উত্তেজনা ও মানসিক চাপেই বাড়ে হৃদ্রোগের ঝুঁকি, বাঁচবেন কী করে? ছবি: শাটারস্টক।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার কারণে হাজারটা রোগ। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস বা শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলির উপর তার প্রভাব পড়ে। চিকিৎসকেরা বলছেন, জীবনধারার এই পরিবর্তনের ফলে মধ্যবয়সিদের মধ্যেও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে দেখতে তিরুপতির বাসিন্দা বছর ৩৫-এর এক ইঞ্জিনিয়ারের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুতে ঘুরেফিরে আসছে সেই সচেতনতার কথা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’ যে কোনও বয়সেই হতে পারে। তবে আগে থেকে কিছু বিষয়ে সচেতন থাকলে এই ধরনের সমস্যা এড়িয়ে চলা যায়।
এখন অধিকাংশ মানুষ যে ভাবে জীবনযাপন করেন, তাতে কার্ডিয়ো ভাসকুলার রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি বলে মনে হয়। ধূমপান ও স্থূলত্ব এই রোগের অন্যতম বড় কারণ। এই রোগের ঝুঁকি এড়াতে জীবনধারায় বদল আনা জরুরি। জেনে নিন কী ভাবে এই রোগের ঝুঁকি এড়িয়ে চলবেন।
ডায়েটে নজর
মাছ-মাংস খেতে ভাল লাগলেও রোজ বেশি করে সবুজ শাক-সব্জি ও ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে হবে। খাদ্যতালিকায় ওটমিল, ব্রাউন রাইস, বিন্স, মুসুর ডাল, বাদাম, বীজ ও নানা ধরনের ফল রাখুন। অত্যধিক তেলযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, নোনতা খাবার, ভাজাভুজি এড়িয়ে চললেই হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমবে।
রোজ শরীরচর্চা
ওজন বেড়ে যাওয়া কিংবা ওবেসিটির মতো সমস্যা থেকেও কিন্তু হৃদ্রোগের আশঙ্কা থেকে যায়। তাই এ সব থেকে দূরে থাকতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। সময় না হলে অন্তত আধ ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করুন। তবে প্রতি দিন নিয়ম মেনে করতে হবে। হাঁটার সময়ে হাতে পরে নিন ফিটনেস ট্র্যাকার, কতটা হাঁটছেন কিংবা কত ক্যালোরি ঝরাচ্ছেন, দেখা যাবে সেখানেই।
রাত জাগা নয়
রাতে ঠিক মতো ঘুম না হলে কিন্তু হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। ফলে স্ট্রোক, হার্টফেল করার সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত যদি ঠিক মতো ঘুম না হয়, তা হলে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ ভাল মতো হয় না। কাজেই শরীর তখন স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ ঘটায়, যার ফলে হৃদ্রোগের আশঙ্কা থাকে। তাই রাতে ওয়েব সিরিজ় বা সিনেমা না দেখে সময় মতো ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস করুন। রাত জেগে পার্টি করার অভ্যাস থাকলে জীবনধারায় বদল আনুন। রোজ রোজ রাত জেগে পার্টি নয়।
মানসিক উদ্বেগ কমান
পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে, কাজের সূত্রে কিংবা পারিবারিক কারণে বিভিন্ন বিষয় নিয়েই আমরা অত্যধিক চাপে থাকি। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি তো বাড়েই, সেই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, বেশি খাওয়া, ধূমপান, ঘুমের সমস্যা, ক্লান্তি দেখা দেয়। সেই জন্য কোনও ধরনের মানসিক চাপ বা উদ্বেগকে প্রশ্রয় না দেওয়ার চেষ্টা করুন। মনোসংযোগ বাড়াতে ধ্যান কিংবা প্রাণায়াম করতে পারেন। কাজের ফাঁকেও সময় বার করে নিজের পছন্দের কাজগুলি করুন। বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান।
ধূমপান ছাড়ুন
সিনেমা হলে বার বার এই সতর্কবার্তা দেখেও আমরা অনেকেই বিষয়টিতে কর্ণপাত করি না। অথচ ধূমপান করলে হৃদ্যন্ত্রের ধমনী সংলগ্ন কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমনকি রক্ত জমাট বেঁধে যায়। অতিরিক্ত ধূমপান করলে বাড়ে হৃদ্স্পন্দনও। তাই হৃদ্রোগ থেকে দূরে থাকতে ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন।