বাসি ভাত বার বার গরম করে খাওয়া কি ঠিক? ছবি: ফ্রিপিক।
সংসার আর অফিস একসঙ্গে একহাতে সামলাতে হিমশিম খেতে হয় অনেককেই। তাই দু’বেলার ভাত বেশি করেই করে রাখেন অনেকে। আবার সময় বাঁচাতে একসঙ্গে অনেকটা ভাত করে ফ্রিজে রেখে দেওয়াও হয়। বার করে গরম করে নিয়ে খেলেই হল। কিন্তু এই যে বার বার ফ্রিজ থেকে ভাত বার করে গরম করে খাওয়া হচ্ছে, তা কি শরীরের জন্য ভাল? পুষ্টিবিদেরা জানাচ্ছেন, এই অভ্যাস একেবারেই ঠিক নয়। সময় ও গ্যাসের খরচ বাঁচছে ঠিকই, কিন্তু শরীরের বারোটা বেজে যাচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদ ডিম্পল জাংরা তাঁর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে পোস্ট করে জানিয়েছেন, ভাত বেশি দিন রেখে দিলে তাতে ব্যাসিলাম সিরিয়াস নামে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়। রান্না ভাত যদি ঠিকমতো সংরক্ষণ করা না-হয় বা সঠিক পদ্ধতিতে গরম করে না-খাওয়া হয়, তা হলেই ওই ব্যাক্টেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। খুব দ্রুত বিভাজন ঘটিয়ে সংখ্যায় বাড়ে ওই ব্যাক্টেরিয়া। যদি ভাত তিন থেকে চার দিন বা তার বেশি ফ্রিজে রেখে দেওয়া হয়, তা হলে সেই ভাতে প্রচুর পরিমাণে ব্যাক্টেরিয়া জন্মাবে। সেই ভাত তখন গরম করলেও জীবাণু নষ্ট হবে না, বরং একরকম টক্সিন বার করবে। সেই টক্সিন ভাতের সঙ্গে মিশে পেটে গেলে বিষক্রিয়াও হতে পারে।
পুষ্টিবিদ জানাচ্ছেন, দীর্ঘ দিন ধরে ফ্রিজে রেখে দেওয়া বাসি ভাতে ‘আফলাটক্সিন’ নামে এক ধরনের রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে যা নিঃসরণ করে ব্যাসিলাস ব্যাক্টেরিয়া। এই রাসায়নিক লিভারের জন্য বিষ। যাঁরা দিনের পর দিন বাসি ভাত খেয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের হজমের সমস্যা তো হবেই, লিভারের জটিল অসুখও হতে পারে। এ-ও দেখা গিয়েছে, রান্না করা ভাত ফ্রিজ থেকে বার করে বারে বারে গরম করে খাওয়ার কারণে পাকস্থলীতে বিষক্রিয়া হয়েছে। এমনকি এই অভ্যাস কিডনির রোগের আশঙ্কাও বাড়াতে পারে।
তা হলে কি বাসি ভাত খাওয়া যাবে না?
ডিম্পলের কথায়, বাসি ভাত খাওয়া যাবে, তবে সেই ভাত সঠিক ভাবে রাখতে হবে ফ্রিজে। ভাত করার পরে তা ঠান্ডা করে তবেই ফ্রিজে ঢোকাবেন। ভাতের বাটি খোলা রাখলেই তাতে দ্রুত জীবাণু জন্মাবে। তাই বায়ুনিরোধী পাত্রে ভাত রেখে তবেই তা ফ্রিজে রাখতে হবে।
রান্না ভাত বেশি হলে তা দীর্ঘ সময় ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখবেন না। এতে খুব তাড়াতাড়ি ব্যাক্টেরিয়া বাসা বাঁধবে। যত দ্রুত সম্ভব ভাত ফ্রিজে তুলতে হবে।
রান্না করা ভাত বেশি দিন রেখে খাবেন না। ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সেই ভাত খেয়ে নিতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয়, রোজের ভাত রোজ করে নিলে।
ভাত খুব ভাল করে গরম করে তবেই খেতে হবে। ভাল হয়, সেই ভাত আরও একবার জল দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে খেলে। উচ্চ তাপমাত্রায় সমস্ত জীবাণু নষ্ট হয়ে যাবে। তবে মাইক্রোঅয়েভে বারে বারে গরম না-করাই ভাল।