বাংলা শব্দ দিয়ে সাজানো দেওয়াল (ইনসেটে পার্থপ্রতীম বৈদ্য) ছবি: সংগৃহীত।
বাংলা ভাষাকে আলাদিনের ভাঁড়ার ঘরের সঙ্গে তুলনা করে চলে। বাংলা ভাষার মায়ায় বাঙালির জীবন আদিঅন্ত সম্পৃক্ত। এই মহীরূহ আমাদের পূর্বপুরুষেরা অতি যত্নে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সাজিয়ে গিয়েছেন। অথচ এই বিশাল গাছের প্রতিটি পাতা ঝরার শব্দ আমাদের মনে আশঙ্কা তৈরি করে! মনের কোণে প্রশ্ন উঁকি মারে, এই বিপুল ঐশ্বর্য আমাদের পরের প্রজন্ম রক্ষা করবে তো?
তবে, নিয়মের অনুশাসন আমরা কেউই বিশেষ পছন্দ করি না। যে কোনও বিষয় শেখা বাধ্যবাধকতার মধ্যে দিয়ে হতে শুরু করলে তা কখনওই আমাদের মনের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে না। খেলতে খেলতে বা মজার ছলে, মনের আনন্দে মানুষ যা শিখে নেয়, তার সঙ্গে সে একটা নিবিড় আত্মীয়তার বন্ধন অনুভব করে।
তাই বিধিবদ্ধ পাঠ্যক্রমের গল্প, কবিতা, উপন্যাসের পঠনপাঠনের বাইরে বাংলা ভাষাকে ছাত্র-ছাত্রীদের মনের কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়ার জন্য আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে 'শব্দজব্দ' এক দারুণ উদ্যোগ। এই অনুষ্ঠানে আমাদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করুক, শব্দের জাদুতে তারা আবিষ্ট হোক, এটাই একমাত্র কাম্য। তারা শব্দ নিয়ে লোফালুফি খেলতে খেলতে কখন যে নিজেদের শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে ফেলবে, তা নিজেরাও টের পাবে না। আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এমন এক সুযোগ পাবে, এ আমাদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের বিষয়।
আমাদের সকলের মনের একান্ত বাসনা, আমাদের ভাষা, তার থেকে তৈরি হওয়া শব্দ, শব্দের মালায় গাঁথা কবিতার পংক্তি, আমাদের ছেলেমেয়েদের মুখে মুখে ঘুরুক। এই স্বপ্নই এক জন শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকা দেখেন।
আনন্দবাজার অনলাইন যে এই ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে, তা আক্ষরিক অর্থে অতুলনীয় এবং অনবদ্য। আটপৌরে সব শব্দ দিয়ে রহস্যের খাসমহল গড়ে তুলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভাষার প্রতি ভালবাসা তৈরি করে দেওয়া-- এ এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। আবেগঘন যে জীবনের কাছে বারবার আমরা বাঁধা পড়ি, সেই জীবনের ছবি আনন্দবাজার অনলাইন ভরপুর যত্নে এঁকে চলেছে। 'শব্দ জব্দ'-এর মতো অভূতপূর্ব কর্মকাণ্ডের উদ্যোক্তারা তাই আমার ধন্যবাদার্হ হয়ে রইলেন।