স্ট্রোকের কী কী লক্ষণ ফুটে ওঠে চোখে? প্রতীকী ছবি।
কথা বলতে বলতে আচমকা জিভ অবশ হয়ে গেল, হাত তুলে বোঝানোর চেষ্টা করতে গিয়ে দেখলেন হাত তোলাও অসম্ভব। শরীরের এক পাশ অসাড় হয়ে গেল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার সব আগের মতোই স্বাভাবিক। তাই সে যাত্রায় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা মাথাতেই এল না। পরে আচমকাই একদিন বড়সড় স্ট্রোকের ধাক্কা প্রাণসংশয় বাড়িয়ে দিল।
স্ট্রোক এমনই এক অসুখ, যার লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রেই আগে থেকে বোঝা যায় না। তবে গবেষণা বলছে, বড়সড় স্ট্রোকের ধাক্কা আসার আগে কিছু উপসর্গ ফুটে ওঠে চোখে। সাধারণ মানুষ তা বুঝতে না পারলেও, যদি নিয়ম করে চক্ষুপরীক্ষা করানো হয়, তা হলে বিপদের ঝুঁকি কমতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ সিডনির গবেষকেরা স্ট্রোক সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন দীর্ঘ সময় ধরেই। নানা গবেষণাপত্র তাঁরা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সময়ে। ‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ নিউরোলজি’ নামক জার্নালে একটি গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে যেখানে গবেষক পল মিশেল বলেছেন, স্ট্রোকের কিছু লক্ষণ ফুটে ওঠে চোখে। যেমন, যে কোনও এক দিকের চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হতে শুরু করবে, মনে হবে চোখের সামনে বড় কালো ছাপ তৈরি হয়েছে বা রেখা ফুটে উঠছে। চোখ লালও হয়ে উঠতে পারে। এগুলি প্রাথমিক লক্ষণ।
অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষকে নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয় গত কয়েক বছর ধরে। যাঁদের বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। গবেষক মিশেল জানিয়েছেন, যাঁদের চোখের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা গিয়েছে, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়েছে, তাঁদেরই একটি বড় অংশের ‘ব্রেন স্ট্রোক’ হতে দেখা যায় পরবর্তী সময়ে।
এই বিষয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক দিলীপ কুমার জানিয়েছেন, কয়েক মিনিট এ রকম কথা বলতে না পারা, হাত বা পা অসাড় হয়ে যাওয়া অথবা চোখে অন্ধকার দেখার মতো ঘটনাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে ‘ট্র্যানসিয়েন্ট ইসকিমিক অ্যাটাক’ বা ‘টিআইএ’। সাধারণ ভাবে একে ‘মিনি স্ট্রোক’ বলা যায়। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে এই স্ট্রোক হয়। এর প্রভাব পড়ে চোখেও। মস্তিষ্কে যখন রক্ত জমাট বাঁধছে বা ব্লকেজ হচ্ছে, তখন চোখের রক্তজালিকাগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। কিছু ক্ষেত্রে রক্তনালি ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণও হতে পারে। তখন চোখ লাল হয়ে উঠবে, ফুলে যাবে, দৃষ্টিও ঝাপসা হতে থাকবে। আবার যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও চোখের রোগ দেখা দিতে পারে।
তা কী রকম? চিকিৎসক জানাচ্ছেন, উচ্চ রক্তচাপ গ্লুকোমা, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ইত্যাদির মতো সমস্যাগুলির কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ যদি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন ‘হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি’ হতে পারে। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে রেটিনার রক্তনালিগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন অবস্থা তৈরি হলে সাবধান হতেই হবে। কারণ উচ্চ রক্তচাপই পরবর্তী সময়ে হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, ডায়াবিটিস হলেও কিন্তু রেটিনোপ্যাথি হয় অনেকের। কিন্তু হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকের ক্ষেত্রে আরও কিছু লক্ষণ খেয়াল করতে হবে। যেমন, কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়বে। চোখের উপরের পাতার চারপাশে সাদা মাংসপিণ্ড তৈরি হবে, অকালেই ছানি পড়তে পারে। চোখের সামনে কালো পর্দার মতো দেখবেন রোগী, চোখে যন্ত্রণাও হতে পারে। এমনও দেখা গিয়েছে, রোগী একদম সোজাসুজি কোনও জিনিস স্পষ্ট দেখলেও, আশপাশের জিনিস ঝাপসা দেখছেন। এমন হলে দেরি না করেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।