সোনু, যত দূর জানা যায় আপনার সঙ্গে বিক্রম ঘোষের প্রথম দেখা তাজমহলের সামনে...
বিক্রম: নেটে আছে নিশ্চয়ই....
না না নেটে নেই। কোনও একজন শিল্পীর কাছে শোনা, সেই অনুষ্ঠানে রবিশঙ্কর আর অনুষ্কাশঙ্করও ছিলেন।
বিক্রম: পনেরো বছর আগের কথা। আমাদের বন্ধুত্বটা কিন্তু শুরু তারও অনেক পরে।
সোনু: মনীষা দে নামে আমাদের এক কমন বন্ধু মিউজিক বিজনেসে ছিল। ও প্রায়ই বলত বিক্রমভাইয়ের সঙ্গে আমার ভাল মিলবে। ঠিকই বলত। সেই সময় ‘গুমসুদা’ বলে একটা ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করছে বিক্রমভাই। আমাকে স্টুডিওতে ডাকল। সেটা ২০০৯ সালের কথা। আমিও হাজির হলাম।
বিক্রম: আসলে যে সম্পর্ক হওয়ার, সেটা দশ মিনিটেই তৈরি হয়। মনে আছে, আমরা সে দিন আড়াই ঘণ্টা নানা গল্প করার পর হঠাৎ সোনু বলল, “আচ্ছা বিক্রমভাই, আপকো গানা ভি গাওয়ানা থা না হমসে?”
দু’জনের মধ্যে মিলটা কী করে বুঝলেন?
বিক্রম: সোনুর মধ্যে যে কোনও ধরনের সঙ্গীতের ঐতিহ্যের প্রতি দারুণ শ্রদ্ধা দেখে আসছি সেই ‘সারেগামা’র সময় থেকেই। যে আভিজাত্য ক্লাসিকাল শিল্পীদেরও আগ্রহী করেছিল।
সোনু: গানের জগতে কিছু লোক আছে দেখা হলেই যাঁরা নাটকীয় ভাবে, ‘আই লভ ইউ’, ‘অ্যায় মেরি জান’, ‘ভাইজান’ বলে জড়িয়ে ধরে। আদিখ্যেতা আর কী! আমি বা বিক্রমভাই—এই ধরনের মানুষ পছন্দ করি না। আমাদের জীবনদর্শন এক। সঙ্গীত ভাল লাগাও এক। পরস্পরের মজাটা খুব ভাল ধরতে পারি। রাজনীতি, সিনেমা, দর্শন, বোকা লোক, চালাক লোক, গসিপ সব নিয়ে কথা বলি। এমনকী পুরনো বান্ধবীদের নিয়েও কথা হয়।
কিছু দিন আগে আমাদের দু’জনের আর একটা ছবিতে সুর করার কথা হয়েছিল। প্রযোজক-পরিচালক গানের কথাগুলো মেল করেছিলেন। এতটাই মিল আমাদের পছন্দ-অপছন্দে যে, একই সঙ্গে গানের কথাগুলো দু’জনেরই ডাউনমার্কেট মনে হল। কাজটা ছেড়ে দিলাম। আমি আর বিক্রমভাই ‘খামখা’ বলে একটা অ্যালবামের কাজ করেছি চার বছর ধরে। ‘হ্যাপি অ্যানিভার্সারি’ ছবিটার কাজ তো প্রায় শেষ।
তা না হয় হল, কিন্তু পুরনো বান্ধবী কেন? নতুন বান্ধবী হচ্ছে না? আপনাদের দু’জনেরই তো অনুরাগিণী অগুনতি!
বিক্রম: হা হা। এখন আমরা ঘোরতর সংসারী। নতুন নতুন বান্ধবী হয়ও না। খুঁজিও না।
সোনু: আসলে পুরনোদেরই নতুন করে নিই।
কয়েক মাস আগে ‘সুপার সে উপর’ ছবিতে আপনারা একসঙ্গে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন। যেটা রিলিজ করলেও কেউ তেমন জানলই না...
সোনু: আমরা খেটেছিলাম। ছবির গান প্রশংসাও পেয়েছিল। কিন্তু ঠিকঠাক ভাবে ছবিটাকে রিলিজ করেননি প্রযোজক। প্রত্যেক ছবিরই একটা নিজস্ব ‘ডেসটিনি’ থাকে। যদি ছবি লেগে যাবার থাকে তো লেগে যাবে। ‘কোলাভরি ডি’ যখন আমার ছেলে গাইল, সেটার তো কোনও প্রচারই হয়নি প্রথমে। তাও দারুণ হিট করেছিল। এপ্রিলের গোড়াতেই রিলিজ করতে চলেছে আমাদের দু’জনের সঙ্গীত পরিচালনার ছবি ‘জল’। গানের হিন্দি কথাগুলো আমার লেখা। ইংরেজি কথাগুলো বিক্রমভাইয়ের। সুর এবং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর দু’জনেরই।
বিক্রম: ‘জল’য়ের মিউজিক লঞ্চ উপলক্ষে আমরা দু’জনে মিলে দিল্লি আর মুম্বইতে এক মঞ্চে একসঙ্গে অনুষ্ঠান করলাম। লোকজনের খুব ভাল লেগেছে। এ বার ভাবছি কলকাতাতেও আমি আর সোনু একসঙ্গে অনুষ্ঠান করব।
মুম্বইতে রাজু হিরানি আপনাদের মিউজিক অ্যালবাম উদ্বোধন করলেন তো...
বিক্রম: হ্যাঁ। এটা নিয়ে একটা ঘটনার কথা না বললেই নয়। ২০০৩ সালে এক ভদ্রলোক আমাকে ফোন করে বললেন, “দাদা, আমি একটা ছবি করছি। আপনাকে দিয়ে মিউজিক করাতে চাই। আমি আপনার রিদমস্কেপ খুব শুনি।” তিনি এও বললেন, ছবির নাম নাকি ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’। তখন আমি বিদেশে ট্যুরে যাচ্ছি মাস তিনেকের জন্য। সম্ভব হল না কাজটা করা। তখন রাজু হিরানিকে আমি চিনতাম না। তার পরে তো কত কীই ঘটে গেল!
আর আজ সেই রাজু হিরানি আমাদের ছবির মিউজিক অ্যালবাম লঞ্চ করে গেলেন। রাজু উদ্বোধনের মঞ্চে উঠে এই গল্পটাই প্রথমে বললেন সে দিন।
‘জল’ তো মরুভূমির গল্প...
বিক্রম: হ্যাঁ। কচ্ছের রাণের এক গ্রামের গল্প। যে গ্রামের গল্প সেখানে এক জন থাকে যে কিনা জলের খোঁজ দিতে পারে। সেই নায়কের সঙ্গে প্রেম হয় পাশের গ্রামেরই এক মেয়ের। মরুভূমির বিরাট প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি বনাম মানুষের লড়াই নিয়ে গল্প এগিয়ে যায়। পরিচালক গিরীশ মালিক। যেহেতু মরুভূমির ব্যাকগ্রাউন্ডে গল্প তাই লোকগান, লোকবাদ্যযন্ত্রেরও ব্যবহার রয়েছে।
সোনু যখন আছেন মেলোডি থাকবে এটা তো আশা করাই যায়?
সোনু: আমি আর বিক্রমভাই যখন একসঙ্গে কাজ করি তখন সেই মিউজিকের নাম হয় ‘মাডি ইলেকট্রনিকা’। অর্থা মেঠো গানের সঙ্গে যন্ত্রের মিলনে আধুনিক সঙ্গীতের মূর্ছনা। আমাদের নিজস্ব সিগনেচার। এই ছবিতে সেটাই মেলোডি।
বিক্রম: যাঁরা সোনুর সেমিক্লাসিকাল অ্যালবাম ‘ক্লাসিকালি মাইল্ড’ শুনেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন মার্গসঙ্গীতে ওর জ্ঞান কতটা। ওর বলিউডি গানের মেলোডি নিয়ে তো বলার কিছুই থাকে না। অন্য দিকে আমার ক্ল্যাসিকাল মিউজিক, ফোক মিউজিক, ফিউশন সব কিছু সম্পর্কে যে ধ্যানধারণা, সেটারও প্রভাব পড়ে আমরা একসঙ্গে ছবির মিউজিক করলে, বা অ্যালবামের কাজ করলে। আমাদের একটা ধারাবাহিক সার্চ চলে অন্য রকম সুর খোঁজার।
সোনু: ভাবছি বাংলা ছবিতেও সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করব। তবে কাউকে চিনি না সে ভাবে। বিক্রমভাই যদি সাহায্য করে, তা হলে যোগাযোগ হবে। কিছু দিন আগে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ফোন করে বলেছিলেন ছবিতে অভিনয় করাবেন। কিন্তু তার পর আর কথা হয়নি।
আপনি কি এখনও অভিনয় করতে আগ্রহী?
সোনু: না। তবে সিরিয়াস কাউকে পেলে কাজ করাই যায়।
এই মুহূর্তে শিল্পী হিসেবে আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন বলে মনে করেন? এখন তো অনেক নতুন শিল্পী এসে গিয়েছেন।
সোনু: নতুন নতুন গান লিখে ফেলা বা সুর দেওয়া—এখন অবলীলায় করি। তবে এই মুহূর্তে ব্যস্ততা রয়েছে জলসা নিয়েই। নতুন শিল্পীদের আসা-যাওয়ার সঙ্গে কোনও বিরোধ নেই আমার।
সঙ্গীত পরিচালক হতে চাইছেন। তা আপনার গান গাওয়ার কী হবে?
সোনু: গানও থাকবে। কিন্তু আজকাল তো গান গাওয়াটাও সোজা নয়। সুরকারেরা নিজেরাই অনেকে গান গাইছেন। দ্বিতীয়ত কপিরাইটের ব্যাপারে একটা সমস্যা হচ্ছে। আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে একটা সংগঠন তৈরি করেছি যাতে গায়ক এবং সুরকারেরা রয়্যালটি বাবদ তাঁদের প্রাপ্য টাকা পান। সেখানে অনেক সময়ই প্রযোজক বা মিউজিক কোম্পানি গায়কদের সেই টাকা দিতে রাজি হচ্ছে না। কত ছবিতে গান গাওয়ার কথা হচ্ছে। পরে শুনছি অন্য কোনও উঠতি শিল্পী ডাব করছেন। গান গাওয়ার পরিস্থিতিটা তো এই রকম একটা টানাপোড়েনের জায়গায় চলে গিয়েছে এখন। এই রয়্যালটির টাকার দাবি না মানায় বহু গানের অফারই আমাকে ছাড়তে হয়। বা চলে যায়।
বড় গায়কেরা দাবিদাওয়া নিয়ে গান গাইতে না-ই পারেন। উঠতি গায়কেরা তো অনেকেই তা করছেন না।
সোনু: কারণ ওঁদের কাজ করে কিছু টাকা পেলেই হল। তবুও আমরা লড়াইটা চালিয়ে যাব। কলকাতায় এই ধরনের একটা সংগঠন গড়ার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু তাতে কিছু শিল্পী তো রেগেই গেলেন আমার ওপর। জানতাম কলকাতা প্রতিবাদী শহর। সেই জোশটা দেখলাম না।
অরিজিৎ সিংহ আর হানি সিংহ— দু’ধরনের শিল্পী। এঁরা কত দিন টিকে থাকবেন মনে হয়?
সোনু: নিজস্ব শ্রোতা নিয়ে ওদের চলবে ভালই। আর আমাদের গানের শ্রোতাদের জন্য আমরা রইলাম। তবে আজকালকার জমানায় টিকে থাকার মূল রহস্য হল টেকনোলজি। কে কত দিন টিকে থাকবে, সেটা নির্ভর করছে রেকর্ডিং প্রযুক্তি দিন দিন কতটা উন্নত হবে তার ওপর। এটা বলা যায় বহু লোক তো গায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। প্রযুক্তি সেই স্বপ্ন পূরণ করে দেবে গানটা শেখা থাক বা না থাক।
সেরা গায়কের প্রমাণ একটাই, যিনি মঞ্চে সিংহের দাপটে গান গেয়ে শ্রোতাকে মন্ত্রমুগ্ধ করছেন। সেখানে কোনও টেকনোলজির জারিজুরি চলবে না। সিনেমায় গাওয়াটাই সব নয়। একমাত্র ভারত আর পাকিস্তানেই প্লেব্যাক সিস্টেম আছে যেখানে অভিনেতা বা অভিনেত্রীর জন্য অন্য একজনকে গলা দিতে হয়। ও দেশে সিনেমার গানের ফর্ম্যাটটাই আলাদা। আমরাই একমাত্র বেকুব দেশ যারা প্লেব্যাক চালিয়ে যাচ্ছি।
এটা তো চিটিং। আমি স্টেজে যখন গান গাই, আমি চাইব যে লোকে বলুক সোনু এখনও রেওয়াজ করে এসে গান গায়। সেটাই আমার সম্মানের জায়গা।
কিন্তু আজও যখন লাইভ শো করেন তখন সিনেমার জনপ্রিয় গানগুলোই গান। ওই গান না থাকলে তো আজকের সোনুকে লোকে চিনতই না।
সোনু: আমারও তো সেটাই কথা। কেন প্লেব্যাক দিয়েই একজন গায়ককে নিজের পরিচয় তৈরি করতে হবে। আমিও তো এই সিস্টেমের বাইরের লোক নই। বিদেশে একজন গায়কের পরিচিতি আলাদা। হানি সিংহ হোক বা অরিজিৎ সিংহ, এরাও প্লে-ব্যাকের বাইরের গান গেয়ে শ্রোতাদের কাছে আলাদা ভাবে নিজস্ব পরিচয় তৈরি করুক। অভিনেতাদের গলায় গান গাওয়ার বোকা নিয়ম থেকে বেরোতেই হবে। তবেই না সম্মান।
বিক্রম: আসল কথা এই সম্মানের গভীরতা, হুল্লোড়ে জনপ্রিয়তা বিস্তারের চেয়ে অনেক বেশি। সোনু কিংবদন্তি হবে কি না জানি না। কিন্তু মেলোডিয়াস গানের একটা ইতিহাস গড়েছে।
আর সোনু! আপনার চোখে বিক্রম শিল্পী হিসেবে কোথায় দাঁড়িয়ে?
সোনু: মনে হয় ওর আগে পদ্মশ্রী পাওয়া উচিত। বিক্রমভাই শিল্পী হিসেবে খুবই আত্মসম্মানী। বিনয়ী। ওর জানাটা ওকে উন্নাসিক করেনি।
বিক্রম: আমাদের এখনও এত কিছু করা বাকি যে ঔদ্ধত্য দেখিয়ে লাভ নেই।
আচ্ছা এই যে সব আজকালকার গান ‘ইও ইও হানি’, ‘চার বটল ভদকা’, ‘লুঙ্গি ডান্স’ ‘পার্টি অন মাই মাইন্ড’ কেমন লাগে?
সোনু: দারুণ ঝটকা লাগে। (হাসি)
বিক্রম: শক যাকে বলে!
সোনু: তাই বা কেন বলব? আমিও তো গেয়েছি এক সময় ‘আসলাম ভাই, দুবাইকা চশমা’। তবে কী, ওই যে গানটা বললেন, ‘পার্টি অন মাই মাইন্ড’— ওই গানটায় ভীষণ খারাপ একটা শব্দ আছে যেটা ডিস্কে আনকাট ভার্শানে বাজে। গানের কথায় অন্য অ্যাপিল থাকতেই পারে, কিন্তু ভাষার সৌন্দর্য থাকবে তো! সেটার অভাবটা আজকাল ভাল লাগছে না। একটা সময় তো এমন গানও ছিল ‘শালা ম্যায় তো সাহাব বন গয়া’, কিংবা ‘চোলি কে পিছে ক্যায়া হ্যায়’— তারও একটা শিল্পরূপ ছিল। এখন গানে রগরগে স্ল্যাং-ও থাকে। তবে এই সময়টাও পাল্টাবে।
বিক্রম: সোনু ‘জল’ ছবির একটা গান খুব ভাল লিখেছে। ‘জল দে জল দে জলদি জল দে জ্বলনে না দে, জল হি জল দে’— খুব সুন্দর কথা। একটাই কথা, আমরা ছ্যাবলামো করব না।
আপনি যে গান লিখছেন, তা হিন্দি শিখলেন কী ভাবে? অনার্স ছিল?
সোনু: কলেজেই গেলাম না তো অনার্স! আঠারো বছর বয়সে পুরোপুরি গানেই চলে এলাম। গানের পাশাপাশি হিন্দি-উর্দু দুটোরই চর্চা করেছি অবশ্য।
বিক্রম আপনার এখনকার গানবাজনা কেমন লাগছে?
বিক্রম: এখনকার গানবাজনায় বৈচিত্র আছে। প্রতিভা অনেক। কিন্তু আত্মার অভাব! যান্ত্রিক। ‘ফোকাস’য়ের অভাব। প্রচুর বিদেশি গানবাজনা শুনি। বলিউডিও শুনি। এই মুহূতের্র্র্র্ যেমন ব্লুজ সিঙ্গার ডায়ানা ক্রলের গান শুনছি। আমি আর সোনু মিলে বসে ভীমসেন জোশি থেকে ব্রিটনি স্পিয়ারস সবই শুনি। যখন রবিশঙ্করজির সঙ্গে বাজাতাম নিয়মিত, তখন মনে হত ফিউশন করব। তবে আমার ছাত্রদের বলব প্রথমে পনেরো বছর রেওয়াজ করো, তালিম নাও। তার পর যা খুশি করো।
সোনু: গান যারা শিখছে তারা প্রচুর শুনুক। সঙ্গীতে শোনাটাই আসল।
আজকাল পার্টিতে আর পেজ থ্রিতে বেশি আপনাকে দেখা যায় না।
বিক্রম: যখন ক্লাসিকাল মিউজিক থেকে ফিউশনে আসছিলাম নিজেকে চেনানোর দরকার ছিল। এখন আমার ফিউশন সমস্ত ডিজাইনার র্যাম্পে বাজে, টেলিভিশনের নানা অনুষ্ঠানে তো বাজেই। ডিস্কে বাজে না অবশ্য তেমন। কিন্তু লাউঞ্জে বাজে। সুনি তারাপোরওয়ালা দক্ষিণ আফ্রিকায় বসে আমার ফিউশন শুনে ছবির কাজে ডেকেছিলেন। পার্টিতে গিয়ে বা ফিতে কেটে নিজেকে চেনানোর আর দরকার নেই। সম্প্রতি উস্তাদ রাশিদ খান, আমি আর হরিহরণ মিলে একটা অ্যালবাম করছি। বিগত বছর দেড়েকে আবার ক্লাসিকাল অনুষ্ঠানেও ফিরেছি। সোনুর সঙ্গে চারটে ছবির কাজ চলছে।
এখন তো ছেলেও বড় হচ্ছে। ঘর সংসার কেমন চলে, সোনু?
সোনু: কখন ঘর-সংসার করব?
সব সময়ই ট্যুরে আর ফাংশানে। ছেলেকে কিছুটা তালিম দেওয়ার চেষ্টা করছি। আর বাইরে কনসার্টে গেলে কখনও কখনও বৌ-বাচ্চা নিয়ে যাই। তবে সব সময় সেটা সম্ভব নয়।
এই যেমন কলকাতায় ওদের নিয়ে এসেছি। এ শহর আমার বৌয়ের বাপের বাড়ি।
বিক্রম, আপনি ছেলেকে তবলা শেখাচ্ছেন?
বিক্রম: হ্যাঁ। দিনে এক ঘণ্টা করে তবলার রেওয়াজ করে। আমার কাছেও শিখছে। আমার বাবার সঙ্গেও বসছে।
এটা কি আপনার মনে হয় যে প্রত্যেক শিল্পীর সঙ্গে একজন ভাল সঙ্গীত পরিচালকের বন্ধুত্ব থাকা উচিত?
সোনু: কিছু বছরের জন্য অনু মালিককে পেয়েছি। তবে সেটাও যৎসামান্য। যে রকম রফি সাব-নৌশাদের জুটি, যে রকম আরডি-কিশোরের জুটি, আমার তা হয়নি।
বিক্রম: তবে হালে দেখছি আমরা গান থেকে বারেবারেই আধ্যাত্মিক আলোচনায় চলে যাই। জীবনের উপলব্ধি যত গভীর হচ্ছে ততই যেন সীমা থেকে অসীমের দিকে এগোচ্ছি।
সোনু: যত ঈশ্বরের স্পর্শ পাচ্ছি ততই যেন জীবন থেকে ভয়ডর চলে যাচ্ছে। মনে হয় যে-কোনও ঝুঁকি নিতে পারি। বিক্রম: তা ঠিক। ইচ্ছে করলে খাড়া পাহাড় থেকে তরতরিয়ে নেমেও যায় নাকি শুনেছি। আসলে সোনু অসম্ভব জিম-ফ্রিক। আমাকে দু’য়েক বার জিমে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমার তো বাবা জিম ট্রেনারদের দেখলে কেমন যেন খুব কড়া লোক মনে হয়!
(দু’জনেরই হো হো হাসি)
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।