ফ্রোজ়েন শোল্ডারের হাত থেকে রেহাই পাবেন কী করে? ছবি: শাটারস্টক।
মাঝেমাঝেই অফিসে একটানা বসে কাজ করার পর হাত নাড়াচড়া করতে গেলেই কাঁধে প্রবল যন্ত্রণা হয়। মনে হয় যেন কাঁধটা শক্ত হয়ে গিয়েছে, কোনও ভাবেই নাড়ানো যাচ্ছে না। এই সমস্যাকে ‘ফ্রোজ়েন শোল্ডার’ নামেই বেশি চেনেন লোকজন। এই রোগে কাঁধের বল ও সকেটসন্ধি আক্রান্ত হয়। বয়স ৪০ পেরোলেই ব্যক্তিদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি। পুরুষদের তুলনায় নারীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন।
এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক পর্যায় কাঁধ ঘোরানোর সময়ে তীব্র যন্ত্রণা হয়। সময় যত এগোতে থাকে, ততই ব্যথা অসহ্যকর হয়ে ওঠে এবং ঘাড় ও কাঁধের অঞ্চল শক্ত হয়ে যায়, তখন সমস্যা আরও বেড়ে যায়। তার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে কাঁধ, ধীরে ধীরে নাড়ানো যায় হাত। চিকিৎসকেদের একাংশ বলেন মূলত ডায়াবিটিস, থাইরয়েড, হার্টের আসুখ থাকলে ফ্রোজ়েন শোল্ডারের ঝুঁকি বাড়ে। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে গেলে কিংবা কোনও চোট-আঘাতের কারণেও এই রোগ হতে পারে।
ফ্রোজ়েন শোল্ডারের সমস্যায় ভুগলে রোজ কোন কাজগুলি করলে ব্যথা থেকে রেহাই পাবেন?
১) এই সমস্যার থেকে রেহাই পেতে ঘুমের সঙ্গে কোনও রকম আপস করা যাবে না। ঘুমোনোর সময়ে খেয়াল রাখবেন যেন শোয়ার ধরন ঠিক থাকে। ভুল ভঙ্গিমায় শোয়ার জন্য ঘাড়ে ব্যথা হয়। খুব বেশি উঁচু কিংবা শক্ত বালিশ নিয়ে ঘুমোবেন না।
২) অফিসে কাজ করতে করতে যখনই ক্লান্ত লাগবে, কাঁধে যন্ত্রণা হবে তখন চেয়ারে বসে না থেকে মিনিট দশেকের বিরতি নিন। হাঁটাহাঁটি করুন। হাতের ব্যায়াম করতে শুরু করুন।
৩) ‘লং ড্রাইভ’-এ যেতে অনেকেই পছন্দ করেন। তবে ফ্রোজ়েন শোল্ডার থাকলে একটানা অনেক ক্ষণ গাড়ি চালাবেন না, এতে সমস্যা বাড়বে।
৪) যতটা সম্ভভ নিজেকে মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখুন। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, চিন্তা বাড়লেই ঘুম কম হবে, ক্লান্তি থেকে ঘাড়ে ব্যথা হবে।
৫) এই সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যায়াম ছাড়া উপায় নেই। রোজ ঘুম থেকে উঠে ঘাড়ের হালকা ব্যায়াম করুন। তা হলে ঘাড় সচল থাকবে। এ ক্ষেত্রে যোগাসন ভীষণ কার্যকর। মার্জারাসন, সেতুবন্ধনাস, গরুড়াসন, গোমুখাসনের মতো আসন নিয়মিত করলে এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন।
প্রচণ্ড ব্যথা হলে কী করবেন?
১) প্রচণ্ড যন্ত্রণা হলে হালকা গরম জলে সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে চার-পাঁচ মিনিট স্নান করুন। স্নান করার সময়ে ঘাড় নাড়াচাড়া করবেন না। আস্তে আস্তে ঘাড়ের পেশিগুলি শিথিল হতে শুরু করবে।
২) ঘাড়ের ব্যথা যদি অসহ্য হয়ে ওঠে তা হলে আইস প্যাক চাপা দিয়ে রাখুন। সঙ্গে সঙ্গে আরাম পাবেন।
৩) ঘাড়ের উপর হিটিং প্যাড চেপে রাখুন। রক্ত সঞ্চালন বেড়ে ঘাড়ে ব্যথা কমবে।
সমস্যা বাড়াবাড়ির পর্যায় পৌঁছলে কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কাঁধের এক্স-রে করে প্রয়োজনে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।