এন্ডোমেট্রিয়োসিসের উপসর্গ কী? ছবি: শাটারস্টক
ঋতুস্রাবের পেটের ব্যথায় অনেক মহিলাই ভোগেন। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে সেই ব্যথা যেন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পাঁচ থেকে সাত দিন আগে যন্ত্রণা হচ্ছে। চিকিৎসকের কথায়, এগুলি এন্ডোমেট্রিয়োসিসের লক্ষণ। এই রোগ থাকলে সন্তানধারণে সমস্যা হয়। তাই এর লক্ষণ দেখা দিলেই বাড়তি সতর্কতা নিতেই হবে।
জরায়ুর ভিতরের একটি স্তর হল এন্ডোমেট্রিয়াম। প্রতি মাসে জরায়ুর এই এন্ডোমেট্রিয়াম অংশের স্তর খসেই ঋতুস্রাব হয়। সেই রক্ত সন্তানপ্রসবের পথ দিয়ে জরায়ু থেকে বেরিয়ে শরীরের বাইরে চলে আসে। কিন্তু এন্ডোমেট্রিয়াম জরায়ুর বাইরে তলপেটের যে কোনও জায়গায় বা শরীরের অন্য কোথাও চলে এলে তাকে বলে এন্ডোমেট্রিয়োসিস। শরীরের অন্য কোথাও এন্ডোমেট্রিয়াম চলে গেলে সেখানে ওই স্তর খসে যে রক্তপাত হয়, তা বেরোতে না পেরে সেই স্থানেই জমাট বাঁধতে শুরু করে। আশপাশের কোষগুলিতে চাপ তৈরি হয়। এর থেকে সিস্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ডিম্বাশয়ে, তলপেটের পিছনে, মূত্রথলিতে, বর্জ্য নির্গমনের পথে, সন্তান নির্গমনের পথের গোড়ায় এন্ডোমেট্রিয়াম বেশি দেখা যায়। এই রোগকেই বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়োসিস।
কেন হয় এই রোগ?
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এন্ডোমেট্রিয়োসিসের অন্যতম কারণ। প্রধানত ‘জাঙ্ক ফুড’ বা বাইরের ভাজাভুজি, তেল-মশলাদার খাবার খাওয়ার ফলে অন্ত্রের ভাল ব্যাক্টেরিয়া নষ্ট হয়ে যায় ও খারাপ ব্যাক্টেরিয়া তৈরি হয়। খারাপ ব্যাক্টেরিয়া অন্ত্রের কোষে কোষে সংক্রমণ ঘটায়। এই কোষগুলি এন্ডোমেট্রিয়োসিস কোষে পরিবর্তিত হয়ে যায়। চিকিৎসকদের মতে মানসিক চাপ ও তার ফলে খাওয়াদাওয়ার অনিয়মেও এই রোগের বাড়বাড়ন্ত হয়।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে আগে থেকেই সতর্ক হবেন?
১) ঋতুস্রাব চলাকালীন অনেকেরই পেটে তীব্র যন্ত্রণা এই রোগের প্রধাণ লক্ষণ। স্বাভাবিক যন্ত্রণার তুলনায় এন্ডোমেট্রিয়োসিসের সমস্যা থাকলে ঋতুস্রাবকালীন ব্যথা বহু গুণ বেড়ে যায়। এমনকি ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগে ও শেষ হওয়ার পরে বেশ কিছু দিন পর্যন্ত এই ব্যথা থাকে। ব্যথা হয় তলপেট ও কোমরেও।
সব সময়ে না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এন্ডোমেট্রিয়োসিসের সমস্যা থাকলে রোগীর সন্তানধারণে সমস্যা তৈরি হয়। ছবি: শাটারস্টক
২) এন্ডোমেট্রিয়োসিসের ফলে যৌন মিলনের সময়ে ব্যথা হতে পারে। মিলনের পরেও এই ব্যথা বেশ কিছু দিন থাকে। এ রকম উপসর্গ দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩) এন্ডোমেট্রিয়োসিস থাকলে মলত্যাগ করার সময় ও প্রস্রাব করার সময় তলপেটে যন্ত্রণা হতে পারে।
৪) সাধারণ ঋতুস্রাব তিন থেকে পাঁচ দিনের হয়। এন্ডোমেট্রিয়োসিসের সমস্যা থাকলে ঋতুস্রাবের সময়ে অতিরিক্ত রক্তপাত দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে ঋতুস্রাব হয়। দু’মাসের ঋতুস্রাবের নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে ‘ইন্টারমেন্সট্রুয়াল ব্লিডিং’-ও হতে পারে।
৫) সব সময়ে না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এন্ডোমেট্রিয়োসিসের সমস্যা থাকলে রোগীর সন্তানধারণে সমস্যা তৈরি হয়। একাধিক বার চেষ্টা করেও সফল না হলে চিকিৎসকের সঙ্গে এই বিষয় কথা বলুন।