সাফল্যে ভেসে যেও না

যে শো-তে এক সময় নিজেই বাদ পড়েছিলেন, আজ তার মেন্টর তিনি। ‘ভিকি ডোনর’ খ্যাত আয়ুষ্মান খুরানা। তাঁর মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।নিজে এক সময় রিজেকশন ফেস করেছেন। ‘ভিকি ডোনর’ করার আগে এবং পরেও। আর সেই আয়ুষ্মান খুরানা এখন ‘ইন্ডিয়াজ বেস্ট সিনেস্টার কী খোঁজ’-এর মেন্টর। সহ-মেন্টর পরিণীতি চোপড়া। মুম্বইতে এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আয়ুষ্মান নিজেই স্বীকার করছেন যে, ২০০৩-এ এই প্রোগ্রামের জন্য অডিশন দিয়ে প্রথম রাউন্ডে রিজেক্টেড হয়েছিলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share:

নিজে এক সময় রিজেকশন ফেস করেছেন। ‘ভিকি ডোনর’ করার আগে এবং পরেও। আর সেই আয়ুষ্মান খুরানা এখন ‘ইন্ডিয়াজ বেস্ট সিনেস্টার কী খোঁজ’-এর মেন্টর। সহ-মেন্টর পরিণীতি চোপড়া। মুম্বইতে এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আয়ুষ্মান নিজেই স্বীকার করছেন যে, ২০০৩-এ এই প্রোগ্রামের জন্য অডিশন দিয়ে প্রথম রাউন্ডে রিজেক্টেড হয়েছিলেন। আর আজ তিনি সেই শো-এর প্যানেলে। এখন প্রতিযোগিদের না কি একটাই উপদেশ দিতে চান। নিজের স্যানিটিটা মেন্টেন কোরো। সাফল্যে ভেসে যেও না। ব্যর্থতায় ভেঙে পড়ো না। বিশ্বাস করেন যদি নিজে রিজেকশন ফেস না করতেন তা হলে হয়তো এটা বলতে পারতেন না। বলতে পারতেন না যে যা চাইছে, তা না পেয়েও কী ভাবে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে! কারণ? তিনিই এর জ্বলন্ত উদাহরণ।

Advertisement

‘ভিকি ডোনর’য়ের সাফল্যের পর দু’টো ছবি করলেন। কিন্তু সেগুলো মোটেও ভাল চলেনি...

খুঁটিয়ে দেখতে গেলে দু’টো ছবিই বেশ গড়পড়তা ধাঁচের। নাটকের ওপর বেস করে ‘নৌটঙ্কি শালা’ তৈরি হয়েছিল। রিসেশন নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘বেওকুফিঁয়া’। আর দু’টো ছবি করেই আমি অভিনেতা হিসেবে গ্রো করেছি। তবে এটাও বুঝেছি যে একজন অভিনেতা কোনও দিন তার ছবি থেকে বেশি ভাল হতে পারে না।

Advertisement

একটা দারুণ সফল ছবির পর দু’টো অ্যাভারেজ ছবি হল। এতে কী শিখলেন?

ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবন আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। ‘ভিকি ডোনর’-এর পর এমন একটা স্টেজে পৌঁছে গিয়েছিলাম যখন আমার বাড়ির জন্য সময় ছিল না। আমার স্ত্রী কোনও দিন ভাবেনি আমি অভিনেতা হব। মাসে ৫-টা ইভেন্ট করতাম। আমাদের পক্ষে ওটাই যথেষ্ট ছিল। ২ মাসে একবার বেড়াতে যাওয়া। ‘ভিকি ডোনর’ করে হঠাত্‌ মনে হল আমি যেন পাবলিক প্রপার্টি। অদ্ভুত একটা পরিস্থিতি। সে দিক থেকে দেখতে গেলে জীবনটা এখন অনেক বেশি স্মুদ। পেশাগত ভাবে এই দু’টো ছবি করার পর আমি ঠিক করেছি চিত্রনাট্যর ভিত্তিতেই ছবি করার সিদ্ধান্ত নেব। প্রজেক্ট বা বড় নাম দেখে ছবিটা করব না। দু’টো ক্ষেত্রেই আমার স্ক্রিপ্ট নিয়ে একটু চিন্তা থাকলেও ছবিগুলোর সঙ্গে যুক্ত লোকেদের আমার ভাল লেগেছিল। তবে এটাও বলব যে একজন অভিনেতার পক্ষে ঠিক চিত্রনাট্য বেছে নেওয়াটাও বেশ কঠিন।

কারণ আজকাল মধ্যমেধার চিত্রনাট্য দিয়েও অনেক সুপার-ডুপার হিট ছবি তৈরি হয়। আর সেখানে যদি কেউ অ্যাভারেজ কাজ করে সেটা নিয়ে মাথা ঘামানো হয় না...

কোনও ক্রিকেটার যদি সেঞ্চুরি করার পরেও তার দলকে জেতাতে না পারেন, তখন সেই সেঞ্চুরি নিয়েও তেমন আনন্দ হয় না। অ্যাভারেজ ছবিতে ভাল অভিনয় করার পরেও কি একই রকম মনে হয়?

দারুণ অ্যানালজি। এটা একদম সত্যি। ‘ভিকি ডোনর’-এর পর দু’টো ছবি তেমন ভাল করেনি। দর্শকের আমার কাজ ভাল লাগলেও সত্যিটা হল যে ছবি দু’টো অ্যাভারেজ হয়েছিল। বলিউড এখন অনেকটা গ্রো করেছে। এখন এখানে দু’ধরনের ছবি হয়। হয় ছবিটা ধারালো হতে হবে, না হলে বড় বাজেট থাকতে হবে। বলিউডে কেউ আজকাল শুধু ‘সিম্পল স্মল ফিল্ম’ করে না।

বেশ ইন্টারেস্টিং অ্যানালিসিস তো...

হুঁ। ‘দম লগাকে হইস্যা’ ইজ আ কোয়ায়েন্ট ফিল্ম। হরিদ্বারের প্রেক্ষাপটে তৈরি ছবি। ওটাকে ঠিক বড় ফিল্ম করা সম্ভব নয়। আমার চরিত্রটা খুব সরল। ফিল্মটা দু’টো জটিল চরিত্র নিয়ে। একজন প্রেম প্রকাশ তিওয়ারি। খুব রোগা। যে কুমার শানুর ফ্যান। ওর একটা মোটা মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়। দুই জটিল চরিত্র নিয়ে এমন মজার ফিল্ম বলিউডে হয়নি।

অনেকে বলেন ভাল অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও আপনি পিছিয়ে যাচ্ছেন কারণ আপনি ম্যানিপুলোটিভ নন...

কী করে নিজেকে বিচার করব আমি? তবে এটা ঠিক আমি ম্যানিপুলেটিভ নই। তাতে আমার কোনও আক্ষেপও নেই। বেস্ট অ্যাক্টর হওয়ার থেকে ভাল মানুষ হওয়াটা আমার কাছে বেশি প্রয়োজন। তা ছাড়া ভাল মানুষ হয়েও ভদ্রস্থ উপার্জন করছি তো আমি! এখন ইভেন্ট করলে সিনেমার থেকে অনেক বেশি রোজগার করা যায়। বলতে অসুবিধে নেই আমি অনেক ইভেন্ট করি (হাসি)।

নাসিরুদ্দিন শাহ বলেছিলেন শ্যুটিং করার এক সপ্তাহের মধ্যেই উনি বুঝতে পারেন কোন ছবিটা কেমন হবে। আপনি কি একমত?

আমি কিন্তু শ্যুটিং করার সময় এটা বুঝতে পারিনি। সত্যিটা সামনে আসে প্রথম স্ক্রিনিংয়ে। তখন তো আর কিছু করার থাকে না।

বলিউডে অভিনয় করতে গিয়ে এ সব কী ভাবে হ্যান্ডল করছেন?

কোনও দিন ভাবিনি ‘ভিকি ডোনর’ এত সাফল্য পাবে। জীবন থেকে আমি কখনও সাঙ্ঘাতিক কিছু চাইনি। অল্প বয়সে রিজেকশন ফেস করেছি। অনেক বার সিনেমার জন্য অডিশন দিয়েছি। প্রচুর বার রিজেক্টেডও হয়েছি। স্কুলে আন্ডারডগ ছিলাম। ব্রেসেস পরতাম। চশমা ছিল। স্বপ্ন দেখলাম স্কুলে নাটকে মুখ্য চরিত্র করব। কিন্তু আমাকে মুখ্য চরিত্রের ভাইয়ের রোল দেওয়া হয়েছিল। স্কুলে সব সময় শুনতাম যে আমি খুব রোগা আর বেঁটে।

আন্ডারডগ হলে কম্পিটিটরের ভয় থাকে না। কিন্তু ‘ভিকি ডোনর’-এর সাফল্য তো অনেক কিছু পাল্টে দিয়েছিল। স্টারকিডদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ছিল?

স্টারকিডের সঙ্গে আমার কোনও প্রতিযোগিতা ছিল না। আমার একটা ইউনিক জায়গা রয়েছে। আমাকে লোকে গায়ক-অভিনেতা হিসেবে চেনে। ও-ই স্পেসে কম্পিটিশন নেই। এক দিকে অভিনয় করেছি। অন্য দিকে ‘পানি দা’ও গেয়েছি।

অনেক ক্ষেত্রে সিঙ্গার-কম্পোজার হলে সেটা তাদের লিমিটেশন হয়ে যায়। আপনার ক্ষেত্রে ওই দু’টো বিষয়েই পারদর্শী হওয়ার জন্য কোনও অসুবিধে হয়েছে?

গান গাওয়ার জন্য আমি ডেসপারেট নই। আমি তখনই গান গাইব যখন আমার চরিত্রের সেটা প্রয়োজন হবে। ‘দম লাগা কে হইসা’তে আমি গাইছি না। ‘হাওয়াইজাদে’তে দু’টো গান গাইছি। কারণ আমি জানি দর্শক ওই চরিত্রটা দেখলে গান আশা করবেন।

অভিনয় করার সঙ্গে সঙ্গে রেওয়াজের জন্য কতটা সময় পান আপনি?

আমি রেওয়াজ করি। রোজ আধ ঘণ্টা। ছোটবেলায় তো শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিয়েছি। কিন্তু একটা সময় ঠিক করলাম থিয়েটার করব। তখন গান চলে গেল ব্যাকসিটে। স্ট্রিট থিয়েটারের জন্য অবশ্য গান বাঁধতাম।

আজকাল নতুন প্লেব্যাক সিঙ্গারদের নাম দর্শক জানেন না। তবে গানগুলো হিট। এ রকম একটা অবস্থায় প্লেব্যাক সিঙ্গারদের কী ভবিষ্যত দেখছেন?

আমার এই সমস্যা হয় না। কারণ অ্যাম আ সিঙ্গার উইথ আ ফেস। কেউ যদি পারফর্মার হন, তা হলে লাইভ শো-এর দর্শকরা তাঁদের চেনেন। শুধু প্লেব্যাক সিঙ্গার হলে হয়তো তা হবে না।

পেশাদার গায়কদের থেকে আপনার লাইভ শো-গুলো কতটা আলাদা?

গত বছর টেক্সাসে গিয়েছিলাম। এক ঘণ্টা স্টেজে ছিলাম। ৪০ মিনিট পারফর্ম করেছিলাম। আর ২০ মিনিট শুধু ক্রাউডের সঙ্গে ইন্ট্যার্যাকশন। পেশাদার সিঙ্গারদের গান গাওয়া নিয়ে টেনশন থাকে না। ওরা চিন্তা করে কী করে ইন্ট্যার্যাক্ট করবে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো। আমি জানি এক ঘণ্টাও যদি স্টেজে থাকি, আমি মাতিয়ে রাখতে পারব। কিন্তু সেখানে যদি দু’টো গান আমাকে গাইতে হয় আমাকে, সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হয়।

এখন তো গানে সুর-ও দিচ্ছেন। সেটার অভিজ্ঞতা কী রকম?

আমার পরের ছবির নাম ‘হাওয়াইজাদে’। ছবিটা শিভকর তলপাড়ের উপর। উনি বিশ্বের প্রথম আনম্যানড এয়ারক্র্যাফ্ট তৈরি করেছিলেন। বলা হয় রাইট ভাইদের আগেই উনি হাওয়াই জাহাজ বানিয়েছিলেন। কিন্তু গুগল করলে ওঁর সম্পর্কে মাত্র একশো শব্দ পাবেন। ছবিটা ওঁর জীবন-অনুপ্রাণিত। অনেকটা ফিকশনালাইজ করা হয়েছে। ছবিতে শিভকর একজন চার্মার। ওঁকে কোনও বোরিং বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতে পারবেন না। ও গান গায়। নাচ করে। এই ছবিতে আমি গান কম্পোজ করেছি। সুর দিয়েছি। এই ছবিতে মির্জা গালিবের ‘দিল-এ-নাদান’ গজলটার একদম অন্য রকমের ভার্সান করেছি। এতদিন শুধুমাত্র পিউরিস্টরা এই গানটা শুনতেন। আমি এমন ভাবে এটাকে তৈরি করেছি যে সবার ভাল লাগে।

কোনও দিন নিজে কম্পোজার হলে কার জন্য সুর করবেন আপনি?

‘ককটেল’ ছবিতে মোহন ‘ইয়ারিঁয়া’ বলে একটা গান গেয়েছিল। ও একদম আন্ডাররেটেড। মোহনকে দিয়ে গান গাওয়াবো। পাপন আর মোহনের ভয়েসও খুব ইউনিক।

অরিজিত্‌ সিংহ যে ভাবে জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছেন, সে তুলনায় কিন্তু মোহন বা পাপন জনপ্রিয়তা পাননি...

সব কিছুই সময় আর সুযোগের ব্যাপার। ‘আশিকী ২’ এত হিউজ অ্যালবাম আর ‘তুম হি হো’র মেলোডিটা কী দারুণ! ওই একটা গান অরিজিত্‌কে সুপারস্টার করে দিল।

কিন্তু এটাও তো ঠিক যে যত জন জানেন অরিজিত্‌ সিংহের সম্পর্কে, তার সিকিভাগ লোকও জানেন না ‘তুম হি হো’র সুরকার হলেন মিঠুন...

ঠিক। আসলে এটা একটা র্যান্ডম দুনিয়া। আমাদের দেশের টপ টেন সুপারস্টার হয়তো দেশের টপ টেন অভিনেতা নন। হয়তো দেখলেন দেশের সবথেকে ভাল অভিনেতা কোনও একটা গ্রামে থিয়েটার করে বেরোচ্ছেন। তবে এ সব জেনেও এগিয়ে যেতে হবে। কারণ এটাই জীবন।

ছবি: আর বর্মন।

স্টাইলিং: মানসী নাথ ও রুশি শর্মা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement