হৃদ্যন্ত্রের স্বাস্থ্য হাল রাখতে পুষ্টিবিদরা ডায়েটে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রাখার পরামর্শ দেন। ছবি: শাটারস্টক
সুস্থ থাকতে হলে রোজের ডায়েটে পুষ্টির সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা ভীষণ জরুরি। সুস্বাস্থ্য পেতে যেমন প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাটের প্রয়োজন রয়েছে, তেমনই ভিটামিন, খনিজ ও ফ্যাটি অ্যাসিডের সঠিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে।
অসুখবিসুখের সঙ্গে লড়াই হোক বা চোখ-হাড়ের যত্ন, ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতি বিনা সবই প্রায় অসম্পূর্ণ। ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদা তাই বরাবরই তুঙ্গে। শরীরের ভিতরে নানা কাজকর্ম চালাতে যে সব পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রয়োজন হয়, তার মধ্যে অন্যতম এই ওমেগা-থ্রি।
শরীরের প্রয়োজনীয় ওমেগা-থ্রি’র চাহিদা মেটাতে খাওয়ার পাতে নজর দিতে বলেন চিকিৎসকরা। কাতলা, লটে, বাগদা চিংড়ি, কই মাছে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতি বিপুল পরিমাণে থাকে। ওমেগা-থ্রি-র চাহিদা মেটাতে অনেকেই এই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ক্যাপসুলও খেয়ে থাকেন।
যে হেতু অন্যান্য ফ্যাটের মতো শরীর ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আলাদা করে শরীর তৈরি করতে পারে না, তাই এই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডকে বাইরের খাবারদাবার বা ক্যাপসুল থেকেই গ্রহণ করতে হয়। কেবল শরীরেরই নয়, মনের স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে এই অ্যাসিড। সামুদ্রিক মাছ এর প্রধান উৎস হলেও আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড গোত্রের ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডদের পাওয়া যায় কিছু সব্জি, সয়া ও ক্যানোলা তেলেও।
ওমেগা-থ্রি নিয়মিত খেলে দূরে রাখা যায় অনেক অসুখবিসুখ। কী কী সে সব?
১) সারা ক্ষণ মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের পর্দার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখের সমস্যায় ভুগছেন কমবেশি সবাই। ডিএইচএ জাতীয় ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব হলেও চোখের উপর প্রভাব পড়ে। রেটিনার সমস্যা, ম্যাকিউলার ডিজেনারেশনের মতো স্থায়ী চোখের অসুখ, ক্ষীণ দৃষ্টির সমস্যা এড়াতে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড খুবই প্রয়োজনীয়।
২) শিশুদের অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি)-এর মতো বিহেভিওরাল ডিজঅর্ডারের অন্যতম কারণ ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব। মনোযোগের অভাব, শিশুদের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মতো নানা সমস্যার দাওয়াই ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য মায়ের ডায়েটে বেশি করে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রাখার কথা বলা হয়।
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার। ছবি: শাটারস্টক
৩) শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতেও ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ভূমিকা রয়েছে। কোষের ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করতে সাহায্য করে এই অ্যাসিড। নষ্ট হয়ে যাওয়া কোষগুলিকে সরিয়ে সেখানে নতুন কোষ তৈরি ও তা বিভাজনে বিশেষ সহযোগিতা করে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।
৪) বিষাদ, একটানা কোনও ভয়, স্নায়বিক দুর্বলতার কারণেও হতাশা ও মানসিক উদ্বেগের জন্ম হয়। ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের এই সমস্যারও সমাধান করতে পারে। অবসাদ কাটাতে সাহায্য করে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। কর্মব্যস্ত জীবনে মানসিক ভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন সকলেই। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দাওয়াই হতে পারে।
৫) হৃদ্যন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও পুষ্টিবিদরা ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রাখতে বলেন। এখন ঘরে ঘরে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। তাই ডায়েটে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা।