খেলার ছলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বানানের ধারণা স্পষ্ট করলেন আরজে রয়।
জোরকদমে চলছে শব্দ-জব্দ। রাজ্য জেলা মিলিয়ে প্রায় ৫০টিরও বেশি স্কুলে পৌঁছে গিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। শব্দ-জব্দ খেলতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল বানান নিয়ে এখনও তাদের মধ্যে বেশ ভীতি আছে। তাই 'ভুতের রাজা'র প্রসঙ্গ ধরে খেলার ছলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বানানের ধারণা স্পষ্ট করলেন আরজে রয়।
'ভুতের' রাজা দিল বরজবর জবর তিন বরএক দুই তিনযা চাই বানান লিখতে পারিযে কোনও ভাবে লিখতে পারি কোনও ভাবে যেন পাস করতে পারি
ভূতের রাজাকে আজকের বাংলা সিলেবাসের 'বাঁশ'-বাগানে পাওয়া গেলে, এ যুগের ছাত্র-ছাত্রীরা এই তিনটে বর চাইত-ই চাইত। এটা অবশ্য ওরা বলেনি এখনো, কিন্তু গত আর এই বছরের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে বুঝতে পারছি –এই বরটা পেলে ওদের বরাত খুলে যাবে।
বানান কেন গুলিয়ে যাচ্ছে ওদের? সেই তো তিনটে শ, তিনটে র, দুটো ন, দুটো ব আর আরো বর্ণ–একই জিনিস শিখেছেন ওদের মা-বাবারা। সঙ্গে তো সেই ই-কার– উ-কার ইত্যাদি যা ছিল, তা-ই আছে। তাহলে ওদের বানান নিয়ে এত ভয় কেন?
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তারা যেহেতু বাংলা ভাষা বাদে বাকি সিলেবাসের সবকিছুই ইংরেজিতে পড়ে, তাদের চোখে-মগজে ইংরেজি শব্দ-ই বেশি ধরা পড়ে। তারা ক্লাসের বাইরে, এমনকি স্কুলের বাইরেও অনেক সময় ইংরেজিতে কথা বলে। সেটাই স্বাভাবিক কারণ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সেটাই ধর্ম। আর এই কারণেই দশ-বারো বছর ধরে, ক্লাস ওয়ান থেকে টেন-টুয়েলভ অবধি, বাংলা ভাষা আর তার শব্দের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার খুব একটা সুযোগ তাদের হয় না। একটা ভাষার শব্দ যত বেশি তারা চোখের সামনে দেখবে, যত বেশি সেই শব্দগুলো শুনবে, যত বেশি সময় কাটবে তাদের সঙ্গে–তত বেশি সেই শব্দগুলোর চেহারা, ব্যবহার, মানে ইত্যাদি ওদের কাছে সহজ মনে হবে। এই বন্ধুত্ব হয় না বলেই বাংলা বানানে এত ভুল, এত ভয়।
শব্দবাজির মজার মজার বাংলা শব্দের খেলাগুলো নিয়ে গত ১৩ বছর ধরে যে কাজটা আমরা করেছি, তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই শব্দ-জব্দর খেলাগুলো সাজানো হয়েছে। খেলাগুলো এমন, চেনা শব্দের চেহারা নানাভাবে বদলে ওদের চোখের সামনে দেওয়া হচ্ছে। সমাধান করতে গিয়ে ওদের মনে করতে হচ্ছে সেই শব্দগুলোর চেহারা, অর্থাৎ বানান। ফলে শুধু বানানের খেলা না দিয়ে, নানান মজার খেলার মাধ্যমে বানান আর শব্দের সঙ্গে ওদের পরিচয় করানো হচ্ছে–যেটা ওদের ভালো-ও লাগছে।
আমরা তাই আশাবাদী, শব্দ-জব্দ আগামী দিনে স্কুল পড়ুয়া বাঙালিদের বাংলা বানান শেখার আগ্রহ অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে।