আজ শুভ ষষ্ঠী। আগামী ক’টা দিন চলবে জোর খাওয়াদাওয়া। টিকিয়া, ঘুগনি, রোল থেকে শুরু করে বিরিয়ানি, ফিশফ্রাই, কাবাব হরেক খাবারের দিনরাত হাতছানি। শুধু ফাস্ট ফুড খাওয়া নয়, খাওয়ার সময়ও ঘড়ির কাঁটাকে তোয়াক্কা করে না। ফলে ঠিক এই সময়টাতেই বদহজম, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যাগুলো আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে হামলা করে শরীরের উপরে।
এই সব সমস্যাকে দূরে রেখে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠার আগেভাগেই জেনে নেওয়া যাক কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। জেনারেল ফিজিশিয়ান সুবীর মণ্ডল জানালেন, সময়ের অনিয়ম হোক বা বাইরে খাওয়া, গ্যাস-অম্বল কিংবা ডায়েরিয়া হবে না যদি মেনে চলতে পারেন সামান্য কয়েকটি নিয়ম।
এড়িয়ে চলুন রাস্তার ধারের খাবার
পুজোয় চলতে পারে যে কোনও স্থায়ী রেস্তরাঁর খাবার, তবে সদ্য রাস্তার ধারে গজিয়ে ওঠা দোকানে না খাওয়াই ভাল। সেখানে থাকে পরিচ্ছন্নতার অভাব, রাস্তার পাশে রান্না হয় বলে খাবারে ধুলোবালি পড়তে পারে। পাশাপাশি বাসি খাবারও ক্ষতি করতে পারে পেটের। আর তাই বেছে খাওয়াটা জরুরি।
পুজোর সময় প্যান্ডেল থেকে প্যান্ডেলে লম্বা লাইন পেরিয়ে মা দুর্গার দর্শন। আর এত হাঁটাহাঁটি করার ফলে বার্ন হয় অনেকটা ক্যালরি। ফলস্বরূপ যাই খাওয়া হোক না কেন, অ্যাসিডিটির ভয়কম থাকে।
সফট ড্রিঙ্ক কি খাওয়া যেতে পারে?
প্যান্ডেল হপিং হোক কিংবা বাড়ির পুজো, এনার্জি চাই প্রচুর। সে জন্যই ডা. মণ্ডল বলছেন, “সফট ড্রিঙ্কস খাওয়া যায় এ সময়ে। সুগার ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকা যে কোনও পানীয়ই খুব তাড়াতাড়ি শরীরে এনার্জির জোগান দেয়। সফট ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলতে চাইলে ঠান্ডা ফলের রসও কিনে খাওয়া যেতে পারে। তবে নজর রাখতে হবে যথেষ্ট হাইজিন মেনে ভাল জলে যেন তা তৈরি হয়। মোট কথা যে কোনও প্যাকেট জাত পানীয়ই এ সময়ে খাওয়া যেতে পারে। চা-কফির মতো গরম পানীয়তেও জীবাণু থাকার সম্ভাবনা কম।’’
ভয় নেই ঠান্ডা লাগার
পুজোর পরেই থাকে বাচ্চাদের পরীক্ষা। বড়দের থাকে অফিসকাছারির চিন্তা। সেই সঙ্গে বদলায় আবহাওয়াও। ঠান্ডা-গরমে শরীর খারাপ হওয়ার ভয় থেকেই ঠান্ডা পানীয় খেতে ভয় পান অনেকেই। ডা. মণ্ডলের মতে, “ঠান্ডা পানীয় তা জল হোক, কিংবা সফট ড্রিঙ্কস বা ফলের রস, ঢকঢক করে গলায় না ঢেলে যদি স্ট্র দিয়ে কিংবা অল্প অল্প চুমুকে খাওয়া হয় তবে ফ্যারিঞ্জাইটিস ইত্যাদির আর ভয় থাকে না।’’
কিনে খেতে হবে জল
পুজোয় হোক বা এমনি দিনে, সারা দিনের জন্য জল সব সময়ে নিয়ে বেরোনো সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই কিনে খেতে হবে জল। প্যাকেটজাত জল খাওয়ার অভ্যেস এখন বেশির ভাগ মানুষেরই। তা সত্ত্বেও ডা. মণ্ডলের মতে, “অনেক সময়ই ভাল কোনও রেস্তরাঁয় খেতে গেলে আমরা মিনারেল ওয়াটার কিনি না। নর্মাল জলই দিতে বলি। সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে জল কিনে খাওয়াই ভাল।”
তবে সতর্কতা সত্ত্বেও হতে পারে শরীর খারাপ। অ্যাসিডিটি না হলেও কোনও খাবারের কারণে পাকস্থলীতে হতেই পারে বিষক্রিয়া। ডায়েরিয়া, পেট খারাপ, বমি শুরু হতে পারে। বমির জন্য ওষুধ হয় দু’রকম। একধরনের ওষুধ জল দিয়ে গিলে খেতে হয়। অন্যটি চুষে খাওয়ার অর্থাৎ মাউথ ডিসলভিং। ডা. মণ্ডলের মতে, “বমি হলে মাউথ ডিসলভিং ওষুধটি খাওয়াই ভাল, তা যেমন চটজলদি কাজ করে তেমনই ওষুধ খাওয়ার পরে আবার বমি হলেও চিন্তা নেই। তবে যদি খুব বেশি ফুড পয়জনিং হয়ে থাকে তবে অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে বমির ওষুধ খেয়ে নেওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে খেতে হবে ওআরএস-এর জল।’’ তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধই খাওয়া চলবে না, বিশেষত অ্যান্টিবায়োটিক।
সাধারণত এক লিটার জলে এক প্যাকেট ওআরএস গুলতে হয়। তবে এখন ছোট ছোট স্যাশেতেও ওআরএস পাওয়া যাচ্ছে। তাই গোলার আগে অবশ্যই প্যাকেটের গায়ে লেখা জল এবং ওআরএসের পরিমাণের অনুপাত দেখে নেবেন এবং সেই অনুযায়ী গুলবেন। কাজ তাড়াতাড়ি হওয়ার আশায় জল বা ওআরএস-এর পরিমাণে এদিক থেকে ওদিক করলে তাতে কিন্তু ক্ষতির সম্ভাবনাই থেকে যায়।
খুশি মনে খান
খাবার যখন খাবেন, সেটা খুশি মনে ভালবেসে খাওয়া উচিত, নিছক পেট ভরানোর জন্য নয়। ভালবেসে, সন্তুষ্ট হয়ে খাবার খেলে তাতে বদহজম, অ্যাসিড, গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। তা সত্ত্বেও যাদের সারা বছরই লেগে থাকে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা, কিংবা পুজোয় অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়ার ফলে গলা-বুক-পেট জ্বালা কিংবা চোঁয়া ঢেকুর ওঠার মতো সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা, তাঁরা অবশ্যই বেশি করে খান জল। একবারে অনেকটা জল না খেয়ে অল্প চুমুকে জল খান যা অ্যাসিডিটির সমস্যা বা ডায়েরিয়ার পাশাপাশি রক্ষা করবে ডি-হাইড্রেশন হওয়া থেকেও।
“খুব শরীর খারাপ লাগলে বারবার বমি বা পায়খানা হলে সেই বেগ চেপে রাখা উচিত নয়। বমি ও পায়খানার মধ্য দিয়ে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যাবে শরীর থেকে। ঘাড়ে-মাথায় দিতে হবে ঠান্ডা জল। ইর্মাজেন্সি ওষুধের প্রয়োজন হলে তাঁরা খেতে পারেন লিকুইড অ্যান্টাসিড। কিন্তু অ্যাসিডিটি ও বুক জ্বালা একই সঙ্গে হলে অ্যান্টাসিড খেতে হবে রাতে, সকালে নয়,’’ বলছেন ডা. মণ্ডল। সেই সঙ্গে তিনি আরও বললেন, “সকালে উঠে খালি পেটে অতিরিক্ত জল খেলে বাড়তে পারে অ্যাসিডিটির সমস্যা।’’
অ্যান্টাসিড কিংবা গ্যাসের ওষুধ খেয়ে সাময়িক স্বস্তি মিললেও তা থেকে কিন্তু ডেকে আনতে পারে দীর্ঘস্থায়ী বিপদ। খাওয়াদাওয়াই কেবল নয়, ঘুমের পরিমাণ, কায়িক শ্রম সব কিছুর উপরেই আমাদের হজম প্রক্রিয়া অনেকটা নির্ভর করে। আর তাই আনন্দ, খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুমও ভীষণ ভাবে প্রয়োজন। পুজোয় আনন্দ করুন, তবে সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন। বেহিসেবি আনন্দ যেন অসুস্থতা না ডেকে আনে, সে বিযয়ে আগে থেকেই যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।