পার্কিনসন্সের লক্ষণগুলি কী কী? ছবি: সংগৃহীত।
ক্রমাগত মানসিক চাপ, ক্লান্তি থেকে বাড়ছে স্নায়ুর জটিল অসুখ পার্কিনসন্স। তথ্য বলছে, গোটা পৃথিবীতেই এই রোগের প্রকোপ ক্রমবর্ধমান। ‘ফ্রন্টিয়ার্স’ নামে একটি জার্নালে প্রকাশ, আগাম এই রোগ চিহ্নিত করা গেলে চিকিৎসার পরিসরও বেশি থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অসুখ চিহ্নিত হতেই অনেকটা সময় লাগে। এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে হাত-পা কাঁপার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। যত দিন যায় ততই তা বাড়তে থাকে। একসময় দৈনন্দিন কাজকর্ম করাও কঠিন হয়ে পড়ে। আর কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন এমন অসুখ হতে পারে?
উদ্বেগ, মেজাজ বদল
ক্রমাগত উদ্বেগ, খারাপ চিন্তা, মুহূর্তের মধ্যে মেজাজ বদল কিন্তু স্নায়বিক এই জটিল অসুখের সূত্রপাত হতে পারে। ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের গবেষকেরা দাবি করেছেন, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়, তা হলে তা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলির উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে। যার ফলে, স্নায়বিক রোগটির ঝুঁকি বেড়ে যায়। একসময় মস্তিষ্কের সঙ্কেত পাঠানোর ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ডোপামিন নামক একটি রাসায়নিক মন ও মেজাজের উপর প্রভাব ফেলে। মন ভাল রাখতে সাহায্য করে ডোপামিন। মস্তিষ্কের যে অংশ থেকে ডোপামিন নিঃসৃত হয়, তা অকেজো হলে পার্কিনসন্স হতে পারে।
হজমে সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য
হজমে সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা। কম বয়েসি থেকে বয়স্ক, অনেকেরই থাকে। কিন্তু এটাও পার্কিনসন্স রোগের লক্ষণ হতে পারে। এ নিয়ে একটি গবেষণা বলছে, বেশ কিছু রোগীদের পার্কিনসন্স চিহ্নিত হওয়ার বছর খানেক আগে থেকে এই ধরনের সমস্যা দেখা গিয়েছে। গ্যাসট্রোইনটেসটিনাল ট্র্যাক্টের স্নায়ু এই রোগের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রোগ চিহ্নিত হওয়ার আগে এই ধরনের উপসর্গ হলে, বিশেষত বছর পঞ্চাশের পর একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
হাত-পা কাঁপা ও হাঁটাচলায় সমস্যা
চল্লিশ বা পঞ্চাশ বছর বয়সের পর হাঁটাচলায় সমস্যা, হাত-পা ছড়াতে গিয়ে অসুবিধা হলে সাবধান হওয়া দরকার। যদি আচমকা হাত-পা কাঁপা শুরু হয়, হাঁটতে গিয়ে মনে হয় পায়ে তেমন জোর নেই, তা হলে তার সঠিক কারণ অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। পার্কিনসন্সের উপসর্গ হিসাবে এই ধরনের সমস্যার কথাও উঠে এসেছে স্নায়ু সংক্রান্ত গবেষণায়। এই রোগের অন্যতম লক্ষণ হল হাত ও পা কাঁপা। কিছুতেই সেই কাঁপুনি থামে না। এমন কিছু হলে, হাতের সাড় কমে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
হাতের লেখা-কথা জড়িয়ে যাওয়া
পার্কিনসন্সের উপসর্গ হল হাতের লেখা ও কথা জড়িয়ে যাওয়া। স্নায়বিক এই রোগে পেশিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যার ফলে লিখতে, কখনও স্পষ্ট কথা বলতে সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের সমস্যা শুধু পার্কনিসন্স নয়, স্নায়বিক অন্য অসুখের লক্ষণও হতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। এই ধরনের উপসর্গ কেবল পার্কিনসন্স নয়, অন্য অনেক রোগের লক্ষণ হতে পারে। তবে অতিরিক্ত মানসিক চিন্তা হোক বা পেটের সমস্যা বা কথা জড়িয়ে যাওয়া, যে কোনও লক্ষণ দেখলেই চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।