Silajit Majumder

Independence Day: শিলাজিতের চোখে স্বাধীনতা আসলে ‘রোজের রুটিন’

দেশ স্বাধীনের ৭৫ বছরে ‘স্বাধীনতা’র মানে নিয়েই আনন্দবাজারের হয়ে কলম ধরলেন গায়ক শিলাজিৎ। 

Advertisement

শিলাজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২২ ১২:১৮
Share:

স্বাধীনতার মানে

তুমি ভাই বুঝবে কী হায়!,ফুরফুরে দিন কেটে যায়,বোঝাচ্ছ স্বাধীনতার মানে...

Advertisement

১৫ অগস্ট। উপমহাদেশ সেজে উঠেছে তিন রঙের মলাটে। লালকেল্লায় সগর্বে উড়ছে স্বাধীনতার পতাকা। মধ্যরাতের ঘড়ির কাঁটার ক্যাকোফনিতে কেটে যাচ্ছে সময়। স্বাধীনতার পতাকার মতোই হাওয়ার স্রোতে উড়ে যাচ্ছে একাধিক প্রশ্ন। এরই মধ্যে মুক্তিসূর্যের আরও এক বছর কাটিয়ে ফেললাম আমরা।

ইতিহাসের হলদে পাতায় এখনও উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে এই দিন। দেশের নাগরিক হিসেবে এই স্বাধীনতা দিবস আমাদের প্রত্যেকের কাছেই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তবে দেশের স্বাধীনতার বাইরে যদি আমরা ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলি, তা হলে অবশ্যই অন্য জীবদের তুলনায় আমাদের মত প্রকাশের সুযোগ বেশি। আমরা আসলে অনেক বেশি আধুনিক। নিজের কথা স্পষ্টভাবে বলতে পারি। তাই দিন বিশেষে উদযাপন নয়, বরং স্বাধীনতা আসলে আমার কাছে রোজের রুটিন। মানুষ হিসেবে আমরা নিজেদের স্বাধীনতার পাশাপাশি একে অপরের স্বাধীনতাটাকেও মাথায় রাখি। অন্যের স্বাধীনতাকে সম্মান দি। আর সেই সীমা অতিক্রম করলেই কিন্তু সংঘাতের সৃষ্টি।

Advertisement

আসলে আমাদের এই চ্যাপটাচৌকো জীবনে, স্বাধীনতার সঙ্গে সমঝোতা থাকাটা খুব জরুরি। আমরা স্বাধীন, তাই বলেই তার যথেচ্ছ ভাবে প্রয়োগ করব, এটা ভাবা সম্পূর্ণ ভুল। সেই স্বাধীনতা বেড়াজাল কোথায় তা তো ব্যক্তিবিশেষে নির্ভর করে। অন্য ব্যক্তির স্বাধীনতায়, কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করব, আর কোন বিষয়ে করব না, তা তো আমাদেরই ঠিক করতে হবে। খবরে আমরা রোজ দেখি বিভিন্ন জায়গায় দুষ্কর্ম ঘটে চলেছে। স্বাধীন বলে, যে যা খুশি করবে তা তো মেনে নেওয়া যায় না। স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা করাটা আসলে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ। ভাল মানুষ হওয়ার অর্থে যে স্বাধীনতা আমাদের প্রয়োজন, ঠিক ততটাই ব্যবহার করা উচিত বলে আমার মনে হয়।

কিন্তু সেই স্বাধীনতায় কোথাও না কোথাও শিকল রয়েছে। বলা ভাল, বেড়াজাল রয়েছে। ইচ্ছে থাকলেও যা ভেঙ্গে ফেলা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই ধরুন, যে পোষ্যগুলি আমার বাড়িতে থাকে, বা যাদের সঙ্গে আমি থাকি, তাদের আমি আমার বাড়িতে সঠিকভাবে থাকার স্বাধীনতা দিতে পারছি না। এমন জায়গায় রয়েছে, যেখানে ওদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে সমস্যা হচ্ছে। আমি অনেক ক্ষেত্রেই বিব্রত হই। আমি পাখি পুষি না। আমি পছন্দ করি না খাঁচার মধ্যে বন্দি রাখতে। এক বার একটি অসুস্থ কাককে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। তাকে ৭-৮ দিন রেখেছিলাম। সুস্থ হওয়ার পর সে চলে গিয়েছে। আসলে অনেক সময় ইচ্ছে না থাকলেও অন্যের স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দিতে হয়। আমার কাছে স্বাধীনতা মানে এটাই।

কিন্তু কোনও ব্যক্তি যদি সেই স্বাধীনতার বেড়াজাল টপকে, তার উলঙ্ঘন করে, তা হলে তো আমার কিছু করার নেই। বড় জোর তাঁকে বারণ করা যায়। কিন্তু সে যদি ভাবে তাঁর কাছে সেটাই স্বাধীনতা তা হলে তো মুশকিল। স্বাধীন থাকা মানে কোনও ব্যক্তি যা ইচ্ছে তাই করতে পারে না। এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে শালীনতা, সাহস, সব কিছু। আমি স্বাধীন, কিন্তু আমার সাহস নেই ধর্মতলার মোড়ে প্রেমিকাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার। আমি স্বাধীন, কিন্তু আমার সাহস নেই আমার খারাপ লাগলে, কোনও কিছুকে স্রেফ ধ্বংস করে দেওয়ার। আমি স্বাধীন, কিন্তু আমার লজ্জা আছে, সম্ভ্রম আছে। আমি প্রতিবাদ করতে জানি।

এই তো সেদিন, আমি গাড়ি করে যাচ্ছি। ধী গাড়ি চালাচ্ছিল। সিগন্যালে ট্রাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ করে পিছনের গাড়ির ভদ্রলোক হর্ন বাজাতে শুরু করল। আমি নেমে এসে চিৎকার করে বললাম, কী করছেন আপনি? দেখতে পাচ্ছেন না?

একবার ভেবে দেখুন, ওই ব্যক্তিও স্বাধীন। আমিও স্বাধীন। তাই বলে স্বাধীনতার সেই প্রয়োগ আমি ঠিক কতটা করব, তার সীমা জানা প্রয়োজন। আমার স্বাধীনতা যেন, অন্যের স্বাধীনতার রুটিনে সমস্যা তৈরি না করে।

এই প্রতিবেদনটি সংগৃহীত এবং ‘সাধের স্বাধীনতা’ ফিচারের একটি অংশ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement