মারণরোগে আক্রান্ত হয়েও কর্মজীবন বজায় রাখা সম্ভব। ছবি: সংগৃহীত।
দেশে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে তিরিশ পেরনো ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারে হানা যথেষ্ট আশঙ্কাজনক হয়ে উঠছে। প্রাথমিক পর্যায় যদি স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে, তা হলে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে গেলে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব। ক্যানসারের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান। বিশেষ করে যাঁরা চাকরি করেন, ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার কর্মক্ষেত্রে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন অনেকেই। কিন্তু মারণরোগ সঙ্গে নিয়ে অফিস সামলানো সহজ নয়। রীতিমতো একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। ক্যানসার রোগীদের বিশ্রাম নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাহত হয়, এমন কোনও কাজ করা ঠিক নয়। সেখানে অফিসে যাতায়াত করাটা বেশ ঝুঁকির। তবে অসম্ভবও যে নয়, তেমনটাই বলছেন চিকিৎসক চঞ্চল গোস্বামী। চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমি দেখেছি চিকিৎসা চলাকালীন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত অনেক রোগী কাজ চালিয়ে যেতে চান। ক্যানসার আক্রান্তদের শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকা জরুরি। তবে তার জন্য অফিসে যেতে হবে, তার কোনও মানে নেই। বাড়িতেও টুকিটাকি কাজ করে নিজেকে সক্রিয় রাখা যায়। তবে কেউ যদি সিদ্ধান্ত নেন যে, চিকিৎসা চলাকালীন কাজ করবেন, সে ক্ষেত্রে যে বিশাল কোনও সমস্যা হবে, এমনও নয়। তবে এমন কঠিন অসুস্থতা নিয়ে কর্মজীবন স্বাভাবিক রাখা সহজ নয়। তবে বিষয়টিকে সহজ করে তুলতে কয়েকটি বিষয় মেনে চলা জরুরি।’’
সেগুলি কী?
অফিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন
অসুস্থতার বিষয়টি প্রথমেই কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া জরুরি। কর্মীদের কাছ থেকে অফিস কর্তৃপক্ষের কিছু আলাদা প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু ক্যানসার ধরা পড়ার পর সব প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে না। তা ছাড়া, সমস্ত অফিসেই কমবেশি কাজের চাপ থাকে। স্তন ক্যানসার নিয়ে কাজের বিপুল চাপ নেওয়া শরীরের জন্য ঠিক হবে না। আপনার শারীরিক অবস্থার কথা অফিস কর্তৃপক্ষের অবহিত থাকলে কাজের ক্ষেত্রে সাহায্য পাবেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
স্তন ক্যানসার নিয়ে চাকরি করার কথা ভাবা যায় তখনই, যখন চিকিৎসা সঠিক পথে হবে। কেমোথেরাপির পর নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সে সব সামলে অফিসের চাপ নিতে পারবেন কি না, সেটাও ভেবে দেখা জরুরি। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ শিরোধার্য। চিকিৎসা চলাকালীন চাকরি করার ধকল আপনার শরীর নিতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিন।
হালকা কাজ করুন
শারীরিক পরিশ্রম বেশি হয় এমন কাজ এড়িয়ে চলুন। বাড়ি থেকে কাজ করলে এক রকম। কিন্তু অফিস যাতায়াত করা একটা বাড়তি পরিশ্রম। সম্ভব হলে অফিসের কাজ বাড়ি থেকে করার চেষ্টা করুন। তাতে খানিকটা কম পরিশ্রম হবে। মানসিক চাপ হয়, এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হতে দেবেন না। তা হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
নিজের যত্ন নিতে হবে
শরীরের যত্নে কোনও ভাবেই অবহেলা করা যাবে না। একসঙ্গেই অফিস করলে নিজের প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে হবে। নিয়ম করে শরীরচর্চা করা থেকে সুষম খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম— সবটাই নিয়ম মেনে করতে হবে।
সহকর্মীর সাহায্য নিন
অফিসে সকলেরই আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে। কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় সব সময়ে সে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে সহকর্মীর সাহায্য এবং সমর্থন অত্যন্ত জরুরি। তাই সহকর্মীর সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করে নিন। অনেক সময়ে আপনার ভাগের কিছু কাজ সহকর্মীকেও করতে হতে পারে, সে বিষয়ে তাঁকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন।