শিশুর ওজন ঝরাতে বাবা-মায়েরা কী কী নিয়ম মেনে চলবেন? ছবি: সংগৃহীত।
আধুনিক জীবনে ব্যস্ততার ছায়া কেবল বড়দের উপরেই পড়েনি, ছেলেবেলা থেকে জীবনের ইঁদুরদৌড়ে নেমে পড়েছে বাড়ির খুদে সদস্যরাও। কেবল পড়াশোনা করলেই তো হবে না, পাশাপাশি নানা গুণে পারদর্শী হয়ে উঠতে গিয়ে তাদের হাতে সময়ের বড় অভাব। কখনও সিলেবাসের চাপে রাতের ঘুম ঠিকঠাক হচ্ছে না, কখনও আবার মা-বাবার প্রত্যাশার বহর চেপে বসছে শিশুর কাঁধে। এ সব মিলিয়ে ডেকে আনছে খাওয়ার অনিয়ম, কম ঘুমের মতো অভ্যাস। যার জেরে স্থূলত্ব তাড়া করে বেড়াচ্ছে অকালেই।
খুদের বাড়তি ওজন টাইপ টু ডায়াবিটিস, পিসিওডি (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম), হরমোনের ভারসাম্যহীনতার মতো নানা শারীরিক সমস্যা ডেকে আনতে পারে। অতিরিক্ত স্থূলতা শিশুর শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যারও কারণ হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে শিশুর ওজনের দিকে বাবা-মায়েদের বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন। সুস্থ জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে শিশুর স্থূলতার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
শিশুর ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী করবেন বাবা-মায়েরা?
১) শিশুরা শাকসব্জি খেতে বিশেষ ভালবাসে না। পরিবর্তে ভাজাভুজি, মিষ্টি জাতীয় খাবার, বাইরের খাবারই তাদের বেশি পছন্দ। এ ধরনের খাবারগুলি সব বয়সের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। বাচ্চাদের বেশি করে শাকসব্জি, ফলমূল খাওয়ান। পুষ্টিবিদের কাছে যান শিশুকে নিয়ে। ওর নির্দিষ্ট বয়সে ডায়েট চার্ট ঠিক কেমন হবে, তা মেনে চলুন তাঁদের পরামর্শ মতো। ডায়েট মানেই শিশুর সব প্রিয় খাদ্য বাদ, এমন নয়। চাইল্ড ডায়েটে চকোলেটও থাকে। তাই ভয় নেই। কেবল পরিমাণের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
২) খুদের বায়না মেটাতে যখন-তখন তাঁকে নুডল্স বা হিমায়িত খাবার এনে বানিয়ে দেওয়ার অভ্যাস থাকলে তাতে রাশ টানুন। প্যাকেটবন্দি স্যুপ ও নরম পানীয় থেকেও দূরে রাখতে হবে খুদেকে। এ সবে থাকা অতিরিক্ত চিনি, রাসায়নিক পদার্থ, সোডিয়াম শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই বাড়িতে তৈরি খাবারের উপর জোর দিন। টিফিনকে মুখরোচক করে তুলতে নতুন নতুন চটজলদি রান্নার রেসিপির খোঁজ করুন।
৩) সারা ক্ষণ খুদেকে বই নিয়ে বসিয়ে রাখলে হবে না, বাইরে খেলতেও পাঠাতে হবে। অন্যান্য গুণে দক্ষ করে তুলতে গিয়ে ওর খেলাধুলো করার সময়টা কেড়ে নেবেন না। কাছেপিঠে খেলার মাঠ সে ভাবে না থাকলে বা খেলার সঙ্গী না পেলে যে কোনও যোগাসনের ক্লাসে বা সাঁতারে ভর্তি করিয়ে দিতে পারেন। না হলে ওপর পছন্দ অনুযায়ী কোনও খেলার ক্লাসেও ওকে ভর্তি করাতে পারেন। তবে এগুলিকেও প্রতিযোগিতার ছলে নিলে চলবে না।
৪) স্কুলে পড়াকালীন শিশুর বুদ্ধি ও দেহের বিকাশ ঘটে। তাই এই সময়ে ঘুমের সঙ্গে কোনও রকম আপস করলে চলবে না। যতই পরীক্ষার পড়াশোনার চাপ থাকুক না কেন, ওর ঘুম যেন কোনও ভাবেই সাত-আট ঘণ্টার কম না হয়, সে দিকে নজর দিতে হবে।
৫) খুদেকে বেশি করে জল খাওয়ার অভ্যাস করাতে হবে। জল খেলে বিপাকহার নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিপাকহার নিয়ন্ত্রণে থাকলে ওজনও বাগে রাখা সম্ভব। শরীরে জলের ঘাটতি হলে শরীর জল জমিয়ে রাখতে শুরু করে, এতেও চেহারা ফুলে যায়।