ফিসচুলা
নামটি প্রায় সকলের কাছেই পরিচিত। শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে
অস্বাভাবিক নালিপথ সৃষ্টি হলে তাকে ফিসচুলা বলে। আর এই নালিপথ যদি নাকের ফুটো ও
মুখগহ্বরের মধ্যে তৈরি হয়, তবে তাকে বলা হয় নেজ়াল ফিসচুলা।
কী কী কারণে
হয় নেজ়াল ফিসচুলা?
-
জন্মগত
ভাবে: ইএনটি চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বললেন, “এগুলো
বেশির ভাগ সময়ে কনজেনিটাল বা জন্মগত। আমরা যখন মায়ের পেটে থাকি, নাক-মুখ
ইত্যাদির গঠন ফুলের পাপড়ির মতো থাকে। ছ’টা পাপড়ি জুড়ে নাক-মুখ-চোখ-কান
তৈরি হয়। মাঝে মাঝে এই জুড়ে যাওয়াটা ঠিকঠাক হয় না। তখনই একটি শিশু ক্লেফট
লিপ বা ক্লেফট প্যালেট নিয়ে জন্মায়। কখনও কানের সামনে ছোট্ট ফুটো থাকে। একই
ভাবে, নাকও অনেক সময় জোড়ে না। তখন শিশু প্রোবোস্কিস
বা এই ধরনের নেজ়াল ফিসচুলা নিয়েও জন্মাতে পারে।” আসলে নাকের গহ্বর
মুখগহ্বরের থেকে যে হাড়গুলি দ্বারা আলাদা থাকে, সেগুলি
যথাযথ ভাবে তৈরি হতে না পারলেই এই সমস্যা দেখা যায়। এ ছাড়া, জিনগত
পরিবর্তন, ফাইব্রাস ডিসপ্লেশিয়া, মিডফেশিয়াল
ডিসপ্লেশিয়ার কারণেও এই সমস্যা দেখা যেতে পারে। তবে ডা. দাশগুপ্তের কথায়, বিষয়টি
অত্যন্ত বিরল।
-
সংক্রমণের
ফলে: বিভিন্ন ফাঙ্গি যেমন মিউকরমাইকোসিস, রাইজ়োপাস
ইত্যাদির সংক্রমণে ম্যাক্সিলারি সাইনুসাইটিস বা ওই ধরনের অসুখে অনেক সময়েই
মুখগহ্বর ও নাসাগহ্বরের মধ্যে ফিসচুলা দেখা যায়।
-
আঘাতের
ফলে: কোনও দুর্ঘটনা বা আঘাতের ফলে
মুখ বা নাকের হাড় ভেঙে গেলেও অনেক সময়ে এই সমস্যা দেখা যায়। এ ছাড়া দাঁত
ভেঙে গেলে বা ডেন্টাল ইমপ্লান্ট ঠিক করার সময়ে নাসাগহ্বরের দিকে চলে গেলেও
নেজ়াল ফিসচুলা হতে পারে।
-
টিউমর
বা সিস্ট হলে: অনেক সময়ে ক্যানসার, টিউমর
বা সিস্টের কারণেও এই ধরনের ফিসচুলা দেখা যায়। নেজ়ো-প্যালাটাইন ডাক্ট সিস্ট, মিডিয়ান
প্যালেটাল সিস্ট, গ্লোবিউলোম্যাক্সিলারি সিস্ট, বেসাল
সেল কার্সিনোমা ইত্যাদির ফলে নাক ও মুখগহ্বরের মধ্যে নালিপথ তৈরি হতে পারে। এ
ছাড়া, কোনও অস্ত্রোপচারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও
দেখা যেতে পারে এই ধরনের নালিপথ।
-
রাইনোলিথিয়াসিস: এক্সোজেনাস (বালি বা পাথরের সূক্ষ্ম কণা, প্লাস্টিকের
কণা, বাতাসে ভাসমান বীজ, কাঠের
গুঁড়ো বা পোকামাকড়) বা এন্ডোজেনাস (দাঁতের টুকরো, মিউকোসা, ক্লট, মিউকোসা
নেক্রোসিস) ইত্যাদি নাসাগহ্বরের মধ্যে প্রবেশ করে বিজাতীয় বস্তু হিসেবে। এর
ফলে অ্যাসিমটোমাটিক মিনারেলাইজ়ড টিউমর হতে পারে। এই টিউমর আকারে বড় হলে তা
থেকে নাকের সেপ্টামে ফুটো হয়ে যাওয়া, নেজ়াল
ফিসচুলা ইত্যাদি হতে পারে।
কী ভাবে
নির্ণয় করা হয় এই সমস্যা?
চোখে দেখে
তো বটেই, এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি নাক ঝাড়ার সময় ওই ফিসচুলা
দিয়ে হাওয়া নির্গত হয়। এর পাশাপাশি, অক্লিউসাল রেডিয়োগ্রাফের সাহায্যও
নেওয়া হয়।
চিকিৎসা
ডা.
দাশগুপ্ত বললেন, “জন্মগত ভাবে নাকের ফুটোটাই যদি তৈরি না হয়, তা হলে
লাইফ-থ্রেটনিং বিষয় হয়। তার কারণ, বাচ্চারা একটা দীর্ঘ সময় স্রেফ নাক
দিয়েই শ্বাস নেয়। প্রয়োজনে ভেন্টিলেশনে দিতে হতে পারে। সুতরাং অস্ত্রোপচারের
মাধ্যমে নাকের ফুটো ঠিক স্থানে তৈরি করার চেষ্টা করা হয়। অস্ত্রোপচারে নাকের ফুটো
তৈরি হলেও অনেক সময়ে তা বুজে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে মায়েদের দেখিয়ে
দেওয়া হয় কী ভাবে ডায়ালেট করতে হবে।”
এ ছাড়া, কসমেটিক
সার্জারি ও বিশেষ কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে এই সমস্যার সমাধান করা হয়। ডা.
দাশগুপ্ত বারবারই জানালেন, এই সমস্যা অত্যন্ত বিরল। তবে সাবধানতা রক্ষায় নাক ও
মুখের যত্ন নেওয়া অবশ্যই উচিত।
ছবি: অমিত দাস; মডেল:
শুচিস্মিতা
সুর; মেকআপ: প্রিয়া গুপ্তা; লোকেশন: চৌধুরী ভিলা, কেয়াতলা লেন; ফুড পার্টনার: চাওম্যান
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)