ফেসবুক এটিকেট মেনে চলাটা এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজনীয়।
পেপার খুললেই নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। কোথাও ফেসবুক বন্ধুর হাতে বাড়ির চার দেওয়ালের ভিতর থাকা গৃহবধূ খুন হচ্ছেন। কোথাও বা ফেক ছবি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার কারণে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।
আপনারও নিশ্চয়ই ফেসবুকে প্রচুর বন্ধুবান্ধব? এঁদের প্রত্যেককেই কি আপনি এক নজরে দেখেন?
না বুঝে বন্ধুত্ব পাতালে যে হিতে বিপরীত হতে পারে তা তো নিশ্চয়ই আপনি ভাল করেই জানেন। অজস্র ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটে ইদানীং এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। আপনার বোঝা উচিত ফেসবুক শুধু হুল্লোড় করার জায়গা নয়। হাজারো বন্ধু পাতাতে গেলে সমস্যা তাই ঘটবেই।
আপনার রোজের জীবনে আপনি তো নির্দিষ্ট কিছু আচরণবিধি মেনে চলেন। ফেসবুকেও ঠিক সে রকমটাই করা প্রয়োজন।
বস যখন ফেসবুকে
অফিসে নিশ্চয়ই আপনার বস বা সুপিরিয়র বসের সঙ্গে বেশ কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলেন। ফেসবুকে বস আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকতেই পারেন। কিন্তু আপনাকে বুঝেসুঝে চলতে হবে সে ক্ষেত্রে। আপনি কি চাইবেন রাতে কোথায় পার্টি করলেন, কী খেলেন বা সি-বিচে বেড়াতে গিয়ে যে পোশাকে ঘুরে বেড়ালেন সেই ছবি আপনার বস দেখুন? আপনি অফিসে তো নিশ্চয়ই সেই পোশাক পরেন না। হ্যাঁ, এখন কোনও একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আপনি কমেন্ট করছেন। সে রকম জিনিস আপনি বিনা দ্বিধায় বসের সঙ্গে শেয়ার করুন।
এই বিষয়টা নিজের সহকর্মীদের ব্যাপারেও মেনে চলুন। অফিসের সহকর্মী, সহকর্মীই হন। তিনি আপনার বাড়ির সদস্য নন। তাই ব্যক্তিগত জীবনকে পেশাদার জীবনের থেকে একেবারে আলাদা রাখুন। কী দরকার ফেসবুকে অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্যের আদানপ্রদান করার? শুধু অফিসই বা কেন, স্কুল-কলেজে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ক্ষেত্রেও এটা সত্যি। শুধু যেটুকু দরকার সেটুকুই ফেসবুকে শেয়ার করা বোধহয় ভাল। তা সে শিক্ষা সম্বন্ধীয় হোক বা কাজের ক্ষেত্রে হোক। পাবলিক প্ল্যাটফর্মে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার যেন সঠিক আচরণবিধি মেনেই করেন, তা খেয়াল রাখবেন।
বাকিটা ব্যক্তিগত নয়
ফেসবুকে মাঝে মধ্যেই হাওয়ায় ভাসানো তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকে। হয়তো আপনার পার্টনার অ্যানিভার্সারির তারিখটা ভুলে গিয়েছেন। বা আপনাকে সম্পর্কে প্রতারণা করেছেন কেউ। এই নিয়ে চাপানউতোর চলতে থাকে মাঝে মাঝেই। হয়তো এই ঝামেলাগুলো মিটমাটও হয়ে যায়। কিন্তু ফেসবুকে সবার সঙ্গে এই ঘটনাগুলো যখনই আপনি শেয়ার করছেন, সবাই তো জেনে যাচ্ছে সেটা। অদ্ভুত বোকা বোকা একটা ব্যাপার। তাই নয় কি? আর লোকেরা গণ্ডগোলের গন্ধ শুঁকতে পারলেই হল। তাদের আর আটকায় কে! এ তো নিজের বেডরুমে অজ্ঞাত অপরিচিতদের যেচে নেমন্তন্ন করে নিয়ে আসার মতো ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকতেই হবে আপনাকে। আপনার দুর্বলতার সুযোগটা অন্য কাউকে নিতে দেবেন না প্লিজ। সোশ্যাল মিডিয়া আপনার বেডরুম নয় যে, আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন।
যদি বন্ধু হও
ফেসবুক পেজটা খুললেই অসংখ্য ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। কিছু চেনা, বেশিটাই অচেনা, অজানা। আপনার নিশ্চয়ই মনে হয় যাদের সঙ্গে সম্পর্ক বানানোর কোনও ইচ্ছেই আপনার নেই, তাঁরা কেন পাঠান এই সব রিকোয়েস্ট! ব্যাপারটা যারপরনাই অস্বস্তির। হয় ডিপ্লোম্যাটিক্যালি হ্যান্ডল করুন বিষয়টা। নয়তো স্রেফ এড়িয়ে যান। অপর পক্ষের যেন মনে না হয় আপনি অহঙ্কারী। কখনও এমনও হয় মুখোমুখি সেই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হল আপনার। তখন বলতেই পারেন, ফেসবুকের বিশাল সার্কেলটা আপনার পক্ষে ম্যানেজ করা বেশ ঝামেলার। অগত্যা...।
আমার নিজেরও একাধিক বার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমার অনেক ছাত্রছাত্রীই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাত আমাকে। আমি ওদের বলতে বাধ্য হতাম ফ্যাকাল্টির সঙ্গে চ্যাটিং টার্মস-এ না থাকাটাই ভাল। অনেক তথ্য, অনেক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা ঘটনা রয়েছে যা আমি ওদের জানাতে চাই না। অনেক অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে আছে, যাদের বোঝা দরকার তাদের অনেকের বাবা-মা, দাদু-দিদারাও নিয়মিত ফেসবুক করেন।
এ খেলা কেমন খেলা
ক্যান্ডি ক্রাশ, ক্রিমিনাল কেস বা তিন পত্তির মতো ভুরি ভুরি গেমস ফেসবুক বন্ধুরা হামেশাই পাঠায়। খুব বিরক্তিকর ব্যাপারটা। চাইলেই আপনি ব্লক করে দিতে পারেন গেমস পাঠানো এই সব অত্যুৎসাহীদের। কাকে কী পাঠাচ্ছেন, সেটা পাঠানোর আগে একটু ভেবে পাঠালে কিন্তু এই জাতীয় সমস্যা হয় না।
সংবেদনশীল বিভিন্ন ব্যাপারে লোকজনকে ট্যাগ না করাই ভাল। ফেসবুকে সব কিছু নিয়ে হাসিঠাট্টা করাটাও কিন্তু কোনও কাজের কথা নয়। যদি কোনও সংবেদনশীল বিষয় থাকে, সাম্প্রতিক রাজনীতিক বা দার্শনিক কোনও তত্ত্ব থেকে থাকে, যেগুলো হয়তো আপনার এমপ্লয়ার চাইছেন না আপনি নিজের নামে শেয়ার করুন, তা হলে অতি অবশ্যই আপনি নিজস্ব কোনও ফেসবুক অস্তিত্ব বানিয়ে নিতেই পারেন।
ডিজিটাল অস্তিত্ব-সর্বস্ব এই দুনিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়াকে তো আপনি আর এড়িয়ে চলতে পারবেন না। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার যাতে যথাযথ হয়, সেটাই আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত।