ওট্সের দুধের ভালমন্দ জেনে নিন। ছবি: ফ্রিপিক।
দুধকে ‘সুষম খাবার’ই বলেন পুষ্টিবিদেরা। প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালশিয়াম-সহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান দুধে এত বেশি থাকে যে, শরীরের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। দুধ বলতে গরু, মোষ বা ছাগলের দুধই খাওয়া হত আগে। এখন আবার উদ্ভিদজাত নানা দুধের বেশ রমরমা। কঠোর ডায়েট করেন যাঁরা, অথবা ভিগান ডায়েটে যাঁরা অভ্যস্ত, তাঁদের অনেকেই কাঠবাদামের দুধ, সয়া মিল্ক বা ওট্সের দুধ খান। পুষ্টিবিদেরাও বলে দেন, গরুর দুধ হজম না হলেও চিন্তা নেই। ল্যাকটোজ় ইনটলারেন্টরা দিব্যি খেতে পারবেন উদ্ভিজ্জ দুধ।
এখন কথা হল, ওট্সের দুধ নিয়ে যে এত চর্চা হয়, তা কি সকলের জন্য উপযোগী? কারা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এই দুধ এবং কারা নয়, তা জেনে রাখা ভাল।
এক গ্লাস বা ২৪০ মিলিলিটারের মতো ওট্সের দুধ থেকে প্রায় ১২০ ক্যালোরি পাওয়া যায়। এক কাপ দুধে থাকে ১৫ গ্রামের মতো কার্বোহাইড্রেট, ২.৫ গ্রাম ফ্যাট, ২ গ্রাম ফাইবার, ৪ গ্রাম প্রোটিন। তবে গরুর দুধে যে পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও প্রোটিন থাকে, তার খামতি রয়েছে ওট্সের দুধে। এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর মত, “ওট্সের দুধে প্রোটিন দ্বিতীয় শ্রেণির। তবে ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি ভরপুর মাত্রায় থাকে। তা ছাড়া এই ধরনের দুধ সহজপাচ্য, ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকায় ওজন কমাতে চাইছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য আদর্শ। প্রাণিজ দুধে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে। এত বেশি পরিমাণে ল্যাকটোজ় থাকে, যা বুঝেশুনে না খেলে মুশকিল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওট্সের দুধ ভাল বিকল্প হতে পারে। তবে শিশুদের জন্য এই দুধ উপযুক্ত নয়।”
ওট্সের দুধ কারা খাবেন?
গরুর দুধে অ্যালার্জি বা ‘ল্যাকটোজ় ইনটলারেন্স’ থাকলে ওট্সের দুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে পরিমিত পরিমাণে। দিনে দু’কাপের বেশি নয়।
ওট্সের দুধে বিটা-গ্লুকান নামে ফাইবার থাকে, যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল)-এর মাত্রা কমাতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওট্সের দুধ নিয়মিত খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা ৬ শতাংশ অবধি কমতে পারে। কাজেই যাঁদের হার্টে সমস্যা রয়েছে অথবা কোলেস্টেরল বেশি, তাঁরা গরুর দুধের বিকল্প হিসাবে ওট্সের দুধ খেতেই পারেন।
ওট্সের দুধ ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে পারে। এতে ফাইবারের মাত্রা বেশি, তাই ওজন কমাতে হলে ওট্সের দুধ উপযোগী হতে পারে। শম্পা জানাচ্ছেন, ওট্সের দুধে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা শরীরের জন্য ভাল।
ওট্সের দুধে ভরপুর মাত্রায় থাকে ভিটামিন ডি, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। অস্টিয়োপোরেসিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়। ঋতুবন্ধের পরে মেয়েদের শরীরে হরমোনের তারতম্য দেখা দেয়, ক্যালশিয়ামের মাত্রাও কমতে থাকে। তখন ওট্সের মতো উদ্ভিজ্জ দুধ উপযোগী হতে পারে।
কারা খাবেন না?
পেটের গোলমাল বা হজমের সমস্যা থাকলে, অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা বেশি হলে ওট্সের দুধ বুঝেশুনে খাওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
ওট্সের দুধে প্রোটিন ও ফ্যাট খুব কম পরিমাণে থাকে। তাই শিশুদের জন্য এই দুধ ততটা উপযোগী নয়। ছোট থেকেই গরুর দুধের বদলে যদি ওট্সের দুধ খাওয়ানো শুরু করেন, তা হলে পুষ্টির ঘাটতি থেকে যেতে পারে।
কোন ব্র্যান্ডের দুধ কিনছেন, তাতে কী কী উপাদান আছে তা দেখে কিনতে হবে। কিছু ব্র্যান্ডের ওট্সের দুধে ক্রিমের মাত্রা বেশি থাকে, চিনি ও কৃত্রিম রংও মেশানো থাকে। এই ধরনের দুধ খেলে শরীরে সমস্যা হতে পারে।