ভাসানের নাচেও সাবধান থাকুন। ছবি: সংগৃহীত।
নবরাত্রি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে নানা ধরনের অনুষ্ঠান। গুজরাতে তার আড়ম্বর কিছুটা বেশি। এ বছরেও গরবা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল মহা সমারোহে। কিন্তু এই আনন্দের মধ্যেই হঠাৎ নেমে এল বিষাদ। গরবা অনুষ্ঠানে নাচতে নাচতে হঠাৎ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল বছর ১৩-র কিশোর। ঘটনাটি ঘটেছে গুজরাতের আমদাবাদে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গরবায় অংশ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে আরও ১০ জনের। প্রত্যেকেরই বয়স ১৩ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। তার পর থেকেই গরবার নামে সিঁদুরে মেঘ দেখছে সাধারণ মানুষ। বাংলায় দুর্গাপুজোর ভাসানেও উদ্দাম নাচের চল। সেখানেও কি ঘটতে পারে এমন ঘটনা? প্রশ্ন এই যে, নাচের সঙ্গে আদৌ কি হার্ট অ্যাটাকের যোগ আছে?
চিকিৎসকদের মতে, গরবা বা অন্য নাচের সঙ্গে সরাসরি হৃদ্রোগের কোনও যোগ নেই। তবে এই ধরনের নাচের অনুষ্ঠান দীর্ঘ ক্ষণ ধরে হয়। তাই যাঁদের হার্টে কোনও রকম সমস্যা রয়েছে, তাঁদের এই ধরনের পরিশ্রম করতে নিষেধ করা হয়। গানের তালে তালে নানা রকম শারীরিক কসরত করতে হয়। যা ‘হাই ইনটেন্স’ শরীরচর্চার থেকে কোনও অংশে কম নয়। তার উপর নবরাত্রিতে উপোস করে থাকেন অনেকেই। পাশাপাশি, অতিরিক্ত পরিশ্রমে রক্তচাপ বেড়ে যায়। শরীরে অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়তে থাকে। হৃদ্যন্ত্র তার ক্ষমতার বাইরে গিয়ে রক্তে অক্সিজেনের জোগান দিতে চেষ্টা করে। অতিরিক্ত পাম্প করার ফলে পেশি দুর্বল হয়ে পড়তেই পারে। সেখান থেকেই প্রাণ সংশয় দেখা দেয়। তবে সকলের ক্ষেত্রেই যে এমনটা হবে তা নয়। কিন্তু শরীরকে বিপদে ফেলতে না চাইলে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।
১) শরীরকে আর্দ্র রাখতে হবে
নাচতে নাচতে গরমে ঘেমে শরীর থেকে অনেকটা জল বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়তেই পারে। ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রায় হেরফের হলে হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতেই পারে।
২) একটানা নাচ নয়
নাচের তালে একবার গা ভাসিয়ে দিলে নিজেকে আটকানো মুশকিল হয়ে পড়ে। কিন্তু নাচতে নাচতে শারীরিক ভাবে কাহিল হয়ে পড়তে না চাইলে নাচ থামিয়ে মাঝেমধ্যে বিরতি নিতে হবে। নাচতে নাচতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে, মাথা ঘুরলে বা অচৈতন্য হয়ে পড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৩) পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি
মহালয়ার পর থেকেই নবরাত্রি শুরু হয়। দশেরা পর্যন্ত চলে নানা ধরনের অনুষ্ঠান। খাওয়া, ঘুমের সময়ের কোনও ঠিক থাকে না। ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা স্বাভাবিক। এ দিকে বাংলার ভাসান-নাচেও থাকে অনিয়মের ছোঁয়া। পুজোর ক’দিন এলোমেলো খাওয়া বা রাত জেগে ঠাকুর দেখার পর শরীর এমনিতেও ক্লান্ত থাকে। তার উপর ভাসান বা ধুনুচি নাচের সময় ঢাকের বাজনা বা ডিজে-র বিট শরীরে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি করতেই পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তার উপর অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে হার্টের উপর চাপ পড়া অস্বাভাবিক নয়।