রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়া নিয়ে এক আলাদাই উন্মাদনা থাকত আমার। স্পষ্ট মনে পড়ে, বাড়িতে বেশ বড় করে পুজো হত। সঙ্গে জমাটি খাওয়াদাওয়া। বাড়ি ভরে যেত লোকজনে— বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে আত্মীয় পরিজন। হুল্লোড়, হাসি আর রান্নার গন্ধে সারা বাড়ি ম-ম করত।
আমাদের কিন্তু ওই দিন নিরামিষ খাওয়ার চল ছিল না। বরং কবজি ডুবিয়ে রান্না হত পোলাও, মাংস, ইলিশমাছ আরও নানা ধরনের সুস্বাদু পদ।
শহরে বিকেল গড়াতেই মায়ের হাত ধরে বেরিয়ে পড়তাম বিভিন্ন দোকানে। ঠিক জানতাম, গেলেই হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে রংচঙে একটা প্যাকেট। সেই প্যাকেটের লোভেই আমার মূলত যাওয়া। কত রকমের মিষ্টি থাকত সেখানে। খেয়ে দেয়ে মহানন্দে আবার বাড়ি ফিরে আসতাম।
আরও পড়ুন- অক্ষয় তৃতীয়ার সঙ্গে মিশে আছে মায়ের হাতের রান্নার গন্ধ: অনসূয়া
এখনকার জেনারেশনের কাছে অক্ষয় তৃতীয়ার সেই মাহাত্ম্য আর নেই। আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেও বলতে পারবে না অক্ষয় তৃতীয়া কী জন্য এবং কেন পালিত হয়? তার জন্য কিছুটা আমরা, মানে অভিভাবকেরাই দায়ী।
হুল্লোড়, হাসি আর রান্নার গন্ধে সারা বাড়ি ম-ম করত
এ বার পয়লা বৈশাখের দিন বাড়িতে একটু রান্না বান্না করেছিলাম। আর সত্যি কথা বলতে কি, বিগত এক মাসে খাওয়া আর রান্না করা ছাড়া আর কী বা করছি? ওটাই এখন একমাত্র ‘স্ট্রেস বাস্টার’।
আরও পড়ুন- এই অক্ষয় তৃতীয়া মৃত্যুপুরী থেকে জীবনপুরীতে নিয়ে যায়
আসলে দিন-বারের হিসেবই ঠিক থাকছে না এখন। খুব অবাক লাগে ভাবতে জানেন, যখন সারা বিশ্বে দূষণের বিষবাষ্প তখন আমরা মাস্ক ছাড়া বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়িয়েছি। আর এখন চারিদিকে পরিষ্কার বাতাস, রাস্তাঘাট ঝকঝক করছে, বসন্তের ঝরা ফুল দু’হাত বাড়িয়ে স্বাগত জানাচ্ছে বৈশাখকে...অথচ আমরা বাড়িতে। বেরোলে মুক ঢাকতে হচ্ছে মাস্কে। একেই বোধহয় ‘আয়রনি’ বলে!
যাই হোক, সবাই ভাল থাকবেন। পৃথিবী সুস্থ হলে আবারও দেখা হবে আমাদের...