টক্করটা নাকি ভালই হবে।
এমনটাই বললেন ব্রাত্য বসু।
কোনও রাজনৈতিক দ্বৈরথ নয়। ফিল্ম সেটে দুই অভিনেতার লড়াইয়ের কথা বলা হচ্ছে এখানে। ব্রাত্যর বিপরীতে এ বার জোর টক্কর দিতে আসছেন দেবশঙ্কর হালদার। ছবির নাম ‘কল্কিযুগ’। থ্রিলারটির শ্যুটিং শুরু ২৭ ডিসেম্বর।
‘হৃদ্কমলে ধুম লেগেছে মরল কেন সে
ছয় আঙুলের ছাপ পড়েছে পাঁচটি তুলে নে’
— এই দুই লাইনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে একটা খুনের রহস্য। দু’বছর আগে পুরনো একটি খুন যার কিনারা করা যায়নি। সেই ‘কোল্ড কেস’ ওপেন হচ্ছে এসিপি দিলীপ দত্তর তত্ত্বাবধানে। প্রধান সন্দেহভাজন হলেন শিল্পী সংকর্ষণ। যার লেখা বই ‘কল্কিযুগ’য়ে পাওয়া যায় ওই দু’টো লাইন। কিন্তু সংকর্ষণই কি আসল খুনি? নাকি এ খুনের পিছনে রয়েছে আরও অনেক কিছু?
এটাই হল দেবারতি গুপ্ত-র ছবির বিষয়। এসিপি দিলীপ দত্তর ভূমিকায় থাকছেন ব্রাত্য। তাঁর স্ত্রীর চরিত্রে থাকছেন ব্রাত্যর সহধর্মিণী পৌলমী বসু। সংকর্ষণের চরিত্রে দেবশঙ্কর। ব্রাত্য যে বলছেন ‘টক্করটা ভালই হবে’ তা শুনে দেবশঙ্কর হেসে বললেন, “তা হবে মনে হচ্ছে। এর আগে ‘মুক্তধারা’তে আমরা কাজ করলেও বোধ হয় একটা সিনেই একসঙ্গে ছিলাম। ওখানেও আমাদের চরিত্রের মধ্যে একটা দূরত্ব ছিল। বিরোধ ছিল। ওখানে আমি ছিলাম পুলিশ। ও মোক্তার। এখানে ও পুলিশ। আর আমি বোধহয় একজন দুষ্টু-মিষ্টি লোক।”
‘মুক্তধারা’তে দেবশঙ্করের চরিত্রটি জোর করে কনফ্লিক্টে যেতে চায় না ব্রাত্যর চরিত্রের সঙ্গে। কিন্তু ‘কল্কিযুগ’য়ে দেবশঙ্করের চরিত্র সব সময় আপার হ্যান্ড নিতে চায়। সোজা কথাকে বেশি সোজা করে বলার মধ্যে একটা ঔদ্ধত্য থাকে, সেটা দেবশঙ্করের চরিত্রের মধ্যে রয়েছে। কেন এই দু’জনকে এক ছবিতে চাইলেন পরিচালক? প্রথম ছবি ‘হইচই’-এর পর সামাল দিতে পারবেন তো দুই দাপুটে অভিনেতাকে? “নিশ্চয়ই পারব। জানি দু’জনেই মঞ্চে স্টলওয়ার্ট। তবে ভরসা পাচ্ছি কারণ ওঁরা খুব কোঅপারেটিভ। চিত্রনাট্য পড়ে দু’জনে রাজি হয়েছেন। ব্রাত্যদার চরিত্রটা দারুণ পছন্দ হয়েছে। দেবশঙ্করদা একটু ইতস্তত করছিলেন, কারণ সিনেমায় এই রকম ফ্ল্যামবয়েন্ট চরিত্র উনি করেননি। শেষে আশ্বস্ত হয়েছেন। ভাবছি সিনেমায় ওঁর লুক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করব,” বলছেন দেবারতি।
ব্রাত্যের লেখা মোট পাঁচটা নাটকে অভিনয় করেছেন দেবশঙ্কর। মঞ্চে দু’জনে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন ‘রুদ্ধসঙ্গীত’য়ে। ব্রাত্যর পরিচালনায় দেবশঙ্কর অভিনয় করেছেন ‘রুদ্ধসঙ্গীত’ আর ‘ভাইরাস এম’ নাটক দু’টোতে। ব্রাত্যর কাছে ফিল্ম অভিনেতা হিসেবে দেবশঙ্করের স্ট্রেন্থটা কী বলে মনে হয়? “ও ক্যারেকটার খুব ভাল বোঝে। ওর স্ট্রেন্থ হল ওর ব্যক্তিত্ব,” বলছেন ব্রাত্য। আর নিজের ফিল্ম অভিনয়ের ক্ষেত্রে? সেখানে অভিনেতা ব্রাত্যর স্ট্রেন্থটা কোথায় বলে তাঁর নিজের ধারণা? “ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে সিচুয়েশন বুঝে আমি ইমপ্রোভাইজ করি। শটের মধ্যে ইমপ্রোভাইজ করি বাচনভঙ্গি দিয়ে, বডি ল্যাঙ্গোয়েজ দিয়ে,” উত্তর দেন ব্রাত্য।
এমন কিছু তিনি দেখেছেন যেটা পাল্টালে তাঁর ধারণা দেবশঙ্করের ফিল্মে অভিনয় আরও উচ্চতায় পৌঁছবে? “ও যদি আরও ‘সাটল’ হয়, ফিল্মের উপযোগী আরও সূক্ষ্ম অভিনয় করে, তা হলে সেটা আরও ভাল হবে। আমার ধারণা ও সেটা এই ছবিতে করবেও,” স্পষ্ট উত্তর দেন ব্রাত্য।
একই প্রশ্ন ব্রাত্যর ক্ষেত্রে দেবশঙ্করকে করা হলে তিনি বলেন, “এ ছবিতে আমার ধারণা ব্রাত্য ফাটিয়ে দেবে। ওর ভিতরে ছটফটে আর স্থিতিশীল সত্তা দু’টোই রয়েছে। ও খুব ধাক্কা দেওয়া কথা খুব সহজ ভাবে বলতে পারে। ওর যে অভিনয়ের প্যাটার্নটা রয়েছে তার থেকে একদম বেরিয়ে এসে ও অন্য রকম একটা চরিত্র করেছিল ‘ইচ্ছে’ ছবিতে। দেখে চমকে গিয়েছিলাম। আমি চাইব ওকে এমন চরিত্র অফার করা হোক যেখানে ও নিজেকে অন্য ভাবে তুলে ধরতে পারে। অনেকটা ‘ব্ল্যাক’ বা ‘পা’তে অমিতাভ বচ্চন যেমন করেছেন।”
‘কল্কিযুগ’-য়ের চিত্রনাট্যে অবশ্য নিজেদের অভিনেতা হিসেবে চ্যালেঞ্জ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। প্রথম যে দৃশ্যে দুই চরিত্র মুখোমুখি হয় সেখানের একটা সংলাপ থেকে বোঝা যায় কী রকম রেষারেষি থাকবে তাদের মধ্যে। চিত্রনাট্যে আছে ব্রাত্যকে দেখেই নাকি দেবশঙ্করের চরিত্রটি খানিকটা ব্যঙ্গ করে অন্যান্য পুলিশ অফিসারদের বলে, ‘‘এ কি তোমাদের বড়দা?’’
আপাতত অভিনেতা হিসেবে এই সিনেমায় কাকে ‘বড়দা’ বলা হবে সে উত্তর খোঁজার অপেক্ষায় দর্শক!