রাগের মাথায় টেক্সট নয়

ছোট ছোট শব্দে নয়, গোটা বাক্যে মেসেজ লিখুন। কী বলতে চাইছেন, তা সরাসরি জানান। পরামর্শ দিলেন ঋতা ভিমানীস্মার্টফোনের যুগে এসএমএস-এর মতো এত সহজ যোগাযোগের মাধ্যম কিছু হতেই পারে না। তবে টেক্সটিং ব্যাপারটা বন্ধুদের মধ্যে যতটা সহজে হতে পারে, ব্যবসার ক্ষেত্রে বা অফিসে তার প্রযোগ যদি যথাযথ না হয়, তা হলে কিন্তু ব্যুমেরাংয়ের মতো হয়ে উঠতে পারে ব্যাপারটা। কাউকে এসএমএস পাঠানোর মানেই কিন্তু তার ব্যক্তিগত সময় আর গোপনীয়তায় কিছুটা হস্তক্ষেপ করা। একটা মেসেজ আপনার ফোনে আসা মাত্রই একটা বিশেষ টোন বা ভাইব্রেশন জানিয়ে দেয় আপনার ইনবক্সে মেসেজ ঢুকল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৪ ০০:৪৪
Share:

স্মার্টফোনের যুগে এসএমএস-এর মতো এত সহজ যোগাযোগের মাধ্যম কিছু হতেই পারে না। তবে টেক্সটিং ব্যাপারটা বন্ধুদের মধ্যে যতটা সহজে হতে পারে, ব্যবসার ক্ষেত্রে বা অফিসে তার প্রযোগ যদি যথাযথ না হয়, তা হলে কিন্তু ব্যুমেরাংয়ের মতো হয়ে উঠতে পারে ব্যাপারটা।

Advertisement

কাউকে এসএমএস পাঠানোর মানেই কিন্তু তার ব্যক্তিগত সময় আর গোপনীয়তায় কিছুটা হস্তক্ষেপ করা। একটা মেসেজ আপনার ফোনে আসা মাত্রই একটা বিশেষ টোন বা ভাইব্রেশন জানিয়ে দেয় আপনার ইনবক্সে মেসেজ ঢুকল। কাজেই ব্যাপারটা যদি ততটাও গুরুত্বপূর্ণ না হয়, তা হলে এসএমএস করার বদলে একটা মেল পাঠিয়ে সিনিয়র কোনও একজন মানুষের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়ে নিতে পারেন।

যদি এসএমএস-এর মাধ্যমেই অফিসের কোনও এক সিনিয়র বা বসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, সে ক্ষেত্রে তাঁদের সুবিধেজনক সময় চেয়ে নিন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চেয়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিন্তু সিনিয়ররাই কল ব্যাক করে নেন। অনেক ক্ষেত্রেই আমি এ রকম হতে দেখেছি। তবে মেসেজের জবানীটা পরিষ্কার হওয়া দরকার। আপনাকে জানাতে হবে কোন বিশেষ বিষয়ে আপনি কথা বলতে চাইছেন। আর অবশ্যই মেসেজের শেষে নিজের নামটা লিখে দেবেন। সিনিয়র ব্যক্তিটির কাছে আপনার নম্বর সেভ থাকবেই— এমন কোনও কথা নেই। আর হ্যাঁ, মেসেজের বয়ান কখনওই সংক্ষেপে লিখবেন না। ফর্ম্যালিটি মেন্টেন করুন। বা লিখতে পারেন: ‘আপনার সঙ্গে একটা দরকারি বিষয়ে কথা বলার ছিল। কখন কথা বলতে পারি?’

Advertisement

ছোট ছোট শব্দে এসএমএস করার বদলে গোটা বাক্যে লেখা এসএমএস পড়তেও যেমন ভাল লাগে, তেমন ডিগনিফায়েডও ব্যাপারটা। মাথায় রাখবেন বন্ধুবান্ধব আর ব্যবসার ক্ষেত্রটা কিন্তু আলাদা। অফিস রোম্যান্স তো প্রায়শই ঘটে। ভাববেন না ওয়ানফোরথ্রি, সংক্ষেপে (আই লভ ইউ) লিখে পার পেয়ে যাবেন। এই ধরনের মেসেজ খুব সহজেই নজরবন্দি করা যায়। কাজেই আপনি যে কোনও মুহূর্তে দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন। বসের সঙ্গে অতিরিক্ত হৃদ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করলেও হিতে বিপরীত হতে পারে।

সম-পর্যায়ের এবং সমমনস্ক না হলে যদি কাউকে অতিরিক্ত হৃদ্যতা দেখিয়ে এসএমএস পাঠাতে যান, তা হলে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে যাবে। এসএমএস-এ কী বলতে চাইছেন, সেটাই সরাসরি লিখে দিন। আর যদি অতিরিক্ত কিছু বলার থাকে, তা হলে মেল পাঠানোটাই ভাল হবে।

একই গাড়িতে অনেকের সঙ্গে যাওয়ার সময় বা দরকারি কোনও মিটিং চলাকালীন আপনি টেক্সট করবেন না। এতে প্রমাণ হয় আপনি হয়তো ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না। কাজেই এ রকম সময় টেক্সট করাটা একটু অভদ্রতার ব্যাপার। মিটিংটা শেষ হওয়া পর্যন্ত তাই অপেক্ষা করুন।

কিছু লোক আছেন যাঁরা একটা লেকচার চলার সময়ও বিরামহীন ভাবে টেক্সট করে যান। বিশেষ করে সামনের সারিতে বসলে তো যিনি লেকচার দিচ্ছেন, তাঁর পক্ষে সেটা একটা বিরক্তিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এঁদের পাশে যারা বসেন, ব্যাপারটা তাঁদের পক্ষেও এক চূড়ান্ত বিরক্তিকর ব্যাপার। এ রকম হলে লেকচারে যাওয়ারই দরকার নেই। এমনও অনেকে আছেন যাঁরা ভাবেন যেহেতু তাঁরা সম্মান বা প্রতিপত্তির দিক থেকে অনেক উঁচুতে, তাঁরা কিছুর তোয়াক্কা না করেই টেক্সট করে যেতে পারেন। আমারও এ রকম একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল। একবার এক মিটিংয়ে ডিসকোর্স দেওয়ার পর এক সিনিয়র সাংবাদিক আমার অতিথি হয়ে লাঞ্চে এসেছিলেন। উনি আমার উল্টোদিকে বসেই টেক্সট করতে শুরু করে দিলেন। আমি ওঁর খাবার সময় সঙ্গ দিচ্ছি ওঁকে— ওঁর তাতে কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। উনি সমানে ফোন ব্যবহার করেই গেলেন। একবার ক্ষমা চেয়ে বললেনও না যে অফিসে কাজের চাপেই এমনটা করতে বাধ্য হচ্ছিলেন। কী অভদ্র ব্যবহার!

আর একটা কথা। রাগের মাথায় কখনওই টেক্সট করবেন না। প্রথমে রাগ কমান। তার পর মেসেজ পাঠান। ধরুন আপনি খুব রেগেমেগে ইস্তফা দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে সব চেয়ে সহজ কাজটা হল কিছু খারাপ কথা লিখে একটা এসএমএস পাঠিয়ে দেওয়া। কখনওই এ রকম করবেন না। যদি কোনও কারণে আপনার সংস্থার চাকরি ছেড়ে বেরোতে চান বা আপনার উর্ধ্বতনের সঙ্গে কোনও মতবিরোধ হয়ে থাকে, সেটা টেক্সট করে জানিয়ে বলুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে চান। তাতেও যদি তাঁরা সাড়া না দেন, তা হলে অপেক্ষা করে দেখুন। অনেক সময়ই সাড়া না দেওয়ার মানে কিন্তু এটাও যে হয়তো তাঁরা মেসেজটা দেখেনইনি, বা ব্যস্ত আছেন। আপনি যদি তা সত্ত্বেও মেসেজ বা ফোন করেই যান, তা হলে ব্যাপারটা খুব বোকা-বোকা দেখাবে। আপনার মনে হতে পারে আপনার সিনিয়র উত্তর দিচ্ছেন না কেন। কিন্তু আপনার ভাবনাটাই যে ভুল। সত্যি তো এটাই যে হয় তিনি আপনার মেসেজটা দেখছেন। ফোন তখনই করবেন, যখন আপনার সম্পর্ক ততটাই ভাল হবে আপনার সিনিয়র মানুষটির সঙ্গে।

মেসেজে যা লিখছেন, তার টোনটা যেন ঠিকঠাক হয়। মেসেজ পাঠানোর আগে ভাল করে চেক করে নিতে ভুলবেন না। বানান ভুল থাকতে পারে বা অনেক সময় ‘ডিকশনারি’ অপশনটা ব্যবহার করলে ভুল শব্দ বেরিয়ে আসে। একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরুন আপনি না দেখে টাইপ করলেন ‘স্ক্রিপ্ট’ শব্দটা। আপনি জানেন ঠিকই আছে। অথচ ‘ডিকশনারি’ ওই শব্দটাকে দেখাল ‘রেপিস্ট’। আপনি এত না দেখেই যাঁকে মেসেজ পাঠালেন, তিনি হয়তো দেখলেন মেসেজে লেখা রয়েছে: ‘আই অ্যাম সেন্ডিং ইউ মাই রেপিস্ট’! ভাবুন একবার...

কাজেই এসএমএস পাঠানোর সময় ভাবনাচিন্তা করুন, বিনয়ী হোন। এবং অবশ্যই রসবোধ বজায় রাখার চেষ্টা করবেন। টেক্সট মেসেজের উত্তর দিতে ভুলবেন না। আর একটা বিষয় সব সময় মাথায় রাখবেন। এসএমএস কথা না বলে দ্রুত সংযোগ ঘটানোর খুব শক্তিশালী এক মাধ্যম। তাই অফিস স্পেসে খুব সাবধানে, সন্তর্পণে এসএমএস করুন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement