Saree Cancer

‘শাড়ি ক্যানসার’ কেন হয়? তার উপসর্গই বা কী? জানালেন চিকিৎসক

বিভিন্ন ধরনের ত্বকের ক্যানসারের মধ্যে এটিও একটি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা’ বা সংক্ষেপে ‘এসসিসি’।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ১১:১৭
Share:

শাড়ি পরলেই কি এই রোগ হয়? ছবি: সংগৃহীত।

শাড়ি পরলে যদি খুলে যায়, সেই ভয়ে কষে পেটিকোটের দড়ি বাঁধেন। শাড়ি পরে যত ক্ষণ থাকেন, তত ক্ষণ বিশেষ কিছু টের পান না। শুধু পেট চেপে বসতে গেলে কারও হয়তো বাঁধনের জায়গাটা একটু জ্বালা করে। আবার, পছন্দের খাবার একটু বেশি খেয়ে ফেললেও অনেক সময়ে পেটিকোটের বাঁধা জায়গাটায় একটু কষ্ট হয়। বাড়ি ফিরে যখন বাঁধন আলগা করেন, তখনও জ্বালা করতে থাকে। কারও আবার দড়ির বাঁধনের জায়গাটা অসম্ভব চুলকায়। দীর্ঘ সময় ধরে পেটিকোটের দড়ি বাঁধা থাকে বলে ওই অংশে কালশিটে পড়ে যায় কারও কারও। দীর্ঘ দিন ধরে এমনটা হতে থাকলে ঘা পর্যন্ত হতে পারে। বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখলে তা-ই পরবর্তী কালে ক্যানসারের আকার ধারণ করতে পারে। সাধারণের কাছে যা ‘শাড়ি বা ধুতি ক্যানসার’ নামে পরিচিত।

Advertisement

চিকিৎসকেরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের ত্বকের ক্যানসারের মধ্যে এটিও একটি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা’ বা সংক্ষেপে ‘এসসিসি’বলা হয়। শল্য চিকিৎসক এবং ক্যানসার কেয়ার প্রোগ্রামের পরামর্শদাতা, চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “আমাদের চামড়ায় যে কোষগুলি রয়েছে তাকে স্কোয়ামাস সেল বলা হয়। সেই কোষগুলিতে মৌলিক কিছু পরিবর্তন ঘটলে কিংবা হঠাৎ করে এরা বংশবিস্তার করতে শুরু করলে ত্বকের উপর ঘা হতে দেখা যায়।”

ত্বকের যে কোনও রকম অস্বস্তি বা সংক্রমণই কিন্তু এই ক্যানসারের কারণ হতে পারে। শুধু পেটিকোট পরলেই যে এমন সমস্যা হবে, তা নয়। কোমরের ভাঁজে দীর্ঘ ক্ষণ শক্ত করে পাজামা কিংবা ট্রাউজ়ার্সের দড়ি বা গার্ডার চেপে বসে থাকলেও রক্ত চলাচল ব্যাহত হতে পারে। সেখান থেকে ত্বকে অস্বস্তি শুরু হয়। শক্ত ইলাস্টিক দেওয়া প্যান্ট, অন্তর্বাস, ধুতি, লুঙ্গি— অর্থাৎ বাঁধন দিতে হয় বা ত্বকের উপর চেপে বসে থাকে, এমন যে কোনও পোশাক পরলেই ত্বকে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। দীপ্তেন্দ্রের কথায়, “শীতপ্রধান অঞ্চলে শরীর গরম রাখার জন্য সেখানকার বাসিন্দারা শরীরে হটপটের সেঁক দেন। সেখান থেকেও তো ত্বকের কোষে এক ধরনের ক্ষত তৈরি হয়। দীর্ঘ দিন ধরে এমনটা চলতে থাকলে তা-ও কিন্তু ক্যানসারের আকার নিতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যা ‘কাংরি ক্যানসার’ নামে পরিচিত। কাশ্মীরীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। আবার, ধরুন ছোটবেলায় কারও হাত পুড়ে গিয়েছিল। ক্ষত শুকিয়ে গেলেও সেই অংশটিতে মাঝেমধ্যেই কেমন যেন অস্বস্তি হয়, চুলকায়। সেই ক্ষতর সঠিক চিকিৎসা না হলে সেই অঞ্চলে বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করে। যা আসলে মার্জোলিন আলসার। সেখান থেকেও স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা হতে পারে।”

Advertisement

এ ছাড়া, ত্বকের যে অংশ অতিবেগনি রশ্মির সংস্পর্শে আসে, সেখানেও এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। রোদ লেগে ত্বকে যে ক্যানসার হয় তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘পেজ়াল ক্যানসার’ বলা হয়। এই অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করতেই খেলোয়াড়েরা মুখে জ়িঙ্ক অক্সাইড মেখে খেলতে নামেন। সেই কারণেই বাইরে বেরোলে সানস্ক্রিন মাখতে বলা হয়। দীপ্তেন্দ্র বলেন, “আবার শরীরে যদি হঠাৎ কোনও নতুন আঁচিল তৈরি হয়, তা আকারে বড় হতে শুরু করে কিংবা রক্ত বেরোতে শুরু করে, সেখান থেকেও কিন্তু ক্যানসার হতে পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় যা ‘ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা’ নামে পরিচিত। তবে, জন্মগত জড়ুল বা আঁচিল থেকে এই ধরনের সমস্যা সাধারণত হয় না।”

পেটিকোটের বাঁধন থেকে হতে পারে ‘স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা’। ছবি: সংগৃহীত।

স্কোয়ামাস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার কি কোনও লক্ষণ আছে?

১) শরীরের কোনও অংশে দীর্ঘ ক্ষণ রক্ত চলাচল বন্ধ হলে ত্বকের রং পাল্টে যায়। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হতে হতে পারে। বাঁধন আলগা হওয়ার পর ওই নির্দিষ্ট জায়গা অসম্ভব চুলকাতে পারে।

২) দীর্ঘ দিন ত্বকের নির্দিষ্ট জায়গায় বাঁধন দিতে দিতে সেই জায়গায় ঘা হয়ে যেতে পারে। অন্তর্বাসের গার্ডার ত্বকের উপর চেপে বসে থাকলেও একই রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৩) প্রথমে ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, ঘা হওয়া, সেখান থেকে সংক্রমণ হলে তা ক্যানসারে পরিণত হতে সময় লাগে না। অনেকের ক্ষেত্রে কোমরের আশপাশে টিউমারও হতে পারে।

এই ধরনের সমস্যা নিরাময়ে কী কী করা যেতে পারে?

১) পেটিকোট পরলেও তার বাঁধন আলগা করে রাখতে হবে।

২) শরীরের নিম্নাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। দেহের সেই সব অংশে যাতে ঘাম না জমে, সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

৩) প্রয়োজনে পেটিকোটের তলায় শেপঅয়্যার পরতে পারেন। যাতে বাঁধনের দাগ ত্বকের উপর না পড়ে।

৪) নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস কেনার সময়ে কোমরের স্ট্র্যাপ দেখে কিনবেন। লক্ষ করবেন, তা যেন খুব সরু না হয়।

৫) দীর্ঘ ক্ষণ কষে পেটিকোটের দড়ি বেঁধে রাখার পর বাড়ি ফিরে ওই অংশ ভাল করে পরীক্ষা করতে হবে। ত্বকের রঙে কোনও বদল এলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement