চা ভালবাসেন, না কফি। —ছবি: সংগৃহীত।
গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক না দিলে দিনটাই যেন শুরু হয় না। বিকেল হলেই আবার এক পেয়ালা কফির জন্য মন হাঁকুপাঁকু করে। ‘চা-য়ে পে চর্চা’ হোক বা কফির কাপে তুফান, এই দুই পানীয় বিনা আমাদের প্রাণ আনচান।
মনের চাপ কমাতে এক কাপ চা-ই খুঁজি আমরা। আবার ক্লান্তিতে চোখ বুজে এলে এক পেয়ালা কফি হলে বেশ হয়।
অনেকে চা-কে স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী মনে করেন। আবার অনেকের পছন্দ কফি। স্বাস্থ্য সচেতনরা তো ব্ল্যাক কফিকেই সেরা বলে মনে করেন। আসলে চা হোক বা কফি, এই দুই পানীয়ের জন্যই মনটা ছোঁক ছোঁক করে সব সময়। আসক্তিটা নেশায় পরিণত হয়েছে অনেকেরই। তাই চা ভাল না কফি, তা বলতে গিয়ে হয়তো হোঁচট খাচ্ছেন আপনিও।
তা হলে জেনে নেওয়া যাক, চা না কফি, কোনটি বেশি উপকারী। পুষ্টিবিদেরা কী বলছেন?
১. চায়ের থেকে দ্বিগুণ ক্যাফিন রয়েছে কফিতে। দেখা গিয়েছে, ক্যাফিনের প্রতি যাঁদের আকর্ষণ আছে, তাঁদের চায়ের প্রতি আসক্তি কম। ক্যাফিন সকলের শরীরে সহ্য না-ও হতে পারে। তাই সে ক্ষেত্রে চা খাওয়াই ভাল। তবে চেষ্টা করতে হবে চিনি, দুধ ছাড়া লাল চা খেতে।
২. কফি খাওয়া হার্টের জন্য ভাল। দিনে দু–চার বার চিনি ছাড়া কালো কফি খেলে শরীরের বিপাকক্রিয়ার হার বাড়ে। ওজনও কমে। তবে মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে অথবা অনিদ্রা ভোগালে ঘন ঘন কফি খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
৩. গ্রিন টি পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্যে করে। ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্যেও উপকারী এই গ্রিন টি। তবে উপকারী হলেও দিনের যে কোনও সময় গ্রিন টি খাওয়া যায় না। ঘন ঘন গ্রিন টি খাওয়াও ঠিক নয়। দিনে ২ থেকে ৩ কাপ গ্রিন টি খেলে উপকার হয়। তবে একদম ভরা পেটে বা খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়া ঠিক নয়।
৪. চা ও কফি দু’টিতেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল থাকে, যা হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।
৫. পুষ্টিবিদেরা বলেন, কফি বিনের ফাইটোকেমিক্যাল সকলের শরীরে সহ্য না-ও হতে পারে। তার উপর কফিতে ক্যাফিনের মাত্রা বেশি। যদি দেখেন, প্রতি দিন ঘন ঘন কফি খেতে খেতে রক্তচাপের তারতম্য হচ্ছে, তা হলে কফি খাওয়া বন্ধ করুন।
৬. নিয়মিত সকালে খালি পেটে দুধ চা খাওয়ার অভ্যাসও ঠিক নয়। এতে বিপাকক্রিয়ার হার কমে যায়। অনেকেই দুধ চায়ে আদা মেশান, এতে গ্যাসের সমস্যা বাড়ে। খালি পেটে কড়া চা খাওয়ার অভ্যাস পাকস্থলীর আলসারের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। শরীরের টক্সিন কমার বদলে উল্টে বেড়ে যেতে পারে। পুষ্টিবিদেদের পরামর্শ, দুধ, চিনি ছাড়া লাল চা খাওয়ার অভ্যাস করলে ভাল হয়। চায়ে বেশিমাত্রায় আসক্তি থাকলে বিভিন্ন রকম ‘হার্বাল টি’ খেয়ে দেখতে পারেন। সুফল পেতে আগে কিছু খাবার খেয়ে তার পরই চা পান করা উচিত। অন্তত ১ গ্লাস জল খেয়ে তার পর চায়ের কাপে চুমুক দিন।
চা-কফিতে যে সব উপাদান থাকে, তা আসক্তি অনেক বাড়িয়ে তোলে। তাই পুষ্টিবিদেদের পরামর্শ, চা খান বা কফি, পরিমিতই খান। যদি প্রচণ্ড মানসিক চাপ বা উত্তেজনা থাকে, তা হলে চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস ছেড়ে দেওয়াই ভাল।