কোন সময়ে কী খাবেন, পুষ্টিবিদের পরামর্শ জেনে নিন। প্রতীকী ছবি।
ওজন কমানো শুধু নয়, শরীর সুস্থ রাখতেও সুষম ডায়েট জরুরি। কী খাচ্ছেন এবং কতটা খাচ্ছেন, তার উপরেই সুস্থতা নির্ভর করবে। খাওয়ার সময়ও কিন্তু একই ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ব্যস্ত জীবনে নিজের জন্য সময় বার করাই সবচেয়ে কঠিন। কাজ করতে করতে কখন যে সময় পেরিয়ে যায়, খেয়াল থাকে না। হয় দীর্ঘ সময় পেট ফাঁকা থাকে, না হলে এক বারে অনেক বেশি খেয়ে ফেলা হয়। তাই ঘড়ির কাঁটা মিলিয়েই খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা। আর অবশ্যই সেই খাওয়া হওয়া চাই পরিমাণ বুঝে।
কখন কতটা খাবেন?
ওজন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল সময়ে না খাওয়া। তাই রোগা হওয়ার ডায়েটে শুধু ক্যালোরিহীন খাবার রাখলেই হবে না, সময় ভাগ করেও খেতে হবে। মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডলের কথায়, সকালে বিপাক প্রক্রিয়া সবচেয়ে ভাল হয়। যত বেলা গড়ায়, ততই এর হার কমতে থাকে। তাই সব সময়েই প্রাতরাশ ভারী করতে হয়। দুপুরের খাওয়া পরিমিত ও রাতের খাওয়া একদমই হালকা করা দরকার। বাইরের দেশে অনেকেই সন্ধে ৭টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নেন। এখানে তার চল তেমন নেই। রাত ১০টার পরেও ভারী খাবার খান বাঙালিরা। আর তাতেই যেমন ওজন বাড়ে, তেমনই গ্যাস-অম্বলের সমস্যাও বৃদ্ধি পায়।
পুষ্পিতার কথায়, রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে রাতের খাবার খাওয়া উচিত। ঘুমোতে যাওয়া ও খাওয়ার মধ্যে অন্তত ৩ ঘণ্টার ব্যবধান থাকতেই হবে। দুপুরের খাওয়া ১২টার মধ্যে সেরে নিতে হবে। প্রাতরাশ সকাল ৮টার মধ্যে করলে ভাল হয়। প্রাতরাশ ও দুপুরের খাওয়ার মাঝে হালকা কিছু খেতেই হবে।
কী কী খাবেন?
পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী পরামর্শ দিচ্ছেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে সবচেয়ে আগে জরুরি ডিটক্স পানীয়। ছোট ছোট করে ফল কেটে তা সারা রাত জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে খাওয়া যেতে পারে।
চা বা কফি খেলে দুধ-চিনি ছাড়া খেতে হবে, সঙ্গে তিন থেকে চারটি ভেজানো কাঠবাদাম খেতে পারেন। শুকনো খোলায় ভাজা ছোলাও চলবে। কিন্তু, বিস্কুট বা কুকিজ় খাবেন না।
চা বা কফি না খেলে তার বিকল্প হিসাবে ডবল টোন্ড দুধ খেতে পারেন। প্রাতরাশে দুধ-কর্নফ্লেক্স, দুধ-ওট্স বা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দোসা, ইডলি, পোহা খাওয়া যেতে পারে। মুখরোচক কিছু খেতে ইচ্ছে হলে, ওট্সের অমলেট বা চিলা ভাল লাগবে। ওট্স গুঁড়ো করে নিয়ে তার সঙ্গে গাজর, বিনস, ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ কুচি মিশিয়ে খুব কম তেলে ননস্টিক প্যানে ভেজে নিতে পারেন।
‘মিড-মর্নিং’ বা মাঝামাঝি সময়ের খিদে মেটাতে সবচেয়ে ভাল হল ফল খাওয়া। যে কোনও মরসুমি ফল খেলে ভাল হয়। পেঁপে, পেয়ারা, আপেল, শশা সব সময়েই খেতে পারেন। এই সময়টাতে ভাজাভুজি বা স্ন্যাকস খেয়ে ফেললেই মুশকিল। ডায়েটে আর কোনও উপকারই হবে না।
দুপুরের আর রাতের খাওয়া পরিমিত করাই উচিত। ভাত বা রুটি খেতে পারেন। সঙ্গে সব্জি, আর যে কোনও এক রকম প্রোটিন। চিকেন খেলে সব্জি দিয়ে চিকেন স্ট্যু, মাছ খেলে হালকা ঝোল। যদি নিরামিষ খান, তা হলে সয়াবিন বা পনির, ছানা খেতে পারেন। তবে একদিনে মাছ, মাংস বা ডিম অথবা পনির মিলিয়ে খাবেন না।
বিকেলের দিকে হালকা কিছু খেতেই হবে। ছাতু, অথবা দই-খই বা দুধ-কর্নফ্লেক্স খেতে পারেন। একটি বা দু’টি মরসুমি ফল কেটে নুন-গোলমরিচ দিয়ে খেয়ে দেখুন, মন্দ লাগবে না। কিন্তু, কোনও ভাজাভুজি খাওয়া চলবে না।