দৈনন্দিন ডায়েটে কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত করা দরকার হতে পারে
বছরের শুরুতেই অতিমারি আবার আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। শুধু সংক্রমণের ভয়েই নয়, কোভিড-মুক্ত হওয়ার পরেও শরীরকে চাঙ্গা করতে চিকিৎসকরা নানা রকম পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষ করে আমাদের দেশের মহিলাদের এই পরামর্শ মেনে চলা বিশেষ প্রয়োজন। কারণ রক্তাল্পতা, মধুমেহ, হাড়ের বা স্নায়ুর সমস্যা একটা বয়সের পর নারীর শরীরকে অসুস্থ করে তোলে। তার উপর সংক্রমণের ভয় তো রয়েছেই। শরীর সুস্থ রাখতে তাই কখনও কখনও বাড়তি ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজের উপর ভরসা করতে পারেন মহিলারা। কারণ এই দুই ধরনের উপাদানের ঘাটতি হলে শরীর ক্লান্ত এবং অসুস্থ হয়ে পড়বে। অনাক্রম্যতাও হ্রাস পাবে ভীষণ ভাবে। ফলে মহিলাদের দৈনন্দিন ডায়েটে কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত করে ফেলা অবশ্য প্রয়োজনীয়।
ভিটামিন এ
ভিটামিন এ একটি চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন যা রেটিনল নামেও পরিচিত। নির্দিষ্ট পরিমাণে মহিলাদের শরীরে এই ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। এই ভিটামিন অনেক দুগ্ধজাত দ্রব্য এবং হলুদ বা কমলা রঙের ফল ও সব্জিতে থাকে। ভিটামিন এ হার্ট, ফুসফুস এবং কিডনির স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টক্সিনের বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্বককে সুস্থ রাখে এবং হাড় ও দাঁত মজবুত করে।
ভিটামিন সি
ভিটামিন সি হল একটি জলে দ্রবণীয় ভিটামিন যার মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে— যা সংক্রমণ এবং নারীদেহের দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এই সময়ে যখন সংক্রমণের হার বেশি এবং কোভিড স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে, তখন এমন খাবার খাওয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সাইট্রাস ফল, স্ট্রবেরি, ব্রকোলি, লাল এবং সবুজ ক্যাপসিকাম, কিউয়ি এবং আরও অনেক ফল এবং সব্জি মহিলাদের খাওয়া প্রয়োজন যা ভিটামিন সি জোগান দিতে সক্ষম।
শরীর সুস্থ রাখতে বাড়তি ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজের উপর ভরসা করতে পারেন মহিলারা
ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি একটি চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন যা নারী শরীরের অনাক্রম্যতা বাড়াতে বিশেষ সাহায্য করে, হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং পেশি কোষগুলির বিকাশের দেখাশোনা করে। এটাকে বলা হয় এক ধরনের হরমোন যা সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে ত্বক থেকে উৎপন্ন হয়। সূর্যালোক ছাড়াও, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজনীয় পুষ্টির একটি ভাল উৎস হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তার এবং পেশাদারদের দ্বারা নির্ধারিত হলে, সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট কখনও কখনও অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতার জন্ম দিতে পারে। ফলে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এই ধরনের সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত নয়।
আয়রন
আয়রন বা লৌহ অনেক শারীরিক ক্রিয়াকলাপের চাবিকাঠি ধারণ করে। হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি, মায়োগ্লোবিন তৈরি করতেও সাহায্য করে এটি। আমাদের দেশের মহিলারা বেশির ভাগ সময়েই ভোগেন রক্তাল্পতায়। দেহে রক্ত সঞ্চালনের মূল অনুঘটক কিন্তু এই আয়রনই। এই বিশেষ খনিজটির অভাব শরীরে চরম ক্লান্তি এবং দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, এটি শ্বাসকষ্ট এবং রক্তাল্পতার মতো অবস্থার কারণও হতে পারে। এর জন্য মেয়েদের মরসুমি ফল এবং প্রোটিন খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ক্যালশিয়াম
ক্যালশিয়াম স্বাস্থ্যকর হাড়ের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় একটি খনিজ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের শরীরে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে বিভিন্ন খাদ্য বা ওষুধ দরকার হয়। বেশির ভাগ দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দুধ, পনির, দই এবং পালং শাক, সয়াবিন ক্যালশিয়ামের ভাল উত্স। ক্যালশিয়াম নারী শরীরের পেশির কার্যকারিতায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, হরমোন নিঃসরণে, হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে ক্যালশিয়াম। এ ছাড়াও বয়স্ক মহিলাদের অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
ম্যাগনেশিয়াম
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে পৃথিবীতে প্রায় প্রতি সাত জন মহিলার মধ্যে এক জনের হৃদ্রোগ রয়েছে এবং প্রায় দশ জনের মধ্যে একজনের ডায়াবিটিস রয়েছে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে না দিয়ে ম্যাগনেশিয়াম উভয় রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। এই মিনারেল মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পালং শাক, গোটা শস্য, মটরশুঁটি এবং বাদাম ম্যাগনেশিয়ামের জরুরি কিছু উৎস। এ ছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে প্রয়োজনে।