নির্ধারিত সময়ের ৮ দিন পর্যন্ত আগে বা পরে ঋতুস্রাব হওয়া স্বাভাবিক। ছবি: সংগৃহীত
বিগত দু’বছর ধরে চলে আসা এই অতিমারির প্রভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত। করোনারদ্বারা সংক্রমিত হওয়া ছাড়াও এই ভাইরাসের দৌলতে ব্যাঘাত ঘটেছে অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপেও। তার মধ্যে অন্যতম মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব। কেউ করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী সময়ে ঋতুস্রাবে পরিবর্তন লক্ষ করেছেন। আবার কারও ক্ষেত্রে সেই পরিবর্তন দেখা গিয়েছে করোনা টিকা নেওয়ার পরে। সাধারণত মহিলাদের ২৮ দিনের ঋতুচক্রকেই স্বাভাবিক বলে মনে করেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা। তবে সকলের ক্ষেত্রে কাঁটায় কাঁটায় ২৮ দিনের এই ঋতুচক্র দেখা যায় না। বিভিন্ন কারণে সময়ের দু’-এক দিন আগে বা পরেও রজস্বলা হন মহিলারা। ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব গাইনেকোলজি অ্যান্ড অবস্টেট্রিক্স’-এর মতে, নির্ধারিত সময়ের ৮ দিন পর্যন্ত আগে বা পরে ঋতুস্রাব হওয়া স্বাভাবিক।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণেও অনেক সময় ঋতুস্রাব বিঘ্নিত হয়। ছবি: সংগৃহীত
ঋতুচক্র মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস এবং পিটুইটারি গ্রন্থি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণেও অনেক সময় ঋতুস্রাব বিঘ্নিত হয়।
সমীক্ষা বলছে, অতিমারি পরবর্তী সময়ে অনেক মহিলা ঋতুস্রাব সংক্রান্ত নানা পরিবর্তন লক্ষ করেছেন। এর একটি কারণ হিসাবে উঠে আসছে, মানসিক চাপ। কোভিড পরিস্থিতিতে শারীরিক ভাবে অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি, মানসিক উদ্বেগও দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ও পরিমাণে ঋতুস্রাব হওয়ার অন্যতম শর্ত কিন্তু মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা। সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, মহামারি চলাকালীন এবং তার পরবর্তী সময়ে প্রায় ৪৬ শতাংশ মহিলা এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এ ছাড়াও লকডাউন পরিস্থিতি মদ্যপানের প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ঋতুস্রাবের অস্বাভাবিকতার পিছনে সেটিও একটি কারণ।
বিশেষ করে করোনা টিকা নেওয়ার পরবর্তী সময়ে অনেক মহিলা দাবি করেছিলেন তাঁদের ঋতুস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম অনুপাতে হচ্ছে। দ্বিতীয় টিকা নেওয়ার পর এই পরিবর্তন বেশি করে লক্ষ করা গিয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
১৯১৩ সালে, নিউ ইয়র্কের এক জন চিকিৎসক টাইফয়েডের টিকার সঙ্গে ঋতুস্রাবের পরিবর্তনের একটি যোগ খুঁজে পান। তবে করোনার টিকা ঋতুচক্রে আদৌ কতটা প্রভাব ফেলছে কি না, সে বিষয়ে এখনও কোনও গবেষণানিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।করোনার যে প্রদাহজনক প্রভাব শরীরের উপর পরে, তার জন্যেও ঋতুচক্রের এই পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ।