিংবা স্নায়ু সংক্রান্ত কোনও ব্যথা, পেন ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা এখন সব ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ বিষয় সচেতনতা কতখানি? ক’জন জানেন যে, আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইএসআই হাসপাতাল-সহ রাজ্যের একাধিক সরকারি হাসপাতালে পেন ম্যানেজমেন্টের আলাদা বিভাগ রয়েছে?
সাবেক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অ্যানাস্থেশিয়োলজিস্টরা ব্যথা কমার ওষুধের সাহায্যে রোগীর চিকিৎসা করতেন। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা-বিজ্ঞানে স্নায়ুর সমস্যা থেকে শুরু করে ক্যানসারের যন্ত্রণা— সব সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি আছে। অস্ত্রোপচার ছাড়া কী ভাবে ব্যথা কমানো যায়, সে চেষ্টাই চলে পেন ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। ওষুধের পাশাপাশি নার্ভ ব্লকস, রেডিয়োফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন, ইনফিউশন পাম্প ইমপ্লান্ট-সহ একাধিক আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয় ব্যথা নিরাময়ে। ইএসআই ইনস্টিটিউট অব পেন ম্যানেজমেন্টের অধিকর্তা চিকিৎসক সুব্রত গোস্বামী বলেন, ‘‘পেন ম্যানেজমেন্ট চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যথা নিরাময়ের পাশাপাশি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কমাতেও সাহায্য করে। যেমন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের শেষ পর্যায়ে ব্যথা উপশমের জন্য মরফিন দেওয়া হয়। পেন ম্যানেজমেন্ট চিকিৎসায় রোগীকে ওরাল মরফিন দেওয়া হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাম্পের মাধ্যমেও এই মরফিন দেওয়া হয়, তবে এই পদ্ধতি ব্যয়বহুল। যন্ত্রণার উপশম হয়। তবে ভারতে সরকার ক্যানসারের রোগীদের জন্য মরফিন ব্যবহারের ছাড়পত্র দিলেও বাজারে রোগীদের জন্য এই ওষুধ এখনও সহজলভ্য নয়। নানা আইনি জটিলতার কারণে রোগীরা এই ওষুধের সুফল থেকে বঞ্চিত হন। পেন ম্যানেজমেন্ট চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয় আর একটু সচেতনতা বাড়ালে বোধ হয় ক্যানসার রোগীদের জন্য ভাল হবে।’’
রবিবারের অনুষ্ঠানের এক ঝলক। নিজস্ব চিএ
কী পদ্ধতিতে এই চিকিৎসা করা হয়?
প্রথমেই কাউকে ওষুধ দেওয়া হয় না। সুব্রতবাবু জানান, রোগীর সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলে, তাঁর যন্ত্রণার কথা জানতে চাওয়া হয়। এক কথায় তাঁর কাউন্সিলিং করা হয়। কথা বললেও অনেক রোগী মানসিক শান্তি পান, তাঁর যন্ত্রণা খানিকটা হলেও কমে। প্রয়োজন বুঝে তাঁকে ওষুধ দেওয়া হয়, ফিজিয়োথেরাপিও করানো হয়। তাতেও সমস্যা না কমলে যে স্নায়ু পথে ব্যথা তৈরি হচ্ছে, সেই পথ ওষুধ দিয়ে বন্ধ করা হয়।
এ বিষয়ে শহর জুড়ে সচেতনতা বাড়াতে ‘ইএসআই ইনস্টিটিউট অব পেন ম্যানেজমেন্ট’, ‘পেন সিম্পোজিয়াম সংস্থা’ এবং ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সোসাইটি ফর দ্য স্টাডি অব পেন’-এর উদ্যোগে গত ২৮ তারিখ একটি আলোচনামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। কেন ভারতে এখনও ব্যথা উপশম করার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না, সেই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় সাংসদ জহর সরকারের কাছে। কী ভাবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি আরও বেশি রোগীর কাজে আসতে পারে, তা নিয়ে নানাবিধ চর্চা চলে। আলোচনায় উঠে আসে এক গবেষণার কথা। চিকিৎসক দেবী প্রসাদ দুয়ারির মতে, এক সমীক্ষা অনুযায়ী আকাশের তারার দিকে বেশ কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থাকলেও নাকি ব্যথা থেকে উপশম পেতে পারেন রোগীরা। চিকিৎসক বলেন, ‘‘কোনও মরণাপন্ন রোগীকে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করে, নানা ইনজেকশন দিয়ে, ভেন্টিলেশনে রেখে বাঁচানোর চেষ্টা করি। অথচ তাঁর ষন্ত্রণা, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয় ভেবেও দেখি না। চেষ্টা করলেই কিন্তু এই পেন ম্যানেজমেন্ট চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করেই আমরা এমন রোগীর যন্ত্রণা অনেকাংশে কমাতে পারি। প্রয়োজন আরও সচেতনতার। আমি মনে করি প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে একটি পেন ক্লিনিক থাকা দরকার। রোগীর ব্যথা কমা তাঁর অধিকারের মধ্যে পড়া উচিত।’’
দেশে পেন ম্যানেজমেন্টের চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। পেন ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং দেওয়া হয় এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও হাতে গোনা। এই প্রশিক্ষণ আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের তরফে পরিকল্পনার অভাব আছে। সব মিলিয়ে ব্যথা উপশমের ছবিটা অন্ধকার থেকে আলোয় আনার উদ্যোগ আরও বেশি করে নিতে হবে বলেই বার্তা চিকিৎসকের।