হঠাৎ আমিষ ছাড়লে কতটা ক্ষতি হতে পারে?
বয়স বাড়ার সঙ্গে হাড়ের ক্ষয়ও বাড়ে। হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করতে গেলে খাওয়াদাওয়ার প্রতি বাড়তি নজর দিতেই হবে। হাড়ের প্রধান উপাদান ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস। এ ছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের খনিজ পদার্থ। বয়স বাড়লে হাড়ের ক্যালশিয়াম-সহ অন্যান্য উপাদানের ঘাটতি হয়। হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়। ফলে সামান্য চোট-আঘাতে হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অস্টিয়োপোরসিসের সমস্যায় ভুগতে হয় অনেককেই।
ঋতুবন্ধের পর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাব হয়। তাই হাড়ের ক্যালশিয়াম শোষণের ক্ষমতাও কমতে থাকে। হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার এটাই মূল কারণ। তাই মহিলাদের ক্ষেত্রে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকিও বাড়ে।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা নিরামিষ বা ভিগান খাবার খান, পর্যাপ্ত পুষ্টির ঘাটতির কারণে তাঁদের ক্ষেত্রে হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার সমস্যা বাড়ে। ইদানীং অনেকেই মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে ভিগান বা নিরামিষ খাবার খাওয়ার দিকে ঝুঁকছেন। তাঁদের দাবি, এতে স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। তবে গবেষণা কিন্তু অন্য কথা বলছে।
লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৩৫ থেকে ৬৯ বছর বয়সি ২৬,৩১৮ জন মহিলাদের নিয়ে সমীক্ষা করেন। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ নিরামিষাশী মহিলাদের নিতম্বের হাড়ে চিড় ধরা।
পুষ্টিবিদদের মতে, যাঁরা নিরামিষ খান, তাঁদের খাদ্যতালিকার উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। শরীরে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন-ডি ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি না হয়, সে দিকে নজর না দিলে বিপদ!
শরীরে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন-ডি ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি না হয়, সে দিকে নজর না দিলে বিপদ!
ডায়েট
অনেকেরই ধারণা, হাড়ের জন্য কিছু বাজারচলতি ক্যালশিয়ামের বড়ি খেলেই হাড়ের অনেকটা যত্ন নেওয়া হয়ে যায়। আদতে তা নয়। ক্যালশিয়ামের ওষুধ দীর্ঘ দিন খেলে কিডনিতে অতিরিক্ত ক্যালশিয়াম গিয়ে মজুত হয়, তাই তা জমে পাথরও হতে পারে। তাই ওষুধে ভরসা না করে খাবারদাবারে আস্থা রাখাই ভাল। হাড় সুস্থ রাখতে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, বোরন, ম্যাগনেশিয়াম, স্ট্রনটিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম-যুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। সাধারণত, দুগ্ধজাত খাবার থেকে শরীর অনেকটা ক্যালশিয়াম পায়। তাই দুধ, চিজ, ছানা, মাখন, দই অবশ্যই ডায়েটে রাখতে হবে। ল্যাকটোজে সমস্যা থাকলে সরাসরি দুধ না খেয়ে ছানা বা চিজ খান। যাঁরা ভিগান, তাঁদের ডায়েটে বেশি করে পালং শাক, সর্ষে শাক, ঢেঁড়শ রাখতে পারেন। এ ছাড়া খাদ্যতালিকায় রাখুন রাগি, সোয়াবিন, বাদাম।
শরীরচর্চা
পেশির শক্তি বাড়ে এমন কিছু ব্যায়াম এ ক্ষেত্রে খুব উপযুক্ত। হাঁটুর সমস্যা ইতিমধ্যেই শুরু না হলে দৌড়, হাঁটাহাঁটি, স্কিপিংয়ের মতো শরীরচর্চা রোজই করতে হবে। সাঁতার বা নাচ দুই-ই ভাল ব্যায়াম। কিন্তু ইতিমধ্যেই হাঁটুর ব্যথায় কাবু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই তাঁর বেছে দেওয়া কিছু ব্যায়াম প্রতি দিন অভ্যাস করুন।
রোদ পোহানো
যাঁরা অস্টিওপোরোসিসের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের প্রতি দিন অন্তত ২০ মিনিট রোদ পোহানো দরকার। সূর্যের আলো প্রবেশ করলে শরীরে ভিটামিন ডি এর মাত্রা বাড়ে। অস্টিওপোরোসিসের রোগীদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি ভীষণ জরুরি। হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন ডি।