একটা সময়ে যেমন ঋতুচক্র শুরু হয়েছিল, তেমন নির্দিষ্ট একটা সময়ে শেষও হবে। ছবি: সংগৃহীত।
বেশির ভাগ সময় কেটেছে পড়াশোনা করতে। তার পর চাকরি। পাশাপাশি, মেয়ে হওয়ার জন্য যে সময়ে যা যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। এ নিয়ে আলাদা করে সচেতন হওয়ার কথা মনে হয়নি কখনও। তবে মধ্যবয়সে পৌঁছতে না পৌঁছতেই বন্ধুদের মধ্যে ‘মেনোপজ়াল সিম্পটম’ নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে। বছর বছর ধরে সব মহিলার ক্ষেত্রেই তো একই রকম ঘটনা ঘটে আসছে। এ তো নতুন কিছু নয়। একটা সময়ে যেমন ঋতুচক্র শুরু হয়েছিল, তেমন নির্দিষ্ট একটা সময়ে গিয়ে শেষ হবে। শুরুর দিনগুলোতেও যেমন কিছু শারীরিক অস্বস্তি ছিল, রজঃনিবৃত্তির সময়েও তেমন হবে। কারও একটু বেশি, কারও একটু কম। এ নিয়ে আবার ‘কপালে ভাঁজ’ পড়ার কী আছে?
তবে, চিকিৎসক এবং মনোবিদেরা বলছেন, শুধু ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা মনমেজাজ বিগড়ে থাকাই কিন্তু রজঃনিবৃত্তি নয়। তার চেয়ে বরং আরও বেশি কিছু। এই সময়ে শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনের মধ্যেও নানা রকম পরিবর্তন আসতে শুরু করে। এখন অনেকেই মনে করতে পারেন, রজঃনিবৃত্তির সময় আসার এত আগে থেকে এ সব নিয়ে ভাবতে যাবেন কেন? ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগেও যেমন শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন, তেমন রজঃনিবৃত্তির ক্ষেত্রেও আলাদা করে প্রস্তুত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
রজঃনিবৃত্তি আসলে কী?
ঋতুচক্র নামটি থেকেই পরিষ্কার যে, এই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াটি একটা সময়ে শুরু হয় এবং নির্দিষ্ট একটা সময়ে শেষও হয়ে যায়। শারীরবৃত্তীয় এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রজনন। রজঃনিবৃত্তির সময়কাল এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রজননের ক্ষমতা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসতে থাকে। এই রজঃনিবৃত্তি বা ‘মেনোপজ়’-এরও কিন্তু তিনটি পর্যায় রয়েছে। ‘পেরিমেনোপজ়’, ‘মেনোপজ়’ এবং ‘পোস্টমেনোপজ়’। হুট করে একদিনে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায় না। বরং তা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। তার পর ধীরে ধীরে ঋতুচক্র বন্ধ হয়। সাধারণত ৪০ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে রজঃনিবৃত্তি হয়। ডিম্বাশয় সংকুচিত হয়ে যায়। পাশাপাশি, প্রজননের সঙ্গে যুক্ত হরমোনের মাত্রায় হেরফের আসতে শুরু করে। এই হরমোনগুলি কিন্তু শুধু সন্তানধারণে সহায়তা করে না। তাদের আরও কিছু কাজ রয়েছে। সেগুলি সম্পর্কে আগে থেকে জেনে রাখা প্রয়োজন।
১) প্রজননে সহায়ক এই হরমোনগুলির ভারসাম্য নষ্ট হলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যেতে শুরু করে। ফলে অস্টিয়োপোরোসিস-এ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে।
২) অনেকে মহিলাই এই সময়ে ত্বকের নানা রকম সমস্যায় ভোগেন। কারও ত্বকে মেচেতার ছাপ পড়তে শুরু করে। কারও তৈলাক্ত ত্বক একেবারে শুষ্ক মরুভূমির মতো হয়ে যায়। ত্বকে বলিরেখা পড়তেও দেখা যায়।
৩) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে বিপাকহারে। যার ফলে রজঃনিবৃত্তির পর মহিলাদের মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
৪) হরমোনের হেরফেরে অতিরিক্ত চুল পড়তে শুরু করে। চুলের স্বাভাবিক জেল্লা হারিয়ে যায়।
৫) শারীরবৃত্তীয় এই পরিবর্তনের সময়ে মহিলাদের মধ্যে মিলনে অনীহা দেখা যায়। যৌনাঙ্গ শুষ্ক হতে শুরু করে। ফলে রজঃনিবৃত্তির প্রভাব কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনেও এসে পড়ে।
রজঃনিবৃত্তির সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যেরও নিবিড় যোগ রয়েছে। হরমোনের এই ক্রমাগত ওঠাপড়ায় মস্তিষ্কের নিউরোস্ট্রান্সমিটারগুলিও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। ফলে মনমেজাজ বিগড়ে যায়। সাধারণ কথায় রেগে যাওয়া, সারা ক্ষণ খিটখিট করা, আবার অকারণে কেঁদে ফেলার মতো লক্ষণও দেখা যায়।
স্বাভাবিক এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেবেন কী ভাবে?
চিকিৎসকেরা বলছেন, সব মহিলার শরীর এক রকম নয়। তাই উপসর্গ, লক্ষণ কিংবা নিরাময়ের উপায়গুলোও ভিন্ন। সকলের ক্ষেত্রে এক নিয়ম খাটবে না। কারও যেমন সামান্য শরীরচর্চা, ধ্যান কিংবা এক টুকরো ডার্ক চকোলেট খেলেই সমস্যা মিটে যেতে পারে। আবার কাউকে মনোবিদের সাহায্য নিতে হতে পারে। তাই নিজের শরীর এবং মন সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে এ বিষয়ে মন খুলে আলোচনা করতে হবে।