দক্ষিণী অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভু। ছবি: সংগৃহীত।
কখনও কনকনে বরফজলে স্নান, তো কখনও শুধুমাত্র ধ্যানচর্চা। অভিনয় ছাড়াও অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভুকে নিয়ে চর্চার আরও একটি বিষয় হল তাঁর শরীরচর্চা। নিজের শরীরে রয়েছে মারাত্মক অটো ইমিউন রোগ। তা সত্ত্বেও শরীরচর্চার বিভিন্ন মাধ্যম বা ধারা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সামান্থার সহজাত। ফিটনেস সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করার জন্য পডকাস্ট চ্যানেলও শুরু করেছেন তিনি। সেখানেই সামান্থার অতিথি হিসাবে দেখা গিয়েছিল ফিটনেস প্রশিক্ষক অলোকেশকে।
‘হেল্দি লিভিং’ কথাটি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে গেলে যা যা করা প্রয়োজন, তা এই ব্যস্তজীবনে আমরা কেউই করে উঠতে পারি না। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং লাগামছাড়া খাওয়াদাওয়ার জন্য লিভার এবং কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। হজমের সমস্যা তো বটেই, সঙ্গে আরও নানা রোগ বাসা বাঁধে। শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করতে অনেকেই ডিটক্স ওয়াটার খেয়ে থাকেন। ঠিক সেই ভাবে ‘বক্স ব্রিদিং’ পদ্ধতিও লিভার, কিডনি-সহ গোটা শরীরে জমা আবর্জনা দূর করতে সাহায্য করে।
শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার এই পদ্ধতির নাম হঠাৎ ‘বক্স ব্রিদিং’ হল কেন?
শ্বাস নেওয়া, ধরে রাখা এবং আবার ছাড়ার এই যে চক্র, তা অভ্যাস করার সময়ে অনেকেই বক্সের ভঙ্গি কল্পনা করেন। অনেকে এই পদ্ধতিকে ‘স্কোয়ার ব্রিদিং’ও বলে থাকেন।
কী ভাবে অভ্যাস করবেন ‘বক্স ব্রিদিং’?
১) প্রথমে একেবারে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মাটিতে বসুন। না হলে একেবারে শুয়ে পড়ুন। ঘাড়, কাঁধের পেশি শিথিল করে রাখতে হবে। বসেই থাকুন বা শুয়ে, মেরুদণ্ড যেন সোজা থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে।
২) এ বার নাক দিয়ে শ্বাস নিতে নিতে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে হবে। ফুসফুস বাতাসপূর্ণ হয়ে গেলে দম ধরে আবার ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে হবে।
৩) এ বার মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে। শ্বাস ছাড়ার সময়েও আবার ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে হবে। এই ভাবে চার থেকে পাঁচ বার পর্যন্ত বক্স বিদ্রিং অভ্যাস করা যেতে পারে।
বসে বা শুয়ে দু’ভাবেই অভ্যাস করা যায় ‘বক্স ব্রিদিং’। ছবি: সংগৃহীত।
প্রথম বার বক্স বিদ্রিং অভ্যাস করার সময়ে কী কী মাথায় রাখবেন?
১) প্রথমেই খুব বেশি সময় ধরে এই ব্রিদিং অভ্যাস করা যাবে না। অল্প অল্প করে সময় বৃদ্ধি করতে হবে। নিয়মিত অভ্যাস করলে ধীরে ধীরে ভঙ্গি সম্পর্কেও সচেতনতা আসবে।
২) খুব হইচইয়ের মধ্যে এই ব্রিদিং অভ্যাস করা যায় না। আশপাশের পরিবেশ যখন একেবারে শান্ত থাকে, সেই সময়ে করা যেতে পারে। সবচেয়ে ভাল হয় ঘুম থেকে উঠেই যদি বক্স ব্রিদিং অভ্যাস করে নিতে পারেন।
৩) মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে ধ্যানের বদলে বক্স ব্রিদিং অভ্যাস করাই যায়।
বক্স ব্রিদিং অভ্যাস করলে কী কী উপকার মেলে?
১) শারীরিক, মানসিক যাবতীয় ক্লান্তি দূর করতে দারুণ কার্যকর এই বক্স ব্রিদিং। শরীরে বাড়তে থাকা কর্টিজ়ল বা স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
২) কোনও কাজেই মন দিতে পারছেন না? এই ধরনের সমস্যাকেও বশে রাখতে পারে এই ব্রিদিং। পাশাপশি, মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও এই ব্রিদিং অভ্যাস করা যায়।
৩) অনিদ্রাজনিত সমস্যা থাকলে ঘুমের ওষুধ না খেয়ে এই ব্রিদিং-এর উপর ভরসা রাখাই যায়। তবে তার পদ্ধতিতে যেন কোনও ভুল না থাকে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
৪) পেশা কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা থাকলে উদ্বেগ বাড়তে পারে। সেই উদ্বেগ বশে রাখতেও এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর।
৫) শ্বাসযন্ত্র বা ফুসফুসের কোনও সমস্যা থাকলে শরীরে অক্সিজেন কম পৌঁছলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। শারীরবৃত্তীয় গোটা পদ্ধতি ভেঙে পড়তে পারে। এই ধরনের সমস্যা এড়াতে চাইলে বক্স ব্রিদিং অভ্যাস করতেই পারেন।