শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার ভিত শেখাচ্ছেন আরজে রয়
–(ভুলে) যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব। এইভাবে কি এখন বলা যায়?
–কী বলবেন?
–এই, যে বাংলা ভাষা তার শক্তি হারাচ্ছে আস্তে আস্তে। কমবয়সী, স্কুলপড়ুয়া বাঙালিরা বাংলা ভাষার ব্যবহার একটু একটু করে ভুলেই হয়তো যাচ্ছে। কিন্তু ভুলে কেন যাবে?
–হারাচ্ছে কি? যাচ্ছে কি? প্রমাণ করতে পারবেন?
–ইয়ে, মানে, আমরা তো এই শব্দ-জব্দ নিয়ে এবারে ১০টা জেলার ১৫০টা স্কুলে যাব, ইতিমধ্যেই যার মধ্যে গত এক সপ্তাহে ৫০টারও বেশি স্কুলে গিয়েছি। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যাচ্ছে, বাংলা বই-টই কম-ই পড়ছে ওরা।
–বলছে ওরা?
–হ্যাঁ, বলছে বৈকি! ওরা বইমেলায় যায়, কিন্তু ঘুরতে। বই কেনে না। সিলেবাসের বাইরের গল্পের বই খুব একটা পড়ে না। আপনাদের নাম নিয়েও বলেছি–শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গাঙ্গুলি বা সুভাষ চক্রবর্তীর কবিতা পড়েছ? বড়-মাঝারি-ছোট–কোন স্কুল থেকেই সেভাবে পজ়িটিভ সাড়া পাইনি আমরা।
–পজ়িটিভ? ইতিবাচক নয়?
–না, মানে, কথায়বার্তায় ইংরেজি শব্দের ব্যবহার এখন বেশ বেশি। হিন্দি শব্দ-ও খুব শোনা যায়।
–তাই?
–ইংরেজির প্রভাব তো ছিল-ই। সেটা আরেকটু বেড়েছে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ইংরেজিতেই সব পড়তে হয়। অনেক খুদে বাঙালি তো স্কুলে হিন্দি পড়ে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে, আর বাংলা তৃতীয় ভাষা। মাত্র বছর তিন-চারেক পড়তে হয় সেই বাংলা। ফলে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে যারা পড়ছে, তারা তা-ও হয়তো শিখছে। তৃতীয় ভাষার ছাত্র-ছাত্রীরা বানান, শব্দের ব্যবহার, গল্প নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নয়। পাস করলেই হল।
–বাড়িতে?
–সেটা যা বোঝা যাচ্ছে, বাড়িতেও যে বাংলা-বাংলা ব্যাপারটা আছে, তা নয়। বা থাকলেও, হাতে মোবাইল আর তাতে ইন্টারনেট–এই জুটি বাংলার খুঁটিটা একটু নড়বড়ে করেছে। আপনার অবনী বাড়ি থাকলেও, ফোনের মাধ্যমে গোটা অবনী-র কন্টেন্ট এখন তার নখদর্পণে। সেখানে বাংলা ভাষার নানান বিষয়ের চেয়ে হিন্দি, কোরিয়ান-জাপানি বা ইংরেজি ভাষার খাবার ওদের পাতে বেশি পাত্তা পায়। ফলে বড়ো শহর বলুন, বা মফস্বল কিংবা গ্রামের স্কুলের পড়ুয়া–সবার কাছেই মনে হচ্ছে বাংলার চেয়ে অন্য ভাষার হরেক জিনিসের কদর বেশি।
–আমার কিন্তু মনে হয় না, ওরা বাংলা ভুলে যাবে। বাংলা কন্টেন্ট তো কম নেই–ওরা নিশ্চয়ই সেগুলো পড়বে। বাংলা নিশ্চয়ই ভুলবে না।
–আপনি তাহলে সাহস দিচ্ছেন? শক্তি শক্তি দিচ্ছেন তাহলে?
উত্তরে চশমার পিছনের চোখ দুটো মুচকি হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।