—প্রতীকী চিত্র।
পেটের সমস্যায় এখন জর্জরিত ঘরে ঘরে প্রায় অধিকাংশ মানুষই। গ্যাস, অম্বল, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য… রোগের যেন শেষ নেই। সঙ্গে খিটখিটে মেজাজ। দিনের সব কাজ পণ্ড। সব সমস্যার সূত্রপাত সেই পেট থেকেই। পেট ঠিক থাকলে, মাথা থাকে শান্ত, দিন কাটে সুন্দর। পেটের যোগ সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গেও। আর এই পেটের মধ্যেই রয়েছে অন্ত্র। যাকে বলা হয়, শরীরের ‘দ্বিতীয় মস্তিষ্ক’। জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীর মণ্ডল বলছেন,“এক কথায় বলতে গেলে, দিনভর আমরা যা খাই, তার ‘কন্ট্রোল রুম’ এই অন্ত্র বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ট্র্যাক্ট (গাট)। শরীর ও মন সুস্থ রাখতে অন্ত্রের সুস্থ থাকা জরুরি।” মুখ থেকে শুরু করে খাদ্যনালি, পেট, অন্ত্র হয়ে মলদ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত গ্যাস্ট্রোইন্টেসটিনাল ট্র্যাক্ট।
সমস্যা কেন হয়?
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, নিয়মিত কৃত্রিম খাবার খাওয়ার অভ্যেস, শারীরচর্চার অভাবে নষ্ট হয় ‘গাট হেলথ’। খাবার থেকে ওষুধ, জল বাইরের যা কিছু খাবার আমরা খাই, তার সরাসরি সংস্পর্শে আসে অন্ত্র। ফলে নানা রকমের রোগে আক্রান্ত হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। পাশাপাশি অসময়ে খাওয়াদাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব ইত্যাদি কারণেও নষ্ট হতে পারে অন্ত্রের স্বাস্থ্য। তবে অন্ত্রের নিজস্ব কিছু রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও আছে। রয়েছে কিছু উপকারী অণুজীব, যা বাইরে থেকে আসা ক্ষতিকর ব্যাক্টিরিয়াকে নিষ্ক্রিয় করে সুস্থ রাখে শরীর। এই ভাল-খারাপ ব্যাক্টিরিয়ার সমতা নষ্ট হলেও কিন্তু অন্ত্রে সমস্যা হয়। মুশকিল হল, অধিকাংশ মানুষ প্রাথমিক ভাবে এ বিষয়ে আমল দেন না। ফলে দেখা দেয় হজমশক্তি, পাচনতন্ত্রে সমস্যা।
মস্তিষ্ক এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এর মধ্যে যে কোনও একটায় সমস্যা হলেই, তার প্রভাব অন্যটার উপরে পড়ে। ফলে অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণেও অনেক সময়ে অন্ত্রের সমস্যা হয়। ডা. মণ্ডলের কথায়, “এর ফলস্বরূপ পেটের গণ্ডগোলের সঙ্গে ক্লান্তি, অবসাদ, মুড সুয়িং, একাগ্রতার অভাব ইত্যাদি দেখা দেয়।”
উপসর্গ
অন্ত্রের সমস্যায় সাধারণত গা গোলানো, বমি হওয়া, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া এ ধরনের সাধারণ উপসর্গ দেখা যায়। গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট ডা. অর্ক মুখোপাধ্যায় বলছেন, “এ ক্ষেত্রে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শরীর নিজেই রোগ প্রতিরোধ করে ফেলতে পারে। ডায়রিয়া হওয়া এক অর্থে ভাল। এর ফলে শরীর থেকে ক্ষতিকর জিনিস বেরিয়ে যেতে পারে। তাই এ সময়ে কেবল ওআরএস খেলেই হয়। সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তা ছাড়া, অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অন্ত্রে থাকা ভাল ব্যাক্টিরিয়াও মরে যেতে পারে। তাই অ্যান্টিবায়োটিক যতটা সম্ভব কম খাওয়াই ভাল।”
তবে এ তো গেল সাধারণ অসুখের কথা। এ ছাড়া অন্ত্রে টিবি, ক্রোন ডিজ়িজ়, আলসার ইকোলাইটিস-এর মতো গুরুতর কিছু সমস্যাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু সাত দিনেও সাধারণ সমস্যা না কমলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অন্ত্র ভাল রাখার মন্ত্র
অন্ত্র ভাল রাখতে পারলেই সব পেটের অসুখকে সহজেই বিদায় জানানো যায়। তার জন্য গাট-এর খেয়াল রাখতে পারে কিছু খাবার।
এড়িয়ে চলুন
রোজকার জীবনে সুস্থ থাকতে অন্ত্রের যত্ন নিতে হবে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় সামান্য কিছু বদল আনলেই কিন্তু অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখা সম্ভব। সঙ্গে দরকার সচেতনতা ও সময় মতো চিকিৎসকের পরামর্শ।