হাঁটুর ব্যথাকে ভয় পাবেন না।
বয়স বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে অনেকেই কাবু হন হাঁটুর ব্যথায়। বিশেষত আমাদের দেশের মহিলাদের মধ্যে অস্টিয়োপোরোসিস, অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস হতে বেশি দেখা যায়। ফলে অনেক সময়েই একটা বয়সের পরে চিকিৎসকরা ক্যালসিয়াম খেতে বলেন। কিন্তু এখন বয়স বাড়লেই যে শুধু হাঁটু ব্যথা করবে তেমনটা নয়। ইদানীং কম বয়স থেকেই হাঁটুর ব্যথায় ভোগেন অনেকে। মধ্যতিরিশেও হয়তো হাঁটুর ব্যথায় সিঁড়ি ভাঙা বন্ধ। দু’পা হাঁটলেই যেন হাঁটুটা কনকন করে ওঠে।
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস বললেন, “হাঁটুর পেশির জোর বাড়াতে হবে। হাঁটুর মাসল যদি টোন করে নেওয়া যায়, তা হলে ব্যথা থেকে মুক্তি মিলবে। তবে তার জন্য ঠিক ব্যায়ামের পদ্ধতিও জানতে হবে। শরীরের ওজন বেড়ে গেলে আগে তা কমানো প্রয়োজন। অনেকের শরীরের উপরের অংশ ভারী হয়ে যায়, অনেকের আবার শরীরের নিম্নভাগ। তাই শরীরের কোন দিক বেশি ভারী সেই অনুযায়ী ওজন কমাতে হবে। আর ব্যয়াম মানেই সব সময়ে ফুল বডি এক্সারসাইজ় নয়। যখন হাঁটুতে ব্যথা তখন চেয়ারে বসে প্রথমে ব্যায়াম শুরু করতে হবে। ক্রমশ হাঁটুর মাসল শক্তিশালী হয়ে উঠলে তার পরে স্পট রিডাকশন বা অন্য ব্যায়াম শুরু করা যাবে।” পায়ের ব্যায়াম করা যায় চেয়ারে বসে। প্রত্যেকের শরীরের সমস্যা ভিন্ন। তাই কাউকে দেখে ব্যায়াম না করে সমস্যা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। চেয়ারে বসে জগিং, পা লম্বা করে স্ট্রেচ করে ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন। ধীরে-ধীরে ব্যায়ামের সংখ্যা ও সময় বাড়ান।
যে যে ব্যায়াম করা যায়
হাঁটুর ব্যথা কমানোর জন্য কিছু ব্যায়ামের পরামর্শ দিলেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস। সেগুলি হল:
আইসোমেট্রিক কোয়াড্রিসেপস এক্সারসাইজ়: পায়ের নীচে তোয়ালে রেখে এ ব্যায়াম শুরু করবেন। দুটো পা সামনে লম্বা করে ছড়িয়ে বসতে হবে। এ বার হাঁটুর ভিতরের অংশটা যথাসম্ভব মেঝের সঙ্গে লাগাতে হবে আবার হাঁটু মুড়তে হবে। তবে খুব বেশি হাঁটু মুড়বেন না। অল্প হাঁটু মুড়ে আবার পা সোজা করবেন। আবার হাঁটু মুড়ে পা সোজা করুন। এ ভাবে প্রত্যেক পায়ে পাঁচ থেকে দশবার করতে হবে।
আইসোমেট্রিক হ্যামস্ট্রিং এক্সারসাইজ়: সোজা হয়ে শুয়ে দু’পায়ের হাঁটু ভাঁজ করে কোমরের অংশ থেকে তুলতে হবে। আস্তে-আস্তে কোমরের অংশ নামিয়ে মেঝেতে রাখুন। আবার একটু পরে তুলতে হবে। এ ভাবে দশ বার করুন।
কোয়াড্রিসেপ স্ট্রেংদেনিং এক্সারসাইজ়: অনেক রকমের মুভমেন্টেই কোয়াড্রিসেপ স্ট্রেংদেন করা যায়। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে প্রথমে এমন ভাবে ডান পায়ের হাঁটু ভাঁজ করতে হবে যাতে পায়ের পাতা হিপে লাগে। হাত দিয়ে পায়ের পাতার অংশ শরীরের পিছনের দিকে ধরে রাখুন। এ বার ডান পা নামিয়ে বাঁ পাঁ ভাঁজ করুন। এ ভাবে দু’পায়েই দশ বার করুন।
আবার মাটিতে শুয়ে বাঁ পায়ের হাঁটু একটু তুলে রাখুন আর ডান পা সোজা উপরের দিকে তুলুন আর নামান। একই ভাবে অন্য পায়েও এই ব্যায়াম করুন দশ বার।
চেয়ারে বসেও কোয়াড্রিসেপ স্ট্রেংদেনিং ব্যায়াম করতে পারেন। চেয়ারে বসে বাঁ পা স্বাভাবিক পজ়িশনে রাখুন। ডান পা সামনের দিকে সোজা তুলে দিন। ডান পা কিছুক্ষণ ধরে রেখে আবার মাটি স্পর্শ করুন। আবার তুলুন। এ ভাবে প্রত্যেক পায়ে দশ বার করুন।
হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ়: মাটিতে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ুন। এ বার এক্সারসাইজ় ব্যান্ড পায়ের পাতার তলা দিয়ে নিয়ে গিয়ে ব্যান্ডের দু’দিক রাখুন হাতে আর পায়ের পাতার সাপোর্ট থাকবে ব্যান্ডে। প্রথমে হাত দিয়ে ব্যান্ডের দু’প্রান্ত ধরে ধীরে-ধীরে ডান পা তুলুন উপরের দিকে। ব্যান্ডের সাহায্যে পায়ের পাতাও সাপোর্ট পাবে। কিছুক্ষণ এই পজ়িশন ধরে রেখে পা নামিয়ে আনুন। এ বার বাঁ পায়ে করুন। এ ভাবে দশ বার করতে হবে।
হাঁটুর ব্যথায় কাবু হয়ে বসে থাকলে রেহাই মিলবে না। বরং ফিটনেস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে হাঁটুর পেশির শক্তি বাড়াতে ব্যায়াম শুরু করুন। পেশি যত মজবুত, তত ব্যথা কমবে।
নবনীতা দত্ত