চারদিকে নানা রকমের থিম পুজো হচ্ছে। আপনার এ পুজোর থিমটা কি মিলনোত্সব?
সব্বার সঙ্গে মেলবন্ধন হলেই তো ভাল। সম্প্রীতি থাকবে। তবে আলাদা করে হঠাত্ মিলনোত্সব বলছেন কেন?
তৃতীয়ার দিন মঞ্চে প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়-এর সঙ্গে অনুষ্ঠান করলেন। ওটাও তো এক অর্থে মিলনোত্সব বলা যায়...
উফ্! আপনারা এত দুষ্টু। দুষ্টুমির তালগাছ যাকে বলে। এটা ঘটনাচক্রেই হয়েছে। সুচিত্রা সেনের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্যজ্ঞাপনের অনুষ্ঠান ছিল। সে জন্যই একসঙ্গে পারফর্ম করলাম।
এ বছর তো অনেক শিল্পী মহানায়িকাকে শ্রদ্ধার্ঘ্যজ্ঞাপন করেছেন নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। কিন্তু মঞ্চে এ রকম রসায়ন তো দেখা যায়নি। সুপারস্টার জুটির প্রত্যাবর্তনেই কি এই রসায়ন তৈরি হল?
(হাসি) এর আগেও কিন্তু মহানায়িকাকে নিয়ে আমি একটা অনুষ্ঠান করেছিলাম। শিবু (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) করেছিল। দারুণ সাড়া পেয়েছিল। তখন মহানায়িকা জীবিত। ঋতুদা (ঋতুপর্ণ ঘোষ) ছিলেন। এ বার আমার কাছে যখন এই অনুষ্ঠানটা করার আমন্ত্রণ এল, তখন ভাবলাম যে এই ইন্ডাস্ট্রিতে মহানায়িকার উত্তরসূরি হিসেবে আমার এটা করা উচিত। এটাও তো এক রকমের মিলন। মহান একটা ‘কজ’...
মহান ‘কজ’ তো নিশ্চয়ই। ব্যক্তিগত ভাবে প্রসেনজিতের সঙ্গে মঞ্চে এই পুনর্মিলন আপনার কেমন লাগল? কাঁধে মাথা রাখলেন, প্রসেনজিতের গালে ছুঁয়ে গেল আপনার ঠোঁট, লজ্জায় একবার লালও হয়ে গেলেন আপনি...
(হাসি) উফ্! আমি একজন সহজাত অভিনেত্রী। স্টেজে যখন থাকি, সে দু’মিনিট হোক আর এক ঘণ্টা সম্পূর্ণ অনুভূতি দিয়েই কাজ করি। সে রাতে দেখলাম দর্শক আজও আমাদের জুটিকে পছন্দ করে। ওরা পাগল হয়ে গিয়েছিল। ওদের চোখে দেখলাম রোমাঞ্চ।
আশ্চর্য হলেন তা দেখে?
না, না, এটা হওয়াই তো স্বাভাবিক ছিল।
অনুষ্ঠানের শেষে প্রসেনজিত্ কী বললেন আপনাকে?
ধন্যবাদ জানিয়েছে। আরও বলেছে: ‘দ্য হোল অব কলকাতা ইজ সেলিব্রেটিং সিইং আস অন স্টেজ’। গোটা কলকাতা নাকি মঞ্চে আমাদের একসঙ্গে দেখে উত্সবে মেতেছে।
তৃতীয়াতেই তা হলে আপনারা গোটা কলকাতাকে উত্সবের মেজাজে রাঙিয়ে দিলেন? টলিউডে কিন্তু আপনাদের পরে সেভাবে কোনও জুটি টেকেনি...
হ্যাঁ, এটা ঠিক। তবে এই জুটিটা তৈরি করতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। জানতাম যে, আমাদের একসঙ্গে দেখার চাহিদা রয়েছে দর্শকের মধ্যে। সে রাতে ওই চাহিদাটা আবারও অনুভব করলাম।
শুধু অনুভব করেই থেমে থাকবেন? নাকি পর্দায় পুনর্মিলন হবে এ বার?
জানি না। চোদ্দো বছর আগে সুপারহিট ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ করেছিলাম। শিবুর দারুণ একটা আইডিয়া ছিল আমাদের দু’জনকে নিয়ে। শিবু যদি ওই প্রোজেক্টটা নিয়ে চিন্তা করে আর ওই মাত্রায় হয়, তা হলে আমি ওটা নিয়ে মন দিয়ে ভাবব।
দু’বছর আগে আনন্দবাজার পত্রিকার পুজোর ফোটোশ্যুটে আপনি আর সৃজিত মুখোপাধ্যায় আলোচনা করেছিলেন এই নিয়ে যে, স্থিরচিত্র তো হল কিন্তু ছায়াছবি হবে কবে?
হ্যাঁ, মনে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত সৃজিতের সঙ্গে ছায়াছবি হচ্ছে। ওর কাজ আমার ভাল লাগে। বরাবর ওর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ওর প্রত্যেকটা ছবির প্রিমিয়ারে আমাকে আমন্ত্রণ করে ও।
তা হলে কি এই দেবীপক্ষে আপনার ধনুকভাঙা পণটা বাতিল করে ফেললেন?
কোনটা বলুন তো?
এই যে অমুক প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করবেন না, তমুক পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করবেন?
আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে ভাল কাজ করার জন্য সব সময় রাজি। কারও প্রতি কোনও তিক্ততা নেই। আবার এমনটাও নয় যে, কোনও প্রযোজক আমাকে বলে দিতে পারবে কার সঙ্গে কাজ করব, কার সঙ্গে করব না। আমি সবার সঙ্গে কাজ করতে রাজি। এত দিন যে নতুন নতুন পরিচালক আর প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করে এসেছি, তাঁদের সঙ্গও ছাড়ব না। আবার সৃজিত-মৈনাকদের সঙ্গেও কাজ করব।
তার মানে মিলনে আছেন, ক্যাম্পে নেই?
হ্যাঁ, একদম তাই।
মঞ্চে সে দিন প্রসেনজিতের সঙ্গে ‘হারানো সুর’য়ের ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ গানটার সঙ্গে নাচলেন। অনুষ্ঠানের পর আপনাদের রসায়ন দেখে দর্শক কি এ বার গাইবে ‘এই পথ চলা যদি আবার শুরু হয়, তবে কেমন হত...’?
(হাসি) উফফফফ্! এই সব প্রশ্ন শুধু আমাকেই করে যাবেন?
ছবি: সোমনাথ রায়; মেক আপ ও হেয়ারস্টাইল: কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়; স্টাইলিং: রজত চক্রবর্তী;
পোশাক: অগ্নিমিত্রা পল; পরিকল্পনা: প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত; রূপায়ণ ও বিন্যাস: কৌশিক সরকার ও অরিজিত্ চক্রবর্তী।